অনুপ্রাণন গল্পকার ও গল্পসংখ্যা ৪র্থ পর্বের মোড়ক উন্মোচন
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:১৭ | আপডেট: ৩ মার্চ ২০২৪ ১৬:২১
অনাড়ম্বর একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মোড়ক উন্মোচন করা হলো ‘বাংলাদেশের গল্প: নির্বাচিত ১০০ গল্পকার’ শিল্প-সাহিত্যের ত্রৈমাসিক অনুপ্রাণন চতুর্থ ও শেষ পর্ব। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার লিটলম্যাগ চত্বরে সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হয় পাঠ উন্মোচন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, নাসিমা আনিস, আনিস রহমান ও মণীশ রায়।
বাংলাদেশের গল্পকার ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে মোট চার পর্বে। নির্বাচিত ১০০ জন গল্পকার, গল্প-সাহিত্য নিয়ে সামষ্টিক আলোচনার পাশাপাশি তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী, প্রকাশিত বই, পুরস্কার ও সম্মাননা এবং আলোচকের দৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট গল্পকারের নির্বাচিত একটি গল্প সংকলিত হয়।
স্বাগত বক্তব্যে অনুপ্রাণন সম্পাদক আবু এম ইউসুফ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে যারা সাহিত্যের ভিত্তিমূল রচনা করেছেন, এদের মধ্য থেকে আমরা যাদের নির্বাচন করেছি তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠের জন্ম ১৯৬৫ সালে। সর্বজ্যেষ্ঠ যিনি তার জন্ম ১৮৯৭ সালে। যারা বাংলাদেশের, যাদের পাঠক বাংলাদেশের, বাসস্থান বাংলাদেশে— তাদের নিয়েই এই কাজ।
সম্পাদকের বক্তব্যের পর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আমন্ত্রিত অতিথি কথাসাহিত্যিক মণীশ রায় বলেন, আমরা যারা গল্প লিখি, কথাসাহিত্যের চর্চা করি তাদের জন্য এরকম একটি প্রয়াস আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। সৈয়দ শামসুল হকের একটি বই আছে— গল্পের কলকব্জা ও মার্জিনে মন্তব্য। সেখানে তিনি লেখকদের বিশেষ করে প্রেমেন্দ্র মিত্র, জগদীশ গুপ্ত এদের একেকটি করে গল্প দিয়েছেন এবং গল্পের কলকব্জা তিনি তার মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন। অনুপ্রাণনের এই কাজ দেখে আমার কাছে সৈয়দ হকের বইটির কথা মনে পড়ল। যেখানে তিনি এত আগে চিন্তা করেছেন, প্রেমেন্দ্র মিত্রের মতো একজন লেখকের একটি গল্প দিলেন। গল্পের সঙ্গে হক ভাই চমৎকার একটি আলোচনা করলেন— গল্পটি কীভাবে গল্প হয়ে উঠল। এর মনোজ্ঞ আলোচনা তিনি করলেন। অনুপ্রাণন ম্যাগাজিনের এই প্রচেষ্টা তারই ধারাবাহিকতা বলে মনে হচ্ছে। কথাসাহিত্যের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক ও শুভ সূচনা এটি।
কথাসাহিত্যিক আনিস রহমান বলেন, এটা আমার কাছে চমকের মতো। এধরনের একটি কাজ হচ্ছে— জানা ছিল। কিন্তু সেখানে আমার অন্তর্ভুক্তিও রয়েছে, এটা জানা ছিল না। কানেকটিভিটি বলে যে ব্যাপারটা আছে, অনেক লেখা একসঙ্গে সংগ্রহশালার মতো। আমি মনে করি, এটা আমাদের গল্পের একটি ধারা। গল্পের নতুন নতুন কোন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, লেখকদের চিন্তাচেতনা কীভাবে কোনদিকে প্রবাহিত হচ্ছে— সেসবের নতুন সামাজিক প্রাকৃতিক পরিবেশগত নানা দিক আত্মস্থ করে লেখকরা আত্মস্থ করে সেসব লেখায় সন্নিবেশিত করছেন। সম্পাদক মহোদয়কে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি— চমৎকার একটি উদ্যোগ, চমৎকার একটি আইডিয়ার বাস্তবায়ন ঘটানোর জন্য। আমাদের গবেষকরা ছোটগল্পের বিভিন্ন ধারা উপধারা সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য জানতে পারবেন। গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন অনেক চিন্তাচেতনার সূচক এই অনুপ্রাণন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গবেষকরা গবেষণা কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
কথাসাহিত্যিক নাসিমা আনিস বলেন, অনুপ্রাণনের কাজটি একসঙ্গে করলে বহন করা কঠিন হতো। চার পর্বে প্রকাশ করায় সুবিধাই হয়েছে। লেখাগুলো গবেষকের কাজে লাগবে অবশ্যই। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পত্রিকা একযুগ ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে— এজন্য সম্পাদককে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
প্রাবন্ধিক সরকার আবদুল মান্নান বলেন, অনুপ্রাণনের যে পরিকল্পনা, বিশেষ করে একটি সাহিত্য আন্দোলন নিয়ে সম্পাদক আবু এম ইউসুফের যে প্রচেষ্টা এটা নিয়ে আমি খোঁজখবর রাখি। আমার ভালো লাগে। অনুপ্রাণনের যে সংখ্যাগুলো প্রকাশিত হয়েছে, ম্যাগাজিনের সাইজটা ব্যতিক্রম। যাদের গল্প ছাপা হয়েছে,পাশাপাশি একটা মূল্যায়নও ছাপা হয়েছে। তাদের চমৎকার একটা ছবিও ছাপা হয়েছে। সামগ্রিক পরিকল্পনা, যাদের নিয়ে মূধ্যায়নধর্মী লেখা ছাপা হয়েছে এই মূল্যায়নে তারা নিজের মুখ কিছুটা হলেও দেখতে পারবেন। সামগ্রিকভাবে আন্দোলনটা খুবই ব্যয়বহুল ব্যাপার। বেশ ঝক্কি-ঝামেলাও আছে। লেখাগুলো সংগ্রহ করা, আরেকজনকে দিয়ে লেখানো, মূল্যায়ন করা, মূল্যায়নটা যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা, সথাসময়ে হচ্ছে কিনা— সব মিলিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। আমাদের অনেকেরই মন আছে, কারও কারও টাকাও আছে কিন্তু সাংগঠনিক ক্ষমতা সবার নেই।
তিনি আরও বলেন, লেখকরা সাধারণত অভিমানী হন, খুব অল্পতে লেখকদের মন খারাপ হয়, লেখকদের নিয়ে ডিল করাটাও খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটা ব্যাপার। চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। ইউসুফ সাহেব খুব ধৈর্য নিয়ে কাজটি করে যাচ্ছেন। আশা করি অনুপ্রাণন আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে, কর্মযজ্ঞটা অব্যাহত থাকবে।
কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন বলেন, অনুপ্রাণন দীর্ঘদিনের কাগজ। একযুগ পার করে ফেলল। একযুগ পার করে এসে যে অসাধ্য সাধন করেছেন পত্রিকার সম্পাদক, আমি বিস্মিত হয়ে গেছে। একশ’ জন কবিকে তার কাগজে ঠাঁই দেওয়া এবং তাদের সম্পর্কে লেখানো; তারচেয়েও যেটা দুঃসাধ্য— একশ’ জন গল্পকারকে তার কাগজে নির্বাচন করা এবং তার উপরে আরও একশ’ জনকে দিয়ে লেখানো— এটাই চিন্তাই করা যায় না। বিস্ময়কর। ছোটকাগজ সম্পাদনা করতাম, আমি জানি— লেখা পাওয়া, লিখিয়ে নেওয়া কাকে বলে!
কালের এটি একটি ঠিকানা হয়ে থাকবে; একশ’ জন গল্পকারকে নির্বাচন করে, তাদের একটি গল্প অন্তর্ভুক্ত করা, তাদের উপরে অন্যদের দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া— আমি মনে করি এটা আমাদের কথাসাহিত্যের জগতে, কবিতার জগতে অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই লেখক।
দীলতাজ রহমান বলেন, নিঃস্বার্থভাবে, এরকম একটি কঠিন কাজ আর কারও দ্বারা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না— একমাত্র আবু এম ইউসুফ ছাড়া। ইউসুফ সাহেবকে দেখলেই সত্যিই শ্রদ্ধায় আমার মাথাটা নুইয়ে আসে। কেননা সম্মান করার মতো, ভালোবাসার মতো মানুষ নেই সামনে। আমি ওনাকে পেয়েছি। ধন্য এজন্য।
অনুপ্রাণন গল্পকার ও গল্প ৪র্থ পর্বে সূচিবদ্ধ ২৫ জন বরেণ্য গল্পকার ও আলোচকরা হচ্ছেন :
বশীর আলহেলাল— ইলিয়াস বাবর, দিলারা হাশেম— রুখসানা কাজল, আমজাদ হোসেন— আবুল খায়ের নূর, মাহবুব তালুকদার— নাহার আলম, জাফর তালুকদার— ড. ইমদাদুল হক মামুন, শান্তনু কায়সার— আবু ম. ইউসুফ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল— রবিউল ইসলাম, সুশান্ত মজুমদার— শফিক হাসান, মঈনুস সুলতান— জান্নাতুল ফেরদৌস, উম্মে মুসলিমা— নূর কামরুন নাহার, পারভেজ হোসেন— আমিনুল ইসলাম সেলিম, মহীবুল আজিজ— মিল্টন বিশ্বাস, নাসিমা আনিস— মাইনুল ইসলাম মানিক, শামসুল আলম সরদার— সুমন শামস, সালমা বাণী— মো. শওকত আযম, সেলিম মোরশেদ— মারুফ রায়হান, কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর— স্বপঞ্জয় চৌধুরী, আনিস রহমান— জান্নাতুল যূথী, মণীশ রায়— উদয় শংকর দুর্জয়, নাসরীন জাহান— বাসার তাসাউফ, আনিসুল হক— আলভী রহমান শোভন, কুলদা রায়— সাদিয়া সুলতানা, জাকির তালুকদার— নুসরাত সুলতানা, পাপড়ি রহমান— ইসরাত জাহান, ইমতিয়ার শামীম— স.ম. শামসুল আলম।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন বিভিন্ন স্তরের লেখক ও ছোটকাগজকর্মীরা। এদের মধ্যে রয়েছেন— সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ, আনোয়ার কামাল, জ্যোৎস্নালিপি, মামুন মুস্তাফা, আমিরুল বাসার, ইসমত শিল্পী, সৈয়দ নূরুল আলম, শফিক হাসান, হানিফ ওয়াহিদ, অমিত কুমার কুণ্ডু, অনিরুদ্ধ দিলওয়ার, মাইনুল ইসলাম মানিক, নূর কামরুন নাহার, স.ম. শামসুল আলম, জেবুননেসা হেলেন প্রমুখ।
সারাবাংলা/এসবিডিই
অনুপ্রাণন গল্পকার ও গল্পসংখ্যা ৪র্থ পর্বের মোড়ক উন্মোচন শফিক হাসান