Saturday 11 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোজায় প্রবীণদের চাই বাড়তি যত্ন

লাইফস্টাইল ডেস্ক
৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৩৮

বৃদ্ধ বয়সে মানুষ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। রোজায় তাই পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শরীরে ব্যাপকভাবে অণু এবং কোষ ক্ষয় হতে থাকে। আসলে এটা স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া হলেও এর ফলে মানুষের শারীরিক শক্তি এবং মানসিক কাজের ক্ষমতা কমে যায়। যা মানুষকে শিশুর মত যত্নের উপর নির্ভরশীল করে তোলে। এসময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা কমে যায়। শরীর এবং মনে বিভিন্ন অসুস্থতা দেখা দেয়, যেমন শরীর কাঁপা, দুর্বল লাগা, রক্তশূন্যতা, কানে কম শোনা, চোখে ছানি পড়া, কোমরে ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, নার্ভের সমস্যা, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, কিডনির অসুখ, ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার, ডিপ্রেশন ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাদ এবং ঘ্রাণের অনুভূতিও কমে যায়। যার ফলে খাবারে অরুচি এবং অনীহা দেখা দেয়। দাঁতের সমস্যার কারণে শক্ত খাবার চিবিয়ে খেতে পারেন না অনেকে। হজমশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সব ধরনের খাবার হজম করতে পারেন না। এসব বিষয় মাথায় রেখে বয়স্কদের খাবার তৈরি করলে তারা তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারেন, ফলে রোজা রাখা তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক হয়। তাই রোজায় প্রবীণদের বিশেষভাবে যত্ন প্রয়োজন। আসুন দেখে নেই কীভাবে আমাদের পরিবারের প্রবীণ সদস্যের যত্ন নিতে পারি।

বিজ্ঞাপন

ওষুধের ডোজ এবং সময় ঠিক করতে সাহায্য করা

নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে থাকেন। রোজায় সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয় বলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়ার নিয়মে পরিবর্তন আনতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময় পায় না বলে প্রবীণ ব্যক্তিটি নিজে নিজেই তার ওষুধের পরিমাণ ঠিক করছেন এবং মনমত সময়ে খাচ্ছেন। অনেকে আবার বন্ধু বা আত্মীয়ের কাছে শুনে সে অনুযায়ী ওষুধ খেতে থাকেন। এতে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। কারণ, প্রতিটি মানুষের শারীরিক চাহিদা ভিন্ন। ভিন্ন প্রত্যেকের শরীরের প্রক্রিয়ায়ও। তাই অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একই রোগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন ওষুধের ডোজ দেওয়া হয়। পরিবারের বয়স্ক সদস্য, যিনি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট বা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাকে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করার জন্য সাহায্য করলে রোজা রাখা অবস্থায় কোন জটিলতা হবে না।

পানি পানে সাহায্য

বয়স্ক মানুষদের ক্ষুধা-তৃষ্ণা ইত্যাদির অনুভূতি কমে যায়। অনেক কিছু মনে রাখতে পারেন না। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত অল্প অল্প করে পানি বা তরল খেতে হবে এটা সব সময় ওনাদের মনে থাকে না। ফলে রোজায় বয়স্ক মানুষদের পানিশূন্যতায় ভোগার ঝুঁকি থাকে। তাই পরিবারের তরুণ সদস্যরা বয়স্কদের পানি পানির কথা মনে করিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানো যায়। তবে যাদের কিডনির অসুখ রয়েছে, তাদের পানি পানের পরিমাণ চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জেনে নিতে হবে। কিডনি রোগিদের পানি পানের নির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করা থাকে। অতিরিক্ত পানি পান কিডনি রোগির জন্য ক্ষতির কারণ হয়।

খাবার খাওয়ায় উৎসাহ দেওয়া

বয়স্কদের স্বাদ, গন্ধ, দাঁতের সমস্যা, হজমের সমস্যা ইত্যাদির কারণে খাবার খাওয়ায় আগ্রহ কম থাকে। সব রকম খাবার তারা খেতে পারেন না। রোজার সময় বয়স্কদের স্বাদ এবং হজম উপযোগী খাবার মেন্যু তৈরি করলে তারা ইফতার, রাতের খাবার এবং সেহরিতে ঠিক মতো খেতে পারেন। ফলে না খেয়ে বা কম খেয়ে দুর্বল হয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। তাদেরকে তাদের জন্য তৈরি মেন্যুর স্বাদ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বলে উৎসাহিত করলে তারা খাবারে আগ্রহ ফিরে পায়। ফলে রোজায়ও তাদের দৈনিক ক্যালরির চাহিদা ঠিক থাকে।

রোগভিত্তিক খাদ্য

একজন সুস্থ মানুষের খাবার তালিকা আর একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার তালিকা এক হয় না। তাই বয়স্ক মানুষদের রোজার খাবার তালিকা তাদের চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করে নিলে রোজায় অসুস্থ হবার ঝুঁকি কমে যায়।

হালকা শরীর চর্চা

বয়স্ক মানুষের শরীরে রক্ত চলাচলের গতি কম থাকে। ফলে হাতপায়ের বোধ শক্তি কমে যায়। আবার রক্তের কমগতির কারণে শরীরের সব জায়গায় পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভূত হয়। ডায়াবেটিস রোগিদের প্রতিদিন হাঁটা বা শরীর চর্চা করতে হয়। রোজার সময় প্রতিবার খাবার পর পনের মিনিট করে হাঁটলে উপকার হয়। সকালে বা ইফতার শেষে নামাজ পড়ে চেয়ারে বসে কয়েকটি সহজ ইয়োগা অনুশীলন করলেও রোজায় শরীর ভালো থাকে। পরিবারের সদস্যরা হাঁটার কথা মনে করিয়ে দিলে এবং শরীরচর্চার সময় পাশে থেকে সাহায্য করলে তারা উৎসাহ পায়। সকালে বা রাতে প্রতিদিন কিছু সময় তাদের মেডিটেশন করতে উৎসাহ দিলে তাদের মন শান্ত থাকবে।

পর্যাপ্ত ঘুম

পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের প্রতিদিন আট থেকে দশ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। তবে বয়স হলে অনেক মানুষই একটানা ঘুমাতে পারেন না। মাঝে মাঝে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তাদের জন্য ঘুম উপযোগি পরিবেশ রাখতে হবে। ঘুমের সময় উঁচু আওয়াজে টিভি দেখা, মোবাইল চালানো, বাতি জ্বালিয়ে রাখা, জোরে জোরে কথা বলা এসব থেকে সচেতন থাকলে পরিবারের বয়স্ক সদস্যটি আরামে একটানা কয়েক ঘন্টা ঘুমাতে পারেন।

একসঙ্গে সময় কাটানো

অনেক পরিবারে দেখা যায় বয়স্ক সদস্যদের খাবার তাদের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রবীণদের সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি দরকার তা হল পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্য। পারিবারিক সান্নিধ্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার প্রধান ওষুধ। পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সাথে ইফতার এবং সেহরি করা, তাদের সাথে নিয়ে ইবাদত-বন্দেগী ও গল্পগুজব করলে তাদের মন এবং শরীর ভালো থাকে।

সারাবাংলা/এসবিডিই

রোজায় প্রবীণদের চাই বাড়তি যত্ন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর