চবি’তে পৃথক ঘটনায় দুই তদন্ত কমিটি গঠন
২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১৮ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় ও ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক ঘটনায় দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে এই তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান। উভয় কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রক্টর মনিরুল জানান, ‘সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের একটি আবাসিক হলের কক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, ছাত্রলীগের চার গ্রুপের মারধর এবং অবরোধের ঘটনায় চার সদস্য বিশিষ্ট আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।‘
বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিঁড়ে ফেলার তদন্ত কমিটিতে সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ ইয়াকুবকে প্রধান এবং সেই সঙ্গে সহকারী প্রক্টর মরিয়ম লিজা ও প্রীতিলতা হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক ড. শ্রীকান্ত চৌধুরীকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের চার গ্রুপের সংঘর্ষ ও অবরোধের ঘটনার তদন্ত কমিটিতে সহকারী প্রক্টর আহসানুল কবীর, জিয়াউল ইসলাম, মোহাম্মদ ইয়াকুব এবং রিফাত রহমানকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গেল বুধবার (২২ জানুয়ারি) থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কেন্দ্রীয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বিকেল ৪টার দিকে ৪০০ মিটার দৌড়ের ট্র্যাকে দাঁড়ানো নিয়ে কথা কাটাকাটির পর বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা আজাদ নামে এক ছাত্রকে মারধর করে। আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) গ্রুপের কর্মী।
এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা শুরু হয়। পরে সিএফসি নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলে বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের মারধর করেন। এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সিএফসি আমানত হলে ও বিজয় গ্রুপ সোহরাওয়ার্দী হলে অবস্থান নেয়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতির বহিষ্কার ও হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে গত রাত ৯টার দিকে বিজয় গ্রুপের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো: ইলিয়াস বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের ডাক দেন।
বিবাদমান সিএফসি ও বিজয় দুটি গ্রুপই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহ আমানত হল ও সোহরাওয়ার্দী হল থেকে ছাত্রলীগের দু্ই গ্রুপের সংঘর্ষের পর দুটি হল থেকে সন্দেহজনক হিসেবে অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ। এদের মধ্যে চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ১২ জন ও বিজয় গ্রুপের ৮ নেতাকর্মী রয়েছেন।
এরপর বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা অবরোধ প্রশাসনের আশ্বাসে সাময়িকভাবে শিথিল করা হয়। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর পাঁচ দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা। রোববার (২৬ জানুয়ারি) পাঁচ দফা দাবির মধ্যে তিন দফা দাবি পূরণের কথা জানিয়ে অবরোধ ফের শিথিল করেছে।
অন্যদিকে, সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বগিভিত্তিক গ্রুপ সিক্সটি নাইনের কর্মীরা রেড সিগন্যাল-এর (আরএস) এক কর্মীকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ক্যাফেটেরিয়ায় মারধর করে। পরে তাকে আহত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আহত কর্মীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপরে রেড সিগন্যালের কর্মীরা শহরমুখী দুপুর আড়াইটার শাটল ট্রেন ফতেয়াবাদ পৌঁছালে সেখানে ট্রেনের হোস পাইপ কেটে দেন। এই মারধরের জেরে ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের ডাক দেন রেড সিগন্যালের নেতাকর্মীরা। তারপরে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ছাত্রলীগের একাংশের অবরোধ শিথিল করেছে।
বিবাদমান দুটি গ্রুপ সিক্সটি নাইন ও রেড সিগন্যাল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারি হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
প্রক্টর বলেন, ‘উভয় কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তারপরে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘
২ তদন্ত কমিটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চার গ্রুপের সংঘর্ষ ছাত্রলীগ