কিযী তাহনিন-এর গল্প ‘মধুর রব’
১৩ জুন ২০১৮ ১২:১৮
কিযী তাহনিন ।।
“হায়রে, আমি তো একটি জটিল সমস্যায় পড়েছি। বোঝাবুঝির সমস্যা- আমি কি বলি, লোকে বোঝেনা। লোকে কি বলে আমি বুঝিনা।” এমনটাই ভাবছে এই মুহূর্তে আবদুর রব। মানুষের নামের একাধিক অংশ থাকে, সাধারণত। একটি শুরুর নাম, শেষে একটি নাম। কারো কারো মাঝের একটি নামও থাকে। মানুষ সাধারণত প্রথম বা শেষ নামটি ধরে পরিচিত হয়। কিংবা একটি ডাক নাম থাকে। এই যেমন আবদুর রব। তাকে মানুষ হয় আবদুর কিংবা রব বলে ডাকতে পারতো। কিন্তু আবদুর রবকে সবাই শুরু এবং শেষ নাম মিলিয়ে চেনে, ডাকে। আবদুর রব। ছোটবেলায় তাকে যখন প্রশ্ন করা হতো, “তোমার নাম কি?” সে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বলতো, “আবদুর রব।” শিশুমুখে আধোআধো সেই নামটি শুনতে এতো ভালো লাগতো যে, সেই থেকে আশেপাশের সবাই তাকে পুরোনাম ধরেই চেনে, ডাকে।
আবদুর রব, ইদানিং একটি বিশেষ সমস্যায় পড়েছে। সমস্যা আগেও হতো, ইদানিং বিশেষভাবে বেশি করে হচ্ছে। তা হলো, মানুষজন বোধহয় তার কথা বেশি বুঝতে পারেনা। বিশেষ করে বাড়ির মানুষজন। তার কথা বলতে সমস্যা, তোতলামি জড়তা এমন কিছুই নেই। ভাবের আদান প্রদানে সমস্যা। আবার সেও মানুষের কথা ঠিকঠাক বুঝতে পারছেনা।
আবদুর রবের জন্ম বড় হওয়া ঢাকায়। আদিবাড়ি নোয়াখালী। ছোটবেলায় মায়ের সাথে দু’তিনবার গ্রামের বাড়ি গেছে। মায়ের কাছে, মুখে মুখে শুনে শুনে কিছু নোয়াখালীর ভাষা মুখে বলে আসে মাঝে সাঝে। না হলে সে ঢাকার চলতি ভাষায় দিব্বি কথাও বলতে পারে। মা তার জন্মের আগে থেকে এ বাড়িতে কাজ করতো। সে জন্মালো। সেও কাজ করছে। গত দু প্রজন্মের বাসিন্দাদের সাথে আবদুর রব আর তার মা এ বাড়িতেই বাস করছিলো। মা মারা যাওয়ার পর সে আছে এখনো। এই বিশাল পরিবারের সে একজন অংশ। ভালো, কম ভালো সব মিলিয়ে মিশিয়ে যেমন পরিবারের সাথে বাস করতে হয়, আবদুর রবও তেমন করে বাস করে এ পরিবারে।
আবদুর রবের বয়স ৩৪ এর একটু বেশি। বিয়ে থা করেনি। তবে এ বাড়ির যিনি কত্রী, যাকে আবদুর রব ছোটবেলা থেকে খালাম্মা বলে ডাকে, তিনি বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছেন। উপযুক্ত পাত্রী পেলেই আবদুর রবে’র বিয়ে হবে। এ বাড়িতে থাকতে থাকতেই খানিকটা লেখাপড়া শিখেছে সে। পত্রিকা পড়তে পারে। বাংলা লিখতে পারে। যুক্তাক্ষরে একটু সমস্যা আছে যদিও। ইংরেজিতে টুকিটাকি। যদিও ইংরেজিতে অভ্যাস নাই, তাই প্রায়ই ভুলে যায় কেমন করে লিখতে হয় বানানগুলো। বাজার থেকে শুরু করে, রান্নার কাজে খালাম্মাকে সাহায্য, আর বাড়ির সকল থালা-বাসন ধোওয়া, ভারী কাজ করতে সে পটু। আর যখন যার দরকার পরে, আবদুর রব সেখানে হাজির থাকে। খালাম্মা-খালু আর তাদের পাঁচ সন্তান। বড় দু’ছেলে বিবাহিত। সবাই পরিবার নিয়ে একই ছাদের তলায়। পুরোনো আমলের বাড়িতে, যৌথ পরিবারে, মিলেমিশে। তাই, আরো দুজন কাজের সহকারী থাকলেও, আবদুর রবের কাজের শেষ নেই। কারণ সে সবচেয়ে পুরোনো, এবং বিস্বস্ত।
সমস্যা হলো, ইদানিং আবদুর রবের সাথে অন্যদের যোগাযোগের সমস্যায়। এই যেমন, খালাম্মা সেদিন ছুটির দিনে ৫০০ টাকা দিয়ে বললেন, “বাজারে যা, ২০০ টাকার ফ্লেক্সি করাবি আমার ফোনে, বাকি টাকা থেকে পুদিনা পাতা কিনে আনবি। বোরহানি বানাবো।”
আবদুর রব ২০০ টাকার ফ্লেক্সি করালো। এবং পুদিনা পাতা কিনে বাড়ি ফিরলো। পথে অবশ্য করিমের দোকানে মিনিট পাঁচেক আড্ডা দিয়েছে, ‘সাত্তার কেমন করে বিদেশ যেয়ে টাকা কামাচ্ছে’, সে বিষিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। বাসায় ফিরে রান্নাঘরে পুদিনা পাতার পোটলা রেখে এসে খালাম্মাকে জানালো। খালাম্মা বারান্দায় বসে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। বললেন, “বাকি টাকা যা বেঁচেছে, তোর বড় ভাইয়াকে দিয়ে আয়। ওর নাকি ভাংতি টাকা লাগবে।”
আবদুর রব তো ভীষণ অবাক। টাকা সে পাবে কোথায়। খালাম্মা তাকে বলেছে বাকি টাকা দিয়ে পুদিনা পাতা কিনতে। সে ৩০০ টাকার পুদিনা পাতা কিনে এনেছে।
খালাম্মাকে দেখে মনে হচ্ছে, এই কথা শুনে তার প্রেসার হাই হয়ে যাচ্ছে। কপালের পাশের দুটি রগ দপদপ করছে। খানিকটা ঘাম জমেছে কপাল জুড়ে। “তোকে ৩০০ টাকার পুদিনা পাতা আনতে বলছি, নাকি ৩০০ টাকা থেকে পুদিনা পাতা আনতে বলছি। তোর একটা বিবেচনা নাই, কতটুকু পুদিনা পাতা লাগবে বোরহানি বানাতে? সব কথা ভেঙে বলতে হবে?”
বোঝো অবস্থা। ৩০০ টাকার পুদিনা পাতা আর ৩০০ টাকা থেকে পুদিনা পাতা আনবার যে সুক্ষ্ম পার্থক্য আছে, সেটা তার মতো প্রায় অশিক্ষিত মানুষ বুঝবে কি করে? আর বোরহানি বানাতে কতটুকু পুদিনা পাতা লাগে সেটা সে কেমন করে জানবে? সেকি ফখরুদ্দিন বাবুর্চি?
যাই হোক, সে যাত্রায় বড় ভাবি এসে বাঁচিয়ে দিলেন। বললেন, “ভালোই তো অনেকদিন থেকে ভাবছি একটু পুদিনা পাতার চাটনি করবো। আনানো হচ্ছেনা, বানানোও হচ্ছেনা। আজকে বানিয়ে ফেলি। দুপুরে পোলাওয়ের সাথে ভালো লাগবে।
খালাম্মা ঠান্ডা হলেন যদিও, তবুও দুপুরের খাবারে সময়, পুদিনা পাতার চাটনি আঙুলে নিয়ে মুখে পুরবার সময়, বিড়বিড় করতে শোনা গেলো, “কোনো বিবেচনা নাই? ৩০০ টাকার পুদিনা পাতা?”
এরকম ঘটনা প্রায় সপ্তাহে দু-তিনবার ঘটছে। ঘটনা শুধু একজনের সাথে ঘটেনা। সে হলো মনু মিয়া। মনু মিয়া এ বাড়ির পোষা ময়না পাখি। আবদুর রব তার দেখাশোনা করে। সবাই আবদুর রবের হাতের মনু মিয়াকে সোপর্দ করে, দায়িত্বছাড়া হয়ে নিশ্চিন্ত। আবদুর রব খুব মন দিয়ে মনু মিয়ার যত্ন আত্তি করে। খাওয়ায়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা বলাও শেখায়।
মনু মিয়া এখন ‘আবদুর রব’ বলে ডাকতে পারে। দিনে কাজের ফাঁকে, মনু মিয়া যখন ‘আব্দুর রব’ বলে গলা ছাড়ে, আবদুর রব পাল্টা উত্তর দেয়, “দিনে বেশি কথা বলার ফুরসৎ নাই। এখন বিরক্ত করোনা যে।”
তবে রাতে কাজ সেরে মনু মিয়ার সাথে অনেক গল্প-গুজব করে সে। বেশিরভাগই ভাবের আলাপ। মনু মিয়া মাঝে মাঝে মন দিয়ে শোনে। মাঝে মাঝে ঝিমুতে ঝিমুতে তার ভাষায় যে উত্তর দেয়, তা তাজ্জব হবার মতন। এই যেমন সেদিন আবদুর রব বললো, “এই যে পৃথিবীতে এতো রং, এতো রঙের তো নাম ও জানিনা।” উত্তরে মনু মিয়া তার নিজের ভাষায় যা বোঝালো, সে অর্থ অনুধাবণ করে তো আবদুর রব তাজ্জব। মনু মিয়া তার ভাষায় বললো, এবং আবদুর রব বুঝে নিলো, “রং তো বেশি নাই, সবই মানুষের অন্তরে। যার অন্তর যত রঙিন, সে বেশি বেশি রং দেখে, নাকি?”
এমন ভাবের উত্তর মনু মিয়া কেমনে দিলো! কই আবদুর রবের তো বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি। সমস্যা শুধু মানুষকে বোঝায়।
এমন করেই চলছিল। কিন্তু সেদিন যা ঘটলো, এর পর আবদুর রব অন্যভাবে ভাবতে বাধ্য হলো। এ সংসারে প্রতিদিন ১০-১১ জনের থালাবাসন হাড়ি মাজতে মাজতে অনেক রাত হয়ে যায় আবদুর রবের। রাতে সবার খাওয়ার পর, টেবিল মুছে, সে নিজে তার ছোট্ট চারকোনা ঘরে বিচেনায় চাদর পেতে খেতে বসে। তারপর বাড়তি সব খাওয়া ফ্রিজ ঢুকিয়ে সেই যে রাজ্যের হাড়ি পাতিল ধুতে বসে, তার আর শেষ নেই। আগের মতো সব পরিচ্ছন্ন করে ধুতেও পারেনা। বাতে ধরেছে। কোমরে প্রায়ই ব্যাথা করে।
সে খালাম্মাকে প্রায়ই বলে, “রাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়, ঘুম পুড়েনা।” তার উত্তরে খালাম্মা যদি বলেন, একটু আগে কাজ সেরে ঘুমিয়ে পরিস না কেন? এর উত্তরে আর কি বলতে পারে আবদুর রব। সেই একই ঘটনা। বোঝাবুঝির সমস্যা।
সেদিন রাতে তাই মনু মিয়ার সাথে বসে এক ফন্দি আঁটে সে। সকালে খালাম্মা যখন চা নিয়ে বারান্দায় বসে, খালাম্মা’র পায়ের কাছে যেয়ে বসে। ছোট আপাও বারান্দায় বসে চা খাচ্ছে, খালাম্মার সাথে। এই সুযোগ। ইনিয়ে-বিনিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে, গল্প গুজব করে, দেশ ও দশ নিয়ে। তারপর এক পর্যায়ে সে আসল কথায় আসে।
“খালাম্মা আমি যখন রাত জাগি, থালা বাসন ধুই, ফাখি তো আমার সাথে কথা কয়।”
– “কে কথা বলে?” খালাম্মা পত্রিকা থেকে চোখ না সরিয়ে প্রশ্ন করে।
“পাখি পাখি, মনু মিয়া।” আবদুর রব একটু উচ্চারণ ঠিকঠাক করে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবার চেষ্টা করে। বেশি নার্ভাস থাকলে বা আবেগে সে তার মায়ের আদি ভাষায় কথা বলা শুরু করে দেয়। একটু সামলে নেয় নিজেকে।
এবার আর খালাম্মা উত্তর দেয়না। ছোট আপা জিজ্ঞেস করে, “পাখি কি বলে আবদুর রব ভাই?”
-“ফাখি দুঃখ করি কয়,
আবদুর রব, মধুর রব,
এতো রাইত কি হারস?”
এর পরের গল্প আর এক কথা দু’কথায় শেষ করা যাবেনা। ঘটনা ছোট আপা মারফত বাড়ির সবার কানে কানে রটলো। পাখি কথা বলে, তাও আঞ্চলিক ভাষায়। পাখি আবদুর রব কে ‘মধুর রব’ ডাকে, ইত্যাদি এবং ইত্যাদি। ছোট ভাইয়া তো তাকে এখন মধুর রব বলেই ডাকে। খাওয়ার টেবিলে এ এক নিত্যদিনের হাসি ঠাট্টার বিষয় হয়ে উঠেছে।
এই যে সে এতো রাত জাগে, তার কষ্ট হয়। তা বোঝাতে এতো কিছু করা। তার মূল কথা না বুঝে বাড়ির সকল মানুষ ঘটনা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে। অভিমানে চোখে পানি চলে আসে। সেদিন রাতে ছোট ভাইয়া যখন “মধুর রব, একটু শুনে যা তো” বলে ডাক দিলো, তখনই আবদুর রব সিদ্ধান্ত নিলো, আর না। অনেক হয়েছে।
ফজরের আজানের পর, আকাশ ফর্সা হবে হবে সময়ে আবদুর রব মনু মিয়াকে আর বিশাল মেঘের সমান বড় এক দলা অভিমান সাথে নিয়ে বাড়ি ত্যাগ করে।
দু’দিন পার হয়েছে। আজ তার গোপন আস্তানা থেকে বের হয় আবদুর রব। মনু মিয়াকে নিয়েই বের হয়েছে। মনু মিয়া ঠিক মতন আলো বাতাস পাচ্ছেনা। আস্তানা হলো খলিলের বাসা। পাড়ার দর্জি খলিল তার ছোটবেলার বন্ধু। তার মতো এই পাড়াতেই জন্ম। ছোট বেলা থেকে যখন বাড়ির ফুট ফরমাশ কাজে বাজারে যেত, খলিলকে দেখতো, খলিলের বাপের দর্জির দোকানে বসে পা দোলাতে। এখন খলিল বাপের দোকান চালায়। এত বছর পর ও বন্ধুত্ব তাদের অটুট। সেদিন বাসা থেকে বের হবার পর, সে রাস্তা পার হয়ে খলিলের দোকানেই সে গিয়েছিলো। খলিল বললো,”কই যাবি? আমার বাসায় থাক। তোদের বাড়ির কেউ জানতেও পারবেনা। আমি এই ফাঁকে ওই বাড়ির লোকদের হাল হকিকত বুঝার চেষ্টা করি।”
দু’দিন হয়ে গেলো। আবদুর রব একই পাড়ায় আছে। কেউ তার খোঁজ করেছে বলে শোনা গেলোনা। অভিমানের দানা শক্ত হয়, জমাট বাঁধে। আজ দুপুরে মনু মিয়াকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছে। আশেপাশে কাজ ও খুঁজতে হবে। কি কাজ খুঁজবে বুঝে উঠত পারছেনা। নতুন কোনো বাসায় যেয়ে আবারো একই ঝামেলাই হবে। যে বাড়িতে জন্মালো, তারাই তাকে বুঝলোনা। মনু মিয়াও গেলো দু’দিন ধরে চুপচাপ। মানুষ হোক আর পাখি, আশ্রয়হীনতার ভয় সবাইকেই কষ্ট দেয়। ঘটনা যে ভালোনা, মনু মিয়া বোধহয় আঁচ করতে পেরেছে। আবদুর রবের মাঝে মাঝে মনে হয় এই ছোট পাখির বুদ্ধি মানুষের চেয়ে ও তীক্ষ্ণ।
ভাবতে ভাবতে, যখন বড় বাজারের রাস্তা পার হচ্ছিলো, কানে আসে তার নাম ‘আবদুর রব. আবদুর রব।” আশেপাশে তাকায়। কেউ তো ডাকছেন। পাশ দিয়ে ধীরলয়ে এক রিকশা যাচ্ছে, কি এক হারানো বিজ্ঞপ্তি মাইকিং করতে করতে। কি মনে করে এক ঝটকায় সেই রিকশার পেছন পেছন পা বাড়ায় সে। মাইকিং এর টুকরো শব্দ গুলো কানে আসে।
“আমাদের বাড়ির ছেলে আব্দুর রব হারিয়ে গিয়েছে। শ্যামলা, মাঝারি হাইট …”
এক ঝটকা বাতাসে নাকি অভিমানের দানাভাঙা জলে, চোখ ভিজে আসে আবদুর রবের। চোখ ভিজলে, কান কেন ঠিক মতন কাজ করেনা, এটা সে ঠিক বুঝতে পারেনা। মাঝের কোনো কথাই সে চোখের পানির জ্বালায় শুনতে পারেনা। চোখ মুছে সে শুধু শেষের কথার কিছু টুকরো শুনতে পায়, “আবদুর রব তুমি ফিরে আসো, যেখানেই আছো, ফিরে এসো।”
মুহূর্তের চিন্তায়, আব্দুর রব ঘুরে দাঁড়ায় বাম দিকের রাস্তায়। মনু মিয়াকে বলে, “চল বাড়ি যাই।” মনু মিয়ার ও আপত্তি নাই। এক হাতে মনু মিয়ার খাঁচা, অন্য হাতে ভেজা চোখ সামাল দিতে দিতে, আবদুর রব আর মনু মিয়া বাড়ির পথে পা বাড়ায়।
এই নিয়ে তিনবার। প্রতিবছর একবার করে আবদুর রব বাড়ি ছাড়ে। আর দু’দিনের মাথায় যখন জানতে পারে, তাকে খোঁজা হচ্ছে, তার জন্য ওই বাড়ির মানুষেরা অপেক্ষা করছে, সব অভিমানের দানাগুলো মোমের মতো গলে গলে যায়। প্রতিবার সে একইভাবে ফেরে, সে গন্তব্যে ফেরে, যাকে আমরা ‘বাড়ি’ নামে চিনি।
আবদুর রবের মতন আমরা বোধহয় সকলেই মাঝে মাঝে হারিয়ে যাই। সকল কিছুর মাঝে থেকেও হারিয়ে যাওয়া যেমন। ঠিক তেমন। কেউ আবার দূরে যেয়ে হারায়। আসলে কিছু সময়ে বোধহয় হারিয়ে যেতে হয়। ফিরে আসার জন্য। অভিমানের কাছে, নিজের কাছে, নিজেদের কাছে। নতুন করে, বা পুরাতনকে নতুন করে আবিষ্কার করে, আবার। না হারালে যে বোঝা যায়না ফিরে আসার রং।