রাস্তার অনাথ কুকুর দত্তক নেবেন যেসব কারণে
২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:১১ | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০৪
পোষা প্রাণীর মধ্যে জনপ্রিয়তার তালিকায় শীর্ষে অবস্থান কুকুরের। বন্ধুবৎসল এ প্রাণী সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষের সঙ্গী। বিজ্ঞান বলছে, মানুষের আদি সঙ্গী হচ্ছে কুকুর। যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী এক গবেষণা করে জানিয়েছেন— প্রায় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার বছর আগে মানুষের পোষ মেনেছিলো কুকুর। কোনো কোনো গবেষণার দাবি কুকুর মানুষের সঙ্গী হয়েছে আরও আগে।
প্রায় সব যুগেই সব সভ্যতায় মানুষ কুকুর পুষতো। আধুনিক সময়েও পোষা প্রাণীর মধ্যে কুকুর জনপ্রিয়। অনেকেই বাড়িঘরে নিত্য-সঙ্গী হিসেবে কুকুর পুষতে ভালোবাসেন। গ্রামে কুকুরকে আবার বড়ির পাহারাদারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অনেকের কাছেই পোষা কুকুর পরিবারের সদস্যের মতো বা নিখাদ বন্ধু হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন- পোষা বেড়াল ও কুকুরকে সুস্থ রাখতে যা মেনে চলবেন
তবে আজকাল এই অতি বন্ধুবৎসল প্রাণীটি পড়েছে মহাবিপদে। এই প্রাণীটির বসবাস মূলত লোকালয়ে। কিন্তু লোকালয়ে মানুষেরই যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখন এই প্রাণীটির কথা আর ভাবছে কে। অনেকে আবার এই প্রাণীটিকে হুমকি মনে করে আঘাত করছে, কখনও কখনও মেরেও ফেলা হচ্ছে।
লোকালয়ে যেসব কুকুর ঘরহীন হয়ে ঘুরছে সেগুলোকে অনাথ বা রাস্তার কুকুর বলা হয়ে থাকে। অনাথ বা রাস্তার এসব কুকুর এক সংকটময় সময় পার করছে এখন।
প্রাণীর দুর্দশা দেখে যাদের মন কাঁদে তারা হয়তো অনাথ কুকুর দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তবে অনেকেই কুকুর পুষতে চাইলেও রাস্তার কুকুর পোষা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন। রাস্তার কুকুর ঘরে নিয়ে আসার বেলায় কিছু শঙ্কা কাজ করে— এসব কুকুরে রোগ-বালাই থাকবে কি-না, বন্ধুসুলভ হবে কি-না, পোষ মানবে কি-না ইত্যাদি। তবে বাস্তবতা হলো কুকুর দত্তক নিতে চাইলে রাস্তার কুকুর নির্দ্বিধায় নেওয়া যায়। রাস্তার কুকুর পোষার পক্ষে কয়েকটি কারণ নিচে দেওয়া হলো—
কুকুর মানুষকে প্রচণ্ড ভালোবাসে
কুকুরকে মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু বলা হয়ে থাকে। এই কথাটার প্রচলন এমনি এমনি হয়নি। মানুষের আয়ুষ্কাল থেকে কুকুরের আয়ুষ্কাল কম, তবে পোষা কুকুর এই কম সময়েও আপনাকে যে মধুর স্মৃতি দেবে তা সারাজীবন লালন করে রাখতে বাধ্য হবেন। যখন একটি অনাথ কুকুর দত্তক নেবেন তখন মূলত আপনি তাকে তার জীবন রক্ষা করার একটা ব্যবস্থা করে দিলেন। রাস্তায় রাস্তায় বাস করা প্রাণীটির করুণ দশা দূর করলেন। একটি কুকুর তার প্রতি আপনার এই মহৎ কাজ কখনই ভুলবে না। আপনার জীবনকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ রাখতে বাকিটা সে নিজেই করবে।
তারা দারুণ স্মার্ট
জন্মের পর থেকেই অনাথ বা রাস্তার কুকুর কঠিন দিন পার করতে থাকে। অনাথ কুকুরের জীবন এতই কঠিন যে এদের বেশিরভাগই পূর্ণবয়স্ক হওয়ার আগে মারা যায়। যেসব কুকুর পূর্ণ বয়স পর্যন্ত বেঁচে যায় সেগুলো হয়ে ওঠে প্রচণ্ড বুদ্ধিমান। এদের বাস্তব জ্ঞান প্রখর। পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে দারুণ জ্ঞান রাখে এরা। যেসব কুকুর রাস্তায় টিকে থাকে এরা প্রচণ্ড স্মার্ট হয়ে ওঠে।
এরা খুবই সুন্দর
রাস্তায় বসবাসকারী বেশিরভাগ কুকুরই অপুষ্টিতে ভোগে ও নোংরা থাকে। কিন্তু একবার যদি কেউ এদের যত্ন নেওয়া শুরু করে তবে এরা অন্য পোষা কুকুরের মতোই সুন্দর ও আদুরে হয়ে ওঠে। তবে কুকুর দেখতে কিরকম সে বিবেচনায় তো আর কেউ কুকুর দত্তক নেন না, তবুও রাস্তার কুকুরগুলো যত্ন-আত্তি পেলে চমৎকার হয়ে ওঠে। যারা অপুষ্ট, রোগা কুকুর দত্তক নিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা শুনুন, দেখবেন তাদের কুকুরগুলোর চেহারা কিভাবে পালটে গেছে।
রাস্তার কুকুর অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাস্থ্যবান
রাস্তার কুকুর বা ঘরহীন কুকুর প্রায়ই মিশ্র জাতের হয়ে থাকে। অর্থাৎ এরা খাঁটি জাতের হয় না। তাই তাদের বংশগত বা জেনেটিক্স রোগ উত্তরাধিকারী সূত্রে বহন করার ঝুঁকি কম। ফলে রাস্তার কুকুর অন্যান্য কুকুরের চেয়ে স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকে। হিপ ডেপ্লেসিয়া, হাঁটু ও মেরুদণ্ডের রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার রাস্তার কুকুরের কম। যদিও এ ব্যাপারে যথেষ্ট গবেষণা এখনও হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি— কুকুরের সাধারণ জেনেটিক্স রোগগুলো খাঁটি জাতের চেয়ে রাস্তার কুকুরের মধ্যে কম।
দায়িত্বজ্ঞান বাড়ে
আসলে বাসা-বাড়িতে কুকুর পোষা খুব একটা সহজ কাজও নয়। একটি প্রাণকে লালন-পালন করার জন্য যথেষ্ট সতর্কতা প্রয়োজন। আপনাকে অবশ্যই সময়-জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হতে হবে, নাহলে আপনার প্রিয় বন্ধুটি কষ্ট পাবে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠা, বাইরে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া, নিয়মিত খাবার দেওয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গেই করতে হয়। তাই একজন মানুষ যদি কুকুর পোষেন তবে তার মধ্যে সময়জ্ঞান বা দায়িত্বজ্ঞানের মত সদগুণাবলি আরও প্রখর হয়।
– ইন্ডিয়াডটকম অবলম্বনে