আহ সুগন্ধি!
১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৩:৩০ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১৩:০৫
রাজনীন ফারজানা –
হঠাৎ ভেসে আসা কোন ঘ্রাণ কি কখনো আমাদের থমকে দেয় না? বা মনের কোনে লুকিয়ে থাকা কোন স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে না? হতে পারে তা গোলাপের কি বকুলের ঘ্রাণ, প্রিয় বই কিংবা মায়ের শাড়ির পরিচিত গন্ধ, অথবা মাটির সোঁদা ঘ্রাণ। ঘ্রাণের ঠিক অতটাই শক্তি যা আমাদের হৃদয়ের কোনে চিরস্থায়ী আসন গেড়ে বসে থাকে আর সময়ে সময়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। ঠিক সেভাবেই একজন ব্যক্তির গায়ের সুন্দর ঘ্রাণও আমাদেরকে তার প্রতি ইতিবাচক ভাবনা জাগিয়ে তোলে, আমরা মুগ্ধ হই, দীর্ঘদিন ধরে মনে রাখি তার উপস্থিতি।
ঘ্রাণকে নিজের অস্তিত্বে ধারনের চেষ্টা সেই সুদূর অতীত থেকেই চলে আসছে। এখনকার মতো হাতের নাগালে সুদৃশ্য বোতলে সুগন্ধি হয়ত পাওয়া যেত না, মানুষ কিন্তু সুগন্ধি ব্যবহার করতে পিছুপা হতনা একদমই। পুরনো কালে উপমহাদেশের নারীরা সুগন্ধি হিসেবে ধূপের ধোঁয়া মাখত চুলে, গায়ে আর পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে। ফুলের গয়নাও দারুণ সুগন্ধি হিসাবে কাজ করত।
চমৎকার একটা সুগন্ধির ছোঁয়া আমাদের মনকে করে তোলে চনমনে আর সেই সুগন্ধে আমাদের আশপাশের মানুষও ভাল বোধ করে। সুগন্ধি ব্যবহারের অতীত খুঁজলে দেখা যায় প্রাচীন মিশরে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সুগন্ধি ব্যবহার করত এবং তা রোজকার ব্যবহার থেকে শুরু করে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা মৃতদেহ সৎকারের আনুষ্ঠানিকতাতেও। অন্যদিকে সাইপ্রাসে দুই হাজার বছর আগেকার পারফিউম বানানোর ফ্যাক্টরি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ইতিহাস বলে, খ্রীস্টপূর্ব ১১৯০ সাল থেকে প্যারিসে বাণিজ্যিকভাবে সুগন্ধি উৎপাদন শুরু হয় আর পরে ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
নানা উপলক্ষে নানাধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকি আমরা। ডিওডরেন্ট, বডি স্প্রে আতর কিংবা পারফিউম। একেকটির ব্যবহার পদ্ধতিও আলাদা।মনে রাখা ভাল, সঠিক নিয়মে সুগন্ধি ব্যবহার করলে সেটার আবেদনই হয় অন্যরকম। যেমন ডিওডরেন্টের ব্যবহার বাহুমূলের দুর্গন্ধ দূর করতে। শুধু বাইরে যাওয়ার সময়ই নয়, প্রতিদিন গোসলের পরে শুকনো বাহুমূলে ডিওডরেন্ট ব্যবহার করলে সেটার ঘ্রাণ দীর্ঘসময় ধরে থাকবে আর আপনার ভাল লাগার বোধকে ধরে রাখবে।
আসলে টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মতো করে একগাদা বডি স্প্রে বা পারফিউম মাখার প্রয়োজন হয়না। শরীরের বিশেষ বিশেষ জায়গায় অল্প করে লাগালেই চলে। যেমন দুই হাতের কবজি, কনুইয়ের ভাঁজ, কানের লতির পেছনে বা গলার নীচে। সুঘ্রাণ দীর্ঘক্ষন ধরে রাখতে চাইলে নির্দিষ্ট স্থানে একটু ভ্যাজলিন মাখিয়ে নিয়ে তারপর স্প্রে করুন। এভাবে লাগালে সারাদিনের দৌড়ঝাঁপের মাঝেও হালকা করে ঘ্রাণ আসতে থাকবে, বারবার ব্যাগ থেকে বের করে স্প্রে করতে হবেনা। ডিওডরেন্ট বা পারফিউম পোশাকের উপরে লাগানো অপ্রয়োজনীয়। বিশেষত ডিওডরেন্টকে অনেকেই বডি স্প্রের মতো করে ব্যবহার করে যেটা ভুল পদ্ধতি।
নারী হোক কি পুরুষ, তার ক্লজেটের সবচাইতে আকর্ষণীয় আর বিলাসী প্রসাধনীটি থাকে তার সুগন্ধির সংগ্রহ। খেয়াল করে দেখবেন আমরা দৈনন্দিন ব্যবহারের বডি স্প্রে বা ডিওডরেন্ট হাতের নাগালে রাখলেও শ্যানেল কিংবা ডিওর এর পারফিউমটিকে অতি যত্নসহকারে আলমারিতে তুলে রাখি। আমাদের সাজগোজ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণতা পায়না যতক্ষন না আমরা প্রিয় সুগন্ধিটির পরশ বুলাই।
নানা ধরনের সুগন্ধি পাওয়া যায় বাজারে। নিজের রুচি অনুযায়ী বেছে নিন যেকোন একটি। তবে উৎকট গন্ধযুক্ত সুগন্ধি এড়িয়ে চলাই ভাল। চড়া ঘ্রাণ আপনার পছন্দ হলে চেষ্টা করুন নামকরা ব্রান্ড থেকে সুগন্ধি বেছে নিতে কারন ভালো ব্রান্ডের সুগন্ধিতে সুন্দর ঘ্রাণের পাশাপাশি বৈচিত্রও পাবেন প্রচুর। আর যেহেতু সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করবেন, তাই ত্বকের ক্ষতি এড়াতে সুগন্ধিটিকে অবশ্যই আসল ব্র্যান্ডের হওয়া প্রয়োজন। কারণ নকল সুগন্ধি এড়িয়ে না চললে তা অনেকসময় চামড়া পুড়িয়ে দেয় বা এলার্জির কারন হয়। বিশ্বের নামকরা ব্রান্ডের সুগন্ধি কিনতে চাইলে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের পণ্যের দাম আর পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। একটু খোঁজখবর করে কিনলে ঠকার সম্ভাবনা কমে যায় অনেকখানিই।
আসুন জেনে নেই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা বিশ্ববিখ্যাত কিছু পারফিউমের নাম। যেমন ফ্লাওয়ার বাই কেনজো, নাম্বার ৫- শ্যানেল, পয়জন ফ্রম ডিওর, কোকো মাদমোয়াজেল ফ্রম শ্যানেল, ট্রেজর ফ্রম ল্যানকম ইত্যাদি। তাছাড়া নামী ব্রান্ডের মাঝে গুচি, হিউগো বস, ভারসাচি, ডলচে এন্ড গ্যাবানা, ভিক্টরিয়া’স সিক্রেটও দারুণ জনপ্রিয়।
অনেককিছু তো জানলাম সুগন্ধি নিয়ে! আর দেরি নয়, আজই সংগ্রহ করে ফেলুন নিজের পছন্দের আসল ব্রান্ডের সুগন্ধি।
সারাবাংলা/ আরএফ/ এসএস