তারুণ্যের ঈদ ফ্যাশন
৩০ মে ২০১৯ ১১:২৩ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১২:৫৯
সাধারণত দেখা যায় তরুণ-তরুণীরা বেশ ফ্যাশন সচেতন হন। বাজারে কখন কি ডিজাইনের পোশাক আসলো তাই নিয়ে তাদের আগ্রহ থাকে সবার থেকে বেশি। ঈদের বাজার ঘুরেও তাই দেখা গেল, তাদের উদ্দেশ্যেই সাজানো পোশাকের সমাহার বেশি।
এবার ঈদে অধিকাংশ ফ্যাশন হাউজ নিজস্ব থিম অনুযায়ী পোশাকে ডিজাইন ও রঙ ব্যবহার করেছে। তবে যেহেতু গরম তাই প্রতিটি ফ্যাশন হাউজ পোশাকে আরামের দিকটি বিবেচনা করেছে। এজন্য সুতি, লিনেন, সিল্ক ইত্যাদি আরামদায়ক কাপড়ের প্রাধান্য বেশি।
তরুণীদের পোশাক
শাড়ি, সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি এবার তরুণীরা পাশ্চাত্য ঢংয়ের পোশাক বেশ পছন্দ করছেন। তরুণীদের কুর্তি, টপস ইত্যাদি পোশাকের ডিজাইন ও কাটে এসেছে পরিবর্তন। কামিজে অনেক ধরনের লেয়ারের ব্যবহার দেখা গেছে। এবারও ঈদ ফ্যাশনে প্রাধান্য পেয়েছে লম্বা প্যার্টানের কামিজ। টপস বা শর্ট কামিজের সাথে হেরেম প্যান্ট, পালাজ্জো ও ধুতি পায়জামা পছন্দ করছেন মেয়েরা।
ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিবিয়ানা ফ্যাশন হাউজের স্বত্তাধিকারি লিপি খন্দকার বলেন, ‘টপস, ফতুয়া, সালোয়ার কামিজ, ব্লাউজ, কুর্তি যাই হোক না কেন, মেয়েরা এখন অসমান্তরাল কাটিং পছন্দ করেন বেশি। আর গরমের ঈদ হওয়ায় সবাই চেষ্টা করছেন ঈদের পোশাক যেন আরামদায়ক হয়। সারাদিন স্বস্তি পেতে হালকা রঙের পোশাকই প্রাধান্য দিচ্ছেন ক্রেতারা।’
ফ্যাশন হাউজ লা রিভের বসুন্ধরা শাখার একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, এবার কুর্তি আর টপসের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি গাউন স্টাইলের কামিজ, লম্বা প্যাটার্নের ফ্রক ও কামিজও পছন্দ করছেন অনেকে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল ফ্যাশন হাউজগুলো কামিজ, কুর্তি ও টপসে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, মেশিন এমব্রয়ডারি, স্কিন প্রিন্ট ও সুতার কাজের মাধ্যমে ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া, জামদানি মোটিফের ব্যবহারও দেখা গেছে।
মেয়েদের কামিজ হাতার ডিজাইনেও এসেছে ভিন্নতা। ঝালর হাতা, টিউলিপ হাতা, বেল স্লিভ, সার্কুলার ফ্লন স্লিভ, ড্রপ শোল্ডার, কোল্ড শোল্ডার, টাই শ্লিভ হাতা ক্রেতাদের মন কেড়েছে।
ফ্যাশন হাউজগুলোও তাই পোশাকের হাতায় বেশি জোর দিয়েছে। এক্ষেত্রে পোশাকের বাকি অংশ একেবারে সাধারণ রাখা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে ফ্রিল ডিজাইনের হাতা।
লিপি খন্দকার বলেন, ‘সালোয়ার কামিজ এখন কেউ তেমন পরছেন না। স্কার্টের সাথে টপস, ধুতি স্টাইলের ট্রাউজার, প্যান্টের সাথে টপস এগুলোই বেশি চলছে।’
এবার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ধারার মিশেলে তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু পোশাক। মেয়েদের জন্য আছে জিপসি, শর্ট টপস, চেইন দেওয়া সালোয়ার কামিজ ইত্যাদি। ঈদ উপলক্ষে কিছু ফ্যাশন হাউজ তৈরি করেছে লন ফরমাল। এগুলো দেখতে লং কোটির মতো। তবে দাম একটু বেশি। ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এগুলো।
ঈদে অধিকাংশ তরুণী পোশাকে উজ্জ্বল ও গাঢ় রং পছন্দ করেন। তাই গরমের এই ঈদে অনেক ফ্যাশন হাউজ উজ্জ্বল রঙ প্রাধান্য দিয়েছে।
ফ্যাশন হাউজগুলোতে এবারে সুতি ও লিনেনের সংগ্রহ বেশি। বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের কে ক্র্যাফটের শাখা ব্যবস্থাপক নাসির হোসেন জানান, ‘গরমে আরামের কথা মাথায় রেখে হালকা রঙ আর সুতি কাপড়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’ এখানে সুতি শাড়ি, সিঙ্গেল কামিজ ও টপস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।
একে গরম তার উপর বৃষ্টির সম্ভাবনা, তাই এবারের ঈদে শাড়ি পরতে চাইছেন না অনেক তরুণীই। তবে ‘শাড়িতেই নারী’ কথাটি উপেক্ষা করার কোন উপায় নেই। তাই ঈদে শাড়ি কিনতে না পারলে ‘পোশাক কেনাই হয়নি’ বলে মনে হয় অনেকের।
বসুন্ধরা শপিং সেন্টারে কেনাকাটা করতে আসা রুনা পারভীন (২৬) বলেন, ‘শাড়িতেই মেয়েদের বেশি সুন্দর দেখায়। তবে এই গরমে শাড়ি পরতে কষ্ট হবে ভেবে কামিজ বেছে নিয়েছি।’ তিনি শাড়িও কিনেছেন, তবে তা অন্য সময় পরার জন্য।
কয়েকটি ফ্যাশন হাউজে কথা বলে জানা গেল, মসলিনে হাতের কাজ করা শাড়ির চাহিদা এবার বেশি। কাতান শাড়িও অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকছে। সিল্ক কাতান, চেন্নাই কাতান, বেনারসি কাতানও কিনছেন অনেকে। গরমের কথা মাথায় রেখে এমব্রয়ডারি, স্কিন প্রিন্ট করা লিলেন কি সুতিও কিনছেন অনেকে। জামদানি, টিস্যু কাপড়ে ডাই করা শাড়িও কিনছেন অনেকে।
লিপি খন্দকার বলেন, ‘অনেক মেয়েই ঈদে শাড়ি কিনতে চান। এখন মসলিন, সরু পাড়ের কাপড় চলছে বেশি। তবে ব্লাউজে বেশি কাজ পছন্দ করছেন সবাই। এজন্য ব্লাউজে অনেক ধরনের ডিজাইন করা হচ্ছে। লুস ব্লাউজ, জ্যাকেট স্টাইল, হাতে কুচি, রুমাল কাট কিংবা সরু পাড়ের ব্লাউজ এখন জনপ্রিয়।’
শাড়ির ধরনভেদে ফ্যাশন হাউজগুলোতে ১ হাজার ৫০ থেকে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত শাড়ি বিক্রি করা হচ্ছে।
শুভ্রতার প্রতীক সাদা। যদিও ঈদে সাদা পোশাক পরতে চাইবেন না। তবুও সাদা মসলিন কাপড়ে সাদা সুতা দিয়ে হাতে ডিজাইন করা শাড়িতেই মুগ্ধ হচ্ছেন কোন কোন ক্রেতা। এমনই একটি শাড়ি কিনলেন বুবলি। তিনি বলেন, সাদা এমনিতেই তার খুব প্রিয়। সাদা মসলিন শাড়ি দেখার পর আর লোভ সামলাতে পারেননি।
তরুণদের পোশাক
ঈদ পোশাকে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে থাকে পাঞ্জাবি। এই ঈদে সিল্ক, এন্ডি, কটনের পাঞ্জাবিতে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। পাশ্চাত্যের সাথে দেশীয় ঘরানার মিশিলে তৈরি পাঞ্জাবির চাহিদাই বেশি। সুতার কাজ, এমব্রয়ডারি, কটন, সিল্ক সব ধরনের কাপড়ের পাঞ্জাবি এসেছে বাজারে। সাধারণ বাজেটের মধ্যে কাবলি পাঞ্জাবিও পাওয়া যাচ্ছে। কেনা যাবে ৩ হাজার টাকার মধ্যেই।
কোটিয়ার বা টুইনস পাঞ্জাবি ক্রেতারা পছন্দ করছেন বেশি, জানালেন লা রিভ ফ্যাশন হাউজের একজন বিক্রয়কর্মী। গরম বেশি হওয়ায় পাঞ্জাবির পাশাপাশি টি-শার্ট, হাফ হাতা শার্ট, ফতুয়াও কিনছেন অনেকে। সঙ্গে জিনস বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট তো থাকছেই। কেউ কেউ চাপা প্যান্টও কিনছেন। ক্যাজুয়াল শার্টে চেকের ব্যবহারও বেশি দেখা গেছে এবার ঈদ ফ্যাশনে।
সম্প্রতি স্নাতকোত্তর শেষ করা শাহরিয়ার শুভ্র ঈদের পাঞ্জাবি কিনতে বসুন্ধরা মার্কেটে এসেছেন। এবারের ঈদে তিনি কিনতে চান হালকা ডিজাইনের পাঞ্জাবি। এই ধরনের পাঞ্জাবি ঘরোয়া অনুষ্ঠান, আড্ডা কিংবা ঘুরতে গেলে স্বচ্ছন্দ্যে পরা যায়।
এবার ঈদে পাঞ্জাবির বোতামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফ্যাশন হাউজ অঞ্জনসে দেখা গেল পাঞ্জাবীতে ঝিনুকের বোতামের ব্যবহার। দেখতে পুরনো ধাঁচের মনে হলেও ফ্যাশনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এমন ডিজাইন। ভিসকস ফতুয়ার প্রতিও আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকে।
লিপি খন্দকার বলেন, ‘ঈদে ছেলেদের মূল পোশাক হলো পাঞ্জাবি। তাই আরামদায়ক ও সবসময় ব্যবহার করা যায় এমন পাঞ্জাবি ছেলেরা এখন পছন্দ করে বেশি। পাঞ্জাবিতে কনট্রাস্ট ও বোতামে বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ এবার পছন্দ করছেন ছেলেরা।’
কিছু ফ্যাশন হাউজ ছেলেদের পোশাকে ব্যবহার করেছে প্রাকৃতিক রং। এছাড়া জামদানি মোটিফের বাহারি পাঞ্জাবি ও কাঁথা স্টিচের পাঞ্জাবিও ক্রেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ডালিমের খোসা, হলুদ, হরিতকি, পেঁয়াজ ইত্যাদি প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার হয়েছে ছেলেদের পোশাকে।
ফ্যাশন হাউজগুলোতে পাঞ্জাবির ধরনভেদে দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা।
কিশোর-কিশোরীদের ঈদ ফ্যাশন
কিশোররা চায় নিজস্ব ঢংয়ে পোশাক পরতে কিংবা হাল আমলের ফ্যাশনের সাথে তাল মেলাতে। টিনএজারদের কথা মাথায় রেখে ফ্যাশন হাউজগুলো তাই ভিন্ন ধাঁচের পোশাক তৈরি করেছে। জামার হাতা, ঘের কি দৈর্ঘ্যে এসেছে পরিবর্তন। ঈদ সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ উপলক্ষ বলে টিনেজারদের পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে গাঢ় রঙ।
ফ্যাশন হাউজগুলো ছাড়াও রঙ বেরঙের ঈদের কাপড়ের পশরা সাজিয়ে বসেছে নগরের বিভিন্ন বিপণীকেন্দ্রগুলো। একটু কম দামের মধ্যে পোশাক কিনতে চাইলে নগরের নিউমার্কেট, গাউছিয়া, আজিজ সুপার মার্কেট, মৌচাক, মালিবাগসহ নানা জায়গায় বিপণি কেন্দ্রগুলো ঈদ পোশাকের পসরা খুলে বসেছে। পোশাকের ধরনভেদে পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়, সিঙ্গেল কামিজ ও টপস ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শাড়ি ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা, থ্রি পিস ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়।
বছর ঘুরে ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। বয়স ভেদে সবার চাই নতুন পোশাক। তবে ঈদের নতুন পোশাক ঘিরে তরুণ-তরুণীদেরই আগ্রহ থাকে বেশি। নতুন ডিজাইনের আরামদায়ক পোশাকে জমে উঠুক এবারের ঈদ।
ছবি- কে ক্রাফটস, লা রিভ ও রঙ বাংলাদেশ
সারাবাংলা/টিসি/আরএফ