সুস্থতার জন্য হাসি
৭ মে ২০২৩ ১৬:৩১
প্রতিবছর মে মাসের প্রথম রবিবার বিশ্ব হাসি দিবস উদযাপন করা হয়। চলতি বছরে আজ বিশ্ব হাসি দিবস। বিশ্বব্যাপী ‘লাফটার ইয়োগা’ বা হাসির মাধ্যমে যোগব্যায়াম আন্দোলনের উদ্যোক্তা ভারতীয় চিকিৎসক মদন কাটারিয়া ১৯৯৮ সালের ১০ মে সর্বপ্রথম এই দিন উদযাপনের সূচনা করেন। আজ বিশ্ব হাসি দিবস উপলক্ষে জেনে নেই সুস্বাস্থ্যের সাথে হাসির যোগ নিয়ে কিছু কথা।
হাসাহাসি করলে শুধুমাত্র মন ভালো থাকে তাইই নয়, এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। বলা যায় হাসির উপর ওষুধ নাই। হাসি শুধু মানুষকে একে অন্যের কাছেই টানে তা না, এটা আমাদের আবেগ ও স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হাসি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মন ভালো করতে ভূমিকা রাখে, ব্যাথা কমায় ও মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। শুধু কী তাই! হাসি আমাদের ইমোশনাল হেলথ বা আবেগীয় স্বাস্থ্য ভালো রাখে, সম্পর্কগুলো উন্নত করে, সুখী করে আর আয়ু বাড়ায়। একটি সুখী শিশু দিনে অন্তত একশোবার হাসলেও বড় হতে হতে আমাদের জীবনে জটিলতা বাড়ে আর সেই সাথে কমতে থাকে হাসির পরিমাণ। তাই হাসিখুশি থাকার জন্য যত বেশি সম্ভব সুযোগ খুঁজে নেওয়া উচিৎ আমাদের।
দুঃখ ও ব্যাথা থেকে মুক্ত হয়ে নতুন আশার আলো খুঁজে নিতে সাহায্য করে হাস্যরস। এমনকি কঠিন সময়ে সামান্য এক চিলতে হাসিও মন ভালো করতে ভূমিকা রাখে। আর হাসি মাত্রই সংক্রামক- হাসির শব্দ পেলেও আমাদের মস্তিষ্ক সেই হাসিতে অংশগ্রহণ করতে সাড়া দেয়।
হাসি ও মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক অনেক গূঢ়। হাসি মন খারাপের অনুভূতি দমন করে। যখন আপনি হেসে ফেলবেন সেই মুহূর্তে আপনার কোন ধরণের রাগ, দুশ্চিন্তা কিংবা দুঃখবোধ থাকে না। নার্ভ শিথিল করে ও নতুন উদ্যম জাগায়। হাসির ফলে আমাদের মানসিক চাপ কমে গিয়ে শক্তি যোগায় ও নিজেদের কাজ ও দায়িত্বে মনোযোগ বাড়ায়।
হাসি মানসিক চাপ, ব্যাথা আর যেকোন দ্বন্দ্বের সবচাইতে শক্তিশালী প্রতিষেধক। ক্লান্ত মন আর শরীরকে কাজে ফেরাতে আর কিছুই হাসির চাইতে ভালো কাজ করেনা। রসবোধ আমাদের মানসিক বোঝা হালকা করে, নতুন আশা জাগ্রত করে, আশপাশের মানুষের সাথে সম্পর্ক ভালো করে, মনোযোগ ও সতর্কতা বাড়ায়। হাসিখুশি থাকা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ও ক্ষমাশীল করে তোলে। এতকিছু করে যে হাসি তা যেমন সহজলভ্য তেমনি মজার আবার দাম দিয়ে কেনাও লাগেনা।
মানসিক চাপ দূর করে
মন খুলে হাসার এমনকি প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পরেও ফিজিক্যাল টেনশন, মানসিক চাপ দূর করে আমাদের শরীরের পেশীগুলোকে শিথিল করে।
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে
হাসি রক্তনালীগুলোর কার্যক্রম এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
হাসি মানসিক চাপ বাড়ায় এমন হরমোনকে প্রতিরোধ করে ও রোগপ্রতিরোধী হরমোন ও সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করে এমন এন্টিবডির সংখ্যা বাড়ায়। এভাবে হাসি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এন্ডরফিনের নিঃসরণ বাড়াতে হাসি
এন্ডরফিন হচ্ছে মানবশরীরের এমন এক হরমোন যার প্রভাবে আমরা ভালো অনুভব করি। এটি নিঃসরণের সাথে সাথে আমরা স্বাভাবিকভাবেই সুখি বোধ করি এবং সাময়িকভাবে ব্যাথাও কমায়।
ক্যালরি ঝরায়
হাসলে জিমে যাওয়া লাগবে না বা ব্যায়াম করা লাগবে না ব্যপারটা তা না। তবে কিছু পরীক্ষায় দেখা যায়, দিনে দশ থেকে পনেরো মিনিটের হাসি চল্লিশ ক্যালরি পর্যন্ত পোড়াতে সক্ষম। এভাবে বছরে তিন থেকে চার পাউন্ড ওজন কমানো সম্ভব।
রাগ নিয়ন্ত্রন করে
যে কোনো দ্বন্দ্ব কমাতে কিংবা রাগ নিয়ন্ত্রণে হাসির চাইতে ভালো আর কিছুই নয়। যেকোন বিষয়ের মজার দিকটি যদি চোখে পড়ে তবে তা তিক্ততা কমায়। এভাবে দ্বন্দ্ব কমাতে সাহায্য করে হাসি।
জীবিনীশক্তি বাড়ায়
নরওয়ের এক সমীক্ষা দেখাচ্ছে, যাদের সেন্স অব হিউমার বা রসবোধ খুব ভালো তাদের গড় আয়ু যারা কম হাসে তাদের চাইতে বেশি। এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধেও হাসি চমৎকার কাজ করে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হাসি
হাসলে ভালো বোধ হয় আর এই ভালো অনুভবের রেশ হাসির পরেও রয়ে যায়। তাছাড়া রসবোধ দুঃসময়ে, মন খারাপের মুহূর্তে কিংবা কোন পরাজয়ের মুহূর্তে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে।
দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হাসি
হাসিখুশি থাকলে আপনি আরও বেশি বাস্তবভিত্তিক চিন্তা করতে শুরু করবেন। জীবনকে কিংবা যেকোন ঘটনাকে হালকা করে নিতে পারবেন। এতে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে মনস্তাত্বিক দূরত্ব কমে আসে আর যেকোন দ্বন্দ এড়ানো সহজ হয়।
অন্যকে কাছে টানে হাসি
আমাদের মানসিক ও আবেগীয় স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হাসি দারুণ ভূমিকা রাখে। এতে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে দূরত্ব কমে আসে ও একে অন্যের কাছাকাছি আসে।
সারাবাংলা/এসবিডিই