Saturday 28 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস, লক্ষণগুলো জেনে রাখুন

সারাবাংলা লাইফস্টাইল
৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৯ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৮

জিকায় আক্রান্ত শিশুর মস্তিস্ক স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হয়। ছবি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে

বাংলাদেশের মানুষ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া এমনকি কোভিডের নাম ভালোভাবে জানলেও জিকা তাদের কাছে নতুন এক প্রাদুর্ভাব। এমনকি রোগ হিসেবে জিকার নাম শোনেননি অনেকেই। জিকা মূলত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার একটি রোগ। সাধারণত আমেরিকা, পুয়ের্তোরিকো, গুয়াতেমালা, মেক্সিকো এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। ওই অঞ্চলে জিকার ভয়াবহতা অনেক বেশি। চলতি শতকের শুরুতেই জিকার ভয়াবহতার কারণে লাতিন আমেরিকার কিছু দেশে গর্ভধারণে অনুৎসাহিত করার ঘটনাও ঘটেছিল।  এছাড়া বিভিন্ন সময়ে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মিসর, সেনেগাল ও আইভরি কোস্ট ও ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা গিয়েছিল। অথচ ঢাকায় সম্প্রতি শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। গত তিন মাসে আটজনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি জানা গেছে। গত বছরও পাঁচজন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসা নেওয়ার পর তারা এখন ঝুঁকিমুক্ত। গত সপ্তাহে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, জিকা ভাইরাস বাংলাদেশে প্রথম ২০১৪ সালে শনাক্ত হয়। জিকার কোনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। গবেষকরা বলছেন, জিকার পাশাপাশি ঢাকা শহরের মানুষ এখন এডিস মশা দ্বারা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এর অর্থ, ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়া, এই তিন রোগে ঢাকা শহরের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগ তিনটিই ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। জিকা রোগটি প্রাণঘাতী না হলেও এতে গর্ভস্থ শিশুর বৈকল্য দেখা দিতে পারে। তবে এই রোগ সম্পর্কে আরও ভয়ের কারণটি হচ্ছে, এই রোগে তেমন কোনও উপসর্গ নেই। নেই কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি বা টিকা।

বিজ্ঞাপন

জিকা ভাইরাসের দুটি ধরন আছে বলে আইইডিসিআরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। একটি আফ্রিকান, অন্যটি এশিয়ান। আইসিডিডিআরবি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় তাদের পাওয়া জিকা ভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ধরনটি এশিয়ান। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে, জ্বর ও ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কাছের সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে বা রোগীকে ভর্তি করাতে হবে।

জিকা নিয়ে উদ্বেগের এই সময়ে সারাবাংলা এই রোগটি নিয়ে কথা বলেছে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইশতিয়াক হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন জিকা ভাইরাসের উপসর্গ, চিকিৎসা ও এই ভাইরাসের নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে।

জিকা ভাইরাস কী

জিকা একধরণের মশাবাহিত রোগ। এই ভাইরাসের বাহকও এডিস মশা। বিশেষ এই ভাইরাসটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে অতটা মারাত্মক না হলেও গর্ভবতী মহিলা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য এই ভাইরাস প্রাণঘাতী। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের রোগটিকে বলা হচ্ছে ‘মাইক্রোসেফ্যালি’। এতে গর্ভবতীর সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিক হয় না। এতে শিশুর মাথা শরীরের তুলনায় অস্বাভাবিক রকমের ছোট হয়।

জিকার ভয়াবহতার কারণে লাতিন আমেরিকার কিছু দেশে গর্ভধারণে অনুৎসাহিত করার ঘটনাও ঘটেছিল। ছবি: ডব্লিউএইচও

জিকা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়

এডিস মশা যে কোনও সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে তিনি ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ার সঙ্গে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে। এমনকী গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর থেকে ভ্রূণেও সংক্রমিত হতে পারে এই ভাইরাস। গর্ভাবস্থায় এই ভাইরাস শরীরে হানা দিলে একাধিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়তে পারে। সময়ের আগেই প্রসব হতে পারে। তাই এই ভাইরাস থেকে গর্ভবতী মহিলাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে।

জিকা ভাইরাসের উপসর্গ

এমনিতে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সেইভাবে কোনও লক্ষণ প্রকট হয় না। তাই প্রথম দিকে রোগীকে দেখে কোনও বোঝারও উপায় থাকে না। এদিকে কোনও লক্ষণ দেখা দিলেও তা সংক্রমণের ৩-১৪ দিন পরেই প্রকট হয়। আর সেসব লক্ষণ অন্যান্য ভাইরাল ইনফেকশনের মতোই খুব সাধারণ। যেমন জ্বর, গিঁটে ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং দুর্বল বোধ হওয়া। এদিকে কনজাংটিভাইটিস, ব়্যাশও দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ ২-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

জিকা ভাইরাসের চিকিৎসা

জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হতে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। লক্ষণ বুঝেই ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। এমনকী এই সময় গিঁটে ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং দুর্বলতা হলে চিকিৎসকেরা বিশ্রামের কথা বলেন। আর বেশি করে পানি পানের কথা বলেন। যত্নে থাকলেই এই রোগকে হারানো সম্ভব। তবে বাড়াবাড়ি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জিকা ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

জিকা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় মশার উৎপাত কমানো। এর জন্য বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। বর্ষার জল জমতে দেওয়া যাবে না। নয়তো সেখানেই বাসা বাঁধবে মশা। আর এডিস মশার কামড়েই ছড়িয়ে পড়বে জিকা ভাইরাস। তাই ঘরে মশারি টাঙিয়ে ঘুমোতে হবে। বিশেষত গর্ভবতী মহিলাদের মশার কামড় থেকে সাবধানে রাখতে হবে।

সারাবাংলা/এসবিডিই

জিকা জিকা ভাইরাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর