Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমাকে যখন ৯০’তে পায়


১০ আগস্ট ২০১৯ ১৬:২৫ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০১৯ ১৬:২৮

আমাকে মাঝে মাঝে ৯০’তে পায়। যেদিন এমন হয়, সেদিন আমার ৯০’এর কথা মনে পড়ে।
আমার যখন ৯০’এর কথা মনে পড়ে, তখন আমার খুব জ্যামিতি বক্সের কথা মনে পড়ে। লাল সাদা জ্যামিতি বক্স। জ্যামিতি বক্স আর তার পরিবারের কথা মনে পড়ে – চাঁদা, কম্পাস, কাঁটা কম্পাস। ত্রিভুজ, চতুর্ভূজ, আর এখনো না বোঝা কত কোণ। কাজের চেয়ে অকাজে প্রিয় সাদা-লাল জ্যামিতি বাক্স মনে পরে যখন, আমার তখন ৯০ এর কথা ও মনে পড়ে।
পকেট ভর্তি জলি আচার চেপ্টা হওয়া, নখের ফাঁকে ফাঁকে জলি আচারের কালো তেঁতুল আঠা। কে জানতো তখন পঞ্চাশ পয়সার জলি আচার আসলে কত দামে কেনা?
ক্লাসে বসে চলিত নিয়মের অংক শিক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে, আর ‘কষিত-কনককান্তি কমনীয় কায়’ তোপসে মাছের গুণ বর্ণনা করতে করতে, আমার চোখ যেত জানালার বাইরে পুরোনো বট গাছের দিকে। আর বট গাছের দিকে তাকালে আমার খুব দুপুর বেলার কথা মনে পড়ে যেত। ছুটির দিনের দুপুর বেলা। স্কুল-ছাড়া দুপুর বেলার দিন।

বিজ্ঞাপন

যেদিন দুপুর বেলায় লালমরিচ মাখা পেয়ারার টুকরোগুলো, চাচা চৌধুরী, রুশদেশের উপকথার ইভান, গোলরুটি আর ফেলুদা তাদের আত্মীয়তায় আমাকে ব্যতিব্যস্ত করতো, আর আমি তার ফাঁকে টুপ করে ঘুমিয়ে যেতাম, সেদিন হতো ছুটির দিন। আমি ঘুমিয়ে যে স্বপ্ন দেখতাম, সে দিনগুলো ছিল বড্ড ৯০’এর দিন। কি স্বপ্ন দেখতাম, মনে নেই। কিন্তু স্বপ্নের কথা মনে হলে আমার বড্ড ৯০’এর কথা মনে পড়ে।

আমি জানতামনা তখনো, জানিনা এখনো, ভাঙা কেমন করে জোড়া দিতে হয়। কিন্তু আমি বেশ জানতাম, পেন্সিলে পেঁচিয়ে কেমন করে জট হয়ে যাওয়া ক্যাসেটের ফিতা ঠিকঠাক করতে হয়। রুপালি টুইনওয়ান ঘিরে যেদিন উৎসব হতো, নতুন ক্যাসেটে প্রিয় গান রেকর্ড করে, বারবার বারবার চালিয়ে দেওয়া, টেনে টেনে রিওয়াইন্ড ফরওয়ার্ড, হাতে গুটিগুটি করে ক্যাসেটের কাগজে নতুন গানের লিস্ট লেখা। অমন দিন যখন ছুঁয়ে দেখি, আমি ৯০কেও ছুঁয়ে দেই। রিওয়াইন্ড আর ফরওয়ার্ড এর বোতাম আর খুঁজে পাইনা যখন, তখন আমার খুব ৯০ এর কথা মনে পড়ে।

৯০ কেমন যেন হিং টিং ছট – কি বিস্ময়, কি জাদু। কখনো সপ্তাহ শেষের বিটিভির নাটক’, ওশিন, ম্যাকগাইভার। কখনো চাংপাই চাইনিজ। ঝাল ঝাল দেশি। কিন্তু বড্ড বিলাসী, একমাত্র বিদেশী। আর শিশু পার্কের মাঝখানের হলুদ ঘোড়াখানা। তার নাগাল পেলে, সময়ের নাম আনন্দ হতো। আনন্দ কেমন গোছানো পরিপাটি। তবু কি বিস্ময়। তবু কি আকর্ষণ।
কাঠিতে আটকানো পেইঙ্গুইন আইসক্রিম কিংবা কখনো এক্কা দোক্কা তেক্কা। পরিমিত- চাওয়া এবং পাওয়া। কালো পেটমোটা ক্যামেরাখানা। ফিল্ম ভরে টুসটাস ছবি, ৩৬ ফিল্মের ১৬টা ছবি ঠিকঠাক আসতো। কি অপেক্ষা কি আগ্রহ। গুছিয়ে রাখা, ঠিকঠাক – সময়, ছবি, স্মৃতি। সময়টা তখন ভীষণ ৯০ ধরণের ছিল।

বিজ্ঞাপন

উৎসব যখন আমার ছিল, হয়তো আমার কাছে ৯০’ই ছিল তখন। ‘এসো হে বৈশাখ’, ‘এলো খুশির ঈদ’ নাকি পূজা মণ্ডপে ঘুরে ফিরে দেখা, উৎসব তখন একরঙা ছিল – বড্ড রঙিন।
অনেক পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা, টিকে থাকার গল্প শেখার সময় ৯০। যখন থেকে শিখে গেছি ষ্টার লেটার পাশ-ফেল। তারপরও সব ছাড়িয়ে ৯০ আমাকে বড্ড চারুলতার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমার শেখা প্রথম ভালোবাসার সূত্র – আমি চিনি গো তোমারে ওগো বিদেশিনী। আর ওদিকে ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ সাথে ‘কুছ না কাহো, কুছ ভি না কাহো’ আর ‘বর্ণে গন্ধে মিলিয়ে এক গুনগুন সুর মনে করিয়ে দেয়। যে সুর আমি শুনতে পাই, যখন শুনতে চাই। ৯০ এ কিংবা ৯০ ছাড়িয়ে বহুদূরে।

আমার চেনা সত্যজিৎ রায় আর রাহুল দেব বর্মন কেমন এসে হেসে ভেসে ফিরিয়ে দেয়, সেই ৯০। তাঁদেরকে খুঁজে পাওয়া ৯০। নীলা, মৌসুমী, আর বাকের ভাইয়েরা লুকোচুরি খেলার ফাঁকে শুধু ছুঁয়ে দিয়ে যায়। আমি যেমন মাঝে মাঝে ৯০’ ছুঁয়ে যাই।

আমি যখন ৯০ ছুঁই, আমার স্মৃতি-বিস্মৃতির ক্রস কানেকশন জড়িয়ে-পেঁচিয়ে আমায় খুঁজে নেয়। যেই ক্রস-কানেকশন মনে করিয়ে দেয় সেই ৯০- আমি কখনো বা গল্পের সাক্ষী ছিলাম, কখনো আমি ছিলাম গল্প। আমি এখন বসে আতিপাতি খুঁজি সেই ক্রস কানেকশন যার ওপাশে আছে শুধু ৯০।

৯০ কেমন ঝলকানি আলোর মতন একটুকরো হু হু বেজে ওঠা সুর। সেই সুর আমি শুনতে পাই, যখন আমি ৯০’কে শুনতে পাই, দেখতে পাই, ছুঁতে পাই, খুঁজে পাই।
৯০ কেমন ন্যাপথলিন, পাঁচফোড়ন আর কাঠগোলাপের ঘ্রাণের মতন চেনা । যেন এক আরাম দুপুর। লোভী ভাতঘুম। ৯০ এমনি চেনা, নিশ্চিন্ত।

তাই হয়তো, মাঝে মাঝে আমার খুব ৯০’এর কথা মনে পড়ে। মাঝে মাঝে আমাকে বড্ড ৯০’তে পায়।

৯০ কিযী তাহনিন গল্প টপ নিউজ সারাবাংলা সাহিত্য স্মৃতিগদ্য