রোজায় প্রবীণদের খাদ্যতালিকা কেমন হবে?
৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৪৪
বৃদ্ধ বয়সে মানুষ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। রোজায় তাই পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শরীরে ব্যাপকভাবে অণু এবং কোষ ক্ষয় হতে থাকে। আসলে এটা স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া হলেও এর ফলে মানুষের শারীরিক শক্তি এবং মানসিক কাজের ক্ষমতা কমে যায়। যা মানুষকে শিশুর মত যত্নের উপর নির্ভরশীল করে তোলে। এসময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা কমে যায়। শরীর এবং মনে বিভিন্ন অসুস্থতা দেখা দেয়। আসুন জেনে নেই রোজায় বয়স্কদের ইফতার, রাতের খাবার এবং সেহরির উপযোগী খাবারের তালিকা
১. ইফতার
ক. পানীয় এবং খেজুর: রোজা ভাঙতে একটি খেঁজুর এবং এক কাপ পানিই যথেষ্ট। খেঁজুরে প্রচুর পটাশিয়াম এবং ক্যালরি থাকে। তাই সারাদিন রোজার ক্লান্তি কাটাতে খেঁজুর খুব উপকারি। ফ্রুকটোজের মাত্রাও বেশি থাকে তাই বয়স্কদের একটি খেঁজুর খাওয়াই ভালো। বেশি খেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এরপর একগ্লাস ডাবের পানি বা বেলের শরবত খেলে তা তৃষ্ণাও মেটাবে আবার হজমেও উপকারি। ইফতারে কোন কোন দিন এক গ্লাস সিটরাস ফলের (টকজাতীয় ফল) জুস যেমন, কাঁচা আমের শরবত, লেবু-পুদিনা পাতার শরবত ইত্যাদি দেওয়া যায়। সিটরাস জুস শরীর পরিষ্কার (ডিটক্সিফিকেশন) হতে সাহায্য করে।
খ. দেশী ফল: এক বাটি রসালো নরম ফল যেমন তরমুজ, বাঙ্গি, পাকা পেঁপে, সফেদা, কাঁঠাল, আঁতা, গাব, ইত্যাদি বয়স্কদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যজনক হতে পারে। এসব ফল নরম হওয়ায় বয়স্করা চিবিয়ে খেতে পারেন। ফলে খাওয়ার স্বাদও পান আবার প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলসের চাহিদাও পূরণ হয়। বিদেশি বাহারি ফল প্রিজারভেটিভ দিয়ে সংরক্ষন করা থাকে। খাওয়ার সময় এই প্রিজারভেটিভ শরীরে যায়। দেশে যে ঋতুতে যে ফল পাওয়া যায় এরকম টাটকা দেশি ফল বয়স্কদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি হয়।
গ. অঙ্কুরিত মুগ: প্রতিদিন ইফতারে এক টেবিল চামচ পরিমাণ বারো ঘন্টা ভেজানো অঙ্কুরিত মুগ বয়স্কদের স্নায়ুর জন্য খুবই উপকারি। কারণ এতে রয়েছে স্নায়ুর জন্য দরকারি পুষ্টি উপাদান ভিটামিন-বি, জিংক এবং আয়রন, কপার, ম্যাগনেসিয়ামসহ প্রায় সব ধরনের ভিটামিন আর মিনারেলসের সমাহার। এটি নরম হওয়ায় বয়স্করা সহজে খেতে পারেন।
ঘ. মাল্টি গ্রেন বা নানারকম শস্যদানা: বয়স বাড়ার সাথে সাথে হজমশক্তি কমে যায়। অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিকসহ পেটের নানান অসুখ দেখা দেয়। তাই বয়স্কদের ইফতারে তেলে ভাজা খাবার খেলে তাদের হজমের সমস্যা বেড়ে যায়। ভাজাপোড়া খাবারের পরিবর্তে বয়স্কদের জন্য উপযোগি এবং পুষ্টিকর বিভিন্ন মাল্টি গ্রেনসমৃদ্ধ খাবার রাখা যায়। যেমন বিভিন্ন সবজি দিয়ে চালের সুজি রান্না করা যায় ভেজিটেবল পোরিজ। আবার কাউন, যব, ভূট্টার গুড়ার সাথে বিভিন্ন রকম বাদাম দিয়ে একটা পোরিজ করে দেওয়া যেতে পারে। এই পোরিজে নানারকম শস্য, বাদাম ও বীজ থাকায় সব ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।
ঙ. কোন কোন দিন ইফতারে বৈচিত্র্য আনতে মাল্টি গ্রেইন কুকি বা মাফিন, একবাটি ডিম বা মুরগির স্যুপ, এক টুকরো চিনিছাড়া বা কমচিনিযুক্ত কালো চকলেট, এক কাপ টক দই দিলে বয়স্করা আনন্দ নিয়ে খেতে পারেন। এসব খাবার নরম হওয়ায় খেতে কষ্টও হয় না, আবার সারাদিন রোজা শেষে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হয়।
সারাবাংলা/এসবিডিই