Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হিউম্যান হলার-বাসে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম


১২ জুন ২০১৯ ১৪:৩৬ | আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ১৯:০০

ঢাকা: এ বছরের মার্চ মাসেও বইখাতা হাতে স্কুলে গিয়েছেন ১২ বছর বয়সী ইউসুফ। এপ্রিলের শেষ দিকে বাবা মারা যাওয়ায় স্কুল ছাড়তে হয়েছে তাকে। এরপর জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন মহাখালী রুটের হিউম্যান হলারে হেলপারের কাজ। এখন প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হিউম্যান হলারের যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তোলে ইউসুফ।

কেবল ইউসুফই নয়, রাজধানীর ২০টি রুটে তার মতো দুই হাজার শিশু হিউম্যান হলারের হেলপার হিসেবে কর্মরত। তাদের বেশিরভাগই দরিদ্রতার কারণে স্বল্পবেতনে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় শিশু শ্রমিকদের কেউ কেউ আহত হচ্ছে। কেউ কেউ মারা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

হিউম্যান হলার ছাড়া বাস-মিনিবাসের মতো গণপরিবহনে অসংখ্য শিশু হেলপার ও টিকিট কালেক্টর হিসেবে কাজ করছে।

জানা গেছে, ঢাকায় ২৫টিরও বেশি রুটে দুই হাজারের বেশি হিউম্যান হলার চলাচল করে। এর মধ্যে ফার্মগেট থেকে মোহাম্মদপুর, জিগাতলা ও কৃষি মার্কেট এই তিন রুটে প্রায় ১৫০টি হিউম্যান হলার চলে। গাবতলী-মহাখালী রুটে ১০০টি, মিরপুর-মহাখালী রুটে ১০০, মোহাম্মদপুর থেকে গুলশান হয়ে বাড্ডা পর্যন্ত ১২০টি ও ৬০ ফিট থেকে ফার্মগেট-মহাখালী রুটে ১৫০টিরও বেশি হিউম্যান হলার চলে। এছাড়া নীলক্ষেত থেকে ফার্মগেট, গোড়ান থেকে গুলিস্তান, মিরপুর ১ নম্বর থেকে জিগাতলা, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ, গুলিস্তান থেকে লালবাগসহ আরও কয়েকটি রুটে হিউম্যান হলার চলাচল করে।

এ সব হিউম্যান হলারে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে শিশু শ্রমিকরা কাজ করে। দারিদ্রতার কারণে শৈশব থেকেই অমানবিক পরিশ্রম করছে বলে তাদের শারীরিক বিকাশ হচ্ছে না। পাশাপাশি তাদের মানসিক বিকাশও হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

হিউম্যান হলারে শিশু শ্রমের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন খান বলেন, ‘কম পারিশ্রমিক দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিবহন খাতে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরিবারে অভাব-অনটনসহ বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যার কারণে শিশুরা স্বল্প মজুরিতে এ পেশায় যুক্ত হয়। এখানে কাজ করতে গিয়ে বেশিরভাগ শিশুরাই বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয় এবং এটি নিয়ে তারা প্রতিবাদ করে না। ফলে এ শিশুরা বড় হয়ে অন্যদের প্রতি অসহনশীল আচরণ করা শুরু করে। তাদের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটানোর প্রবণতা বাড়ে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক আরও বলেন, ‘পরিবহনখাতে কতজন শিশু কাজ করছেন সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা কারো নেই। ফলে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হলে আগে এদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে হবে। এ জন্য সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও জানায়, বাংলাদেশের শিশু শ্রমিকরা প্রায় ৩৪৭ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৪৮ ধরনের কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৩ ধরনের কাজকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কাজে ৭৪ লাখের বেশি শিশু যুক্ত রয়েছে। যেখানে ছেলে শিশুর সংখ্যা ৫৪ লাখ এবং মেয়ে শিশুর সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারও এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৩৮ ধরনের কাজকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে।

ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমে নিয়োজিত প্রায় ১৩ লাখ শিশুকে সপ্তাহে প্রায় ৯০ ঘণ্টা সময় কাজ করতে হচ্ছে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকদের গড় বয়স ১৪.০৭ বছর। এসব ঝঁকিপূর্ণ কাজগুলো হচ্ছে ওয়েল্ডিং, ট্যানারি, পরিবহন (মিনিবাস ও টেম্পো হেলপার) ও বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক ফ্যাক্টরির কাজ।

সর্বাধিক সংখ্যক (৪৪.১৭ শতাংশ) শিশুশ্রমিকের বয়স ১৪-১৬ বছরের মধ্যে। সবচেয়ে কমসংখ্যক (৫ শতাংশ) শিশুশ্রমিকের বয়স ৮-১০ বছরের মধ্যে। অপর দিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগই (৭১.৬৭ শতাংশ) গ্রাম বা অন্য শহর থেকে ঢাকায় এসেছে।

বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন নং-১৮২ অনুসমর্থন করেছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম, সব ধরনের বলপূর্বক শ্রম, যৌন নিপীড়ন ও শোষণ, বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি, বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ে কাজ করা, দীর্ঘ সময় ও রাত্রিকালীন কাজ, আলো-বাতাসহীন বদ্ধ পরিবেশে কাজ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আইএলও কনভেশন অনুসারে প্রতিটি দেশের সরকার সে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিয়োগদাতা ও শ্রমিক-সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কোন কোন খাত, পেশা, কাজ এবং পরিবেশ ১৮ বছরের নিচে শিশুদের জন্য নিষিদ্ধ হবে তা নির্ধারণ করবে। তবে বাংলাদেশে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের তালিকা প্রকাশিত হয়নি।

সারাবাংলা/টিএস/একে

শিশুশ্রম হিউম্যান হলার

বিজ্ঞাপন

কিশোর অপরাধ, আমাদের করণীয়
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০১

আরো

সম্পর্কিত খবর