ভারী ব্যায়ামে হতে পারে কম বয়সীদের হার্ট অ্যাটাক
৫ নভেম্বর ২০২১ ১০:০০ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২১ ১০:০৯
ইদানিং প্রায়ই বয়স চল্লিশ পেরোনোর আগেই হার্ট অ্যাটাক বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রতিটি ঘটনাই মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবার ও কাছের মানুষের জন্য অনেক বেশি বেদনার। চিকিৎসকরা বলছেন, এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঝুঁকি এড়াতে হার্ট বা হৃদযন্ত্র কোন অবস্থায় আছে তা না জেনে ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়।
তারা আরও বলছেন, একজন মানুষকে যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে ওষুধ দেওয়া না হয়, তাহলে সেই ওষুধটিই হয়ে উঠবে প্রাণঘাতী ‘বিষ’ হিসেবে। ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেরকমই।
কিছু কিছু ব্যায়াম সুস্থ মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। কোনো কোনো সময় এটি মারাত্মকও হতে পারে। তাই ভারী ব্যায়াম করার আগে শারীরিক সুস্থতা পরীক্ষা করে নেওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। কারণ কিছু কিছু মানুষের জন্য ব্যায়ামও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের কারণ।
ধমনীর ভাল্ব ছোট হলে এর কারণে হৃদযন্ত্রের প্রবাহে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কারণে ভারী ব্যায়ামের পর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে। তাই ব্যায়ামের আগে অবশ্যই শারীরিক সুস্থতা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত ব্যায়াম ও হৃদযন্ত্রের সুস্থতা: যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে কিছু বিষয়ে কোনোভাবেই অবহেলা করা চলবে না। যেমন—যদি ব্যায়াম করার সময় কারো মাথা ঘোরানো বা হাল্কা মাথা ব্যাথার অনুভূতি হয়, তাহলে অবশ্যই শারীরিক সুস্থতা পরীক্ষা করা উচিত। অতিরিক্ত হাইপারটেনশনের রোগীদের ব্যায়াম শুরুর আগে অবশ্যই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
পরিবারের কেউ হঠাৎ করে মারা গেছেন এমন ঘটনা থাকলে অন্যান্য সদস্যরাও এই জিন বহন করে থাকতে পারেন। তাই অবশ্যই ইসিজি করে নিন।
আপনার যদি বুকে অস্বস্তি হয় বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা করে শারীরিক সুস্থতা যাচাই করে নিন।
কর্মক্ষমতা বাড়ায় এমন ওষুধগুলো হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপকে অনিয়মিত ও হঠাৎ করে বন্ধ করে দিতে পারে।
হার্টের সমস্যা এখন শুধুমাত্র বয়স্কদের নয়
আগে শুধুমাত্র বয়স্কদেরই হার্টের সমস্যা হয় বলে ধরা হতো। বিশেষ করে ৬০ এর বেশি বয়সীদেরই এই ঝুঁকি বেশি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এ চিত্র পাল্টেছে এবং কম বয়সীদের এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি বাইরে থেকে দেখতে দিব্যি সুস্থ একজন মানুষেরও এমন কোনো রোগ থাকতে পারে যা সম্পর্কে তিনি নিজেও জানেন না কিংবা কখনো বুঝতে পারেন নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানসিক চাপ, যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ঘুম কম হওয়া, অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ এবং সুস্থ জীবনযাপন না করতে পারা।
করোনাকালে ওয়ার্ক ফ্রম হোম পরিস্থিতির সময় মানুষকে অফিসে যেতে হতো এবং অনেককে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো। এসব কারণে দিনের অনেকটা সময় শরীর কর্মক্ষম থাকত। কিন্তু মহামারি শুরুর পর থেকে প্রায় সবারই স্বাভাবিক রুটিন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। লকডাউন শেষ হয়ে গেলেও তরুণ ও যুবকরা কম্পিউটার বা টিভির সামনে বসেই বেশিরভাগ সময় কাটাতে পছন্দ করছেন।
আবার কারও পরিবারে যদি কম বয়সে কারো হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অল্প ব্যায়াম ও সুস্থ জীবনযাপন করা খুবই ভালো অভ্যাস। কিন্তু অবশ্যই এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। শারীরিক সুস্থতা পরীক্ষা করার পরই ভারী ব্যায়াম করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
যে কারণে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা জরুরি
যখন হার্টের সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে, তখন কিছু ক্ষেত্রে রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় থাকে। চিকিৎসকরা বলেন, পরিশ্রমের কারণে বুকে অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট হলে হার্টের সমস্যা আছে বলে ধরা হয়। তবে এর জন্য কিছু পরীক্ষা করতে হবে।
হার্টের সমস্যা আগে থেকে বোঝার জন্য অবশ্যই নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এর মধ্যে খুব সাধারণ কিছু পরীক্ষা হলো— ইসিজি, টুডি ইকোকারডায়াগ্রাম, স্ট্রেস টেস্ট, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি। চল্লিশোর্ধ বয়সীদের এসব পরীক্ষা বছরে একবার বা দুই বছরে একবার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আবার যাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে তাদের ৩০ বছর পর থেকেই এসব পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
সারাবাংলা/এসএসএস