বয়স কমাবেন কীভাবে?
১১ মার্চ ২০১৯ ১৫:৩০ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ১৭:৫০
রুখসানা কাঁকন।।
সময়ের সাথে বয়স বদলায় , চেহারায় পরিবর্তন ঘটে। মানুষের বয়স যাই হোক না কেন মানুষ নিজেকে সুন্দর, সতেজ আর সাবলীলভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করতে পারে। মানুষ কিছু ভুল অনবরত করতে থাকে তাই তাকে তার স্বাভাবিক বয়সের থেকে বয়সী দেখায়। অন্যদিকে একজন বেশি বয়সী মানুষকে সতেজ , তরুণ আর ঝরঝরে দেখায়।
কারণ কি ? কারণ আপনি আপনার প্রাত্যহিক জীবনে কিছু ভুল করছেন , যে ভুলগুলো শুধরাতে আপনি কিছু কাজ করতে পারেন। শুধু একগাদা মেকআপ মাখলে তরুণ দেখাবে না. সময় এসেছে নিজেকে গুছিয়ে নেবার , নিজের জীবনে পরিবর্তন আনার, বয়সকে জয় করার।
আপনাকে সুচারু , সুন্দর দেখাবার সম্পূর্ণ ক্রেডিট আপনার হাতে নির্ভর করছে। কি পুরুষ , কি নারী আয়নায় মুখ দেখুন আর বলুন আমি চিরতরুণ, চির সুন্দর। তবুও কিছু টিপস কাজে লাগে।
কিছু পুরুষ বা নারী আছে তারা একই ধারণা আর বিশ্বাসের ভেতর বাস করেন। তারা ভাবেন তাদের একটাই স্টাইল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে স্টাইলের পরিবর্তন করা যায় এটা তাদের কাছে অকল্পনীয়। তারা বাস করে অতীতে।
মনে রাখবেন FASHIONS FADE , STYLE IS ETERNAL.
একই পুরোনো স্টাইল পোশাকের ক্ষেত্রে নিজেকে ইচ্ছে করে বুড়ো সাজানো হয়।
যেমন ধরেন বুড়ো হলে সবুজ, লাল , বেগুনি পড়া যাবে না , বুড়ো হলে ঢোলা প্যান্ট পড়তে হবে। একজন ৪০ বা ৫০ পার হওয়া মানুষ রং বদলাতে পারে নানাভাবে। রুচিশীল হয় হালকা রঙে ফুটে উঠে তা এক মান্ধাতা আমলের চিন্তা। আমার রঙের সাথে নিজের সমঝোতাটা কতদূর এটাও বুঝতে হবে।
আসুন নিজেকে ভাবি এভাবে :
১.নিজের কাপড়ের আলমারিতে তাকানো:
বয়সের সাথে সাথে নিজের কাপড়ের আলমারি বদলানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো আলমারি ফেলে দিতে বলছি না । কাপড়ের আলমারির কাপড়গুলোর দিকে তাকান। হয়তো পুরোনো জামার স্টাইলটা ভালো লাগছে না ওটা কাউকে দিয়ে দিন কিংবা জামাটা পড়ে দেখুন এটা অন্য একটা একটা প্যান্ট বা কোর্টের সাথে কম্বাইন্ড করা যায় কিনা। যেমন ছেলেদের ক্ষেত্রে ক্ল্যাসিক সাদা শার্টটিকে অন্য একটা নতুন স্টিলের কালো প্যান্ট কিনে তার সাথে মিলিয়ে ফেলা যায়। মনে রাখতে হবে দিনের পর দিন যে ব্র্যান্ড আপনি কিনে যাচ্ছেন, প্রয়োজনে তা বদলাতেই আপনি পারেন। আপনি আপনার পার্সোনালিটির সাথে পোশাক মিলিয়ে অবশ্যই পড়বেন। কিন্তু যে পোশাকটা বেমানান বা শরীরের মাপের সাথে মিলছে না তা পড়ার চেয়ে আলমারি থেকে বিদায় করা ভালো। আমাদের বয়সের সাথে শরীরি পরিবর্তন ঘটে। একই সাইজের জুতা, অন্তর্বাস শরীরের মাপের সাথে না মিললে তা বদলে ফেলা জরুরি।
২. সোজা হয়ে বসা :
মেরুদন্ড সোজা করে বসা খুবই জরুরি। শুধুমাত্র শারীরিক কারণে নয় সোজা হয়ে বসা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী তো লাগবেই আর বয়সের ভারে কুঁজো মানুষ মনে হবে না। আপনার মাথা উঁচু ব্যাক্তিত্ব আপনার বয়স আর পরিধানের বস্তু ভেদ করে মানুষের চোখের সামনে একজন শক্তপোক্ত মানুষের কাঠামো দাঁড় করায়।
৩. দাঁতের যত্ন নিন :
দাঁতের ডাক্তারের কাছে মাসিক চেক আপ সম্ভব হলে করে নিন। প্রতিদিন দাঁত মাজা , ফ্লস দিয়ে দাঁতের গোড়া পরিষ্কার , অতিরিক্ত পান সুপারি না চিবানো বা পারলে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়া উচিত। সুস্থ দাঁতের হাসি আপনাকে তরুণ করে।
৪.খেয়াল করুন আপনি কী খাচ্ছেন বা পান করছেন :
অনেক চিনি দিয়ে কফি বা চা খাওয়ার দরকার কি? চা বা কফিতে চিনি বাদ দিন বা চিনির বিকল্প ব্যবহার করুন। স্ট্যাভিয়া নাম একটি উদ্ভিজ চিনি আছে যা দিয়ে আপনি মিষ্টি জাতীয় যে কোন খাবার বানাতে পারেন। এক গাদা পোলাও খেয়ে সম্পূর্ণ এক বোতল কোক গলায় ঢেলে দেওয়া বুদ্বিমানের কাজ না। অনেকে বলে আমি রুটি খাই। মনে রাখবেন রুটি মানে কার্বোহাইড্রেট। ৪০ এর পড়ে চর্বি, শর্করা, মিষ্টি শরীরে বার্ধক্য ডেকে নিয়ে আসে। ভেবে খান ভেবে পান করুন। অতিরিক্ত অ্যালকোহল আর ধূমপান শরীরের সর্বনাশ ডাকতে পারে। আপনাকে সব কিছু খেতে বলা হয়েছে কিন্তু লিমিট ক্রশ শব্দ ভুলবেন না। জরিদার শাড়ি গয়না পরে, কোট বুট লাগিয়ে আপনাকে বরং হাঁসফাঁস করা বুড়োটে দেখাবে। পরিমিত খাবার আপনার চামড়ার উপরও প্রভাব ফেলে। একটু ভাবনা আপনাকে আত্মপ্রত্যয়ী আর সুন্দর মানুষ তৈরি করবে।
৫. চুলে অতিরিক্ত শ্যাম্পু না করা :
চুল প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে আপনি চুলের প্রাকৃতিক তেল হারিয়ে ফেলবেন আর এতে চুল ভাঙা শুরু করবে। চুল বেশি ভাল না করে ধুলে যেমন চুল যেমন নষ্ট হয়ে যায় তেমনি প্রতিদিন শ্যাম্পু করা চুলের জন্য খুব ক্ষতিকর। চুলের শুস্কতা তৈরি করে খুশকি।
মাঝে মাঝে চুলের স্টাইল আর রং বদলে আমার মনের বার্ধক্যের বিষন্নতা কমিয়ে আনতে পারে। প্রফেশনাল হেয়ার ড্রেসার আপনাকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
৬.চামড়ার যত্ন :
মুখের বলিরেখা স্বাভাবিক আর প্রাকৃতিক কিন্তু আপনি আপনার চামড়া শুষ্কতা আর ক্লান্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন। চামড়ার উপযোগী ক্রিম ব্যবহার করুন। চামড়ার যত্নে নারকেল বা অলিভ অয়েল খুব কাজে আসে। মেক আপ যত্ন সহকারে না তুললে চামড়ার ক্ষতি হতেই থাকে। বয়স বাড়ছে তাই খাবারের পাশাপাশি কিছু সাপ্লেমেন্টারি ভিটামিন নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন সি, ডি, ম্যাগনেসিয়াম আর ক্যালসিয়াম উল্লেখযোগ্য।
৭. পানি পান করুন ;
আপনার চামড়ায় সতেজতা আনতে একমাত্র প্রধান উপাদান পানি। আপনার শরীরের মেদ থেকে আরম্ভ করে পানি আপনার ক্লান্তি আর ক্লেদ সবই দূরে রাখবে। আপনার বয়স এই পানি দশ বছর কমিয়ে দিতে পারে। শুষ্ক তাজা চেহারা মানে আপনার শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক আছে। প্রতিদিন ২ লিটার পানি পান করুন।
৮.শরীরচর্চা করুন :
জিমে যে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। নিজের ঘরের ভেতর ইউটিউবে ভিডিও দেখে সহজে শরীর চর্চা করা যায়। দামি যন্ত্র কেনার দরকার নাই, বাতাসে হেঁটে আসুন কিংবা ঘরে নিয়মিত ইয়োগা করুন। লাল মাংস কম খান , সবুজ তরিতরকারি , মাছ, ডিম আপনার খাবার টেবিলের আকর্ষণ হোক। এক ঘন্টা টানা শরীরচর্চা আপনাকে আয়নার সামনে সুন্দর করে তুলবে। শরীরচর্চা শুধুমাত্র শারীরিক নয় আপনার মানসিক শক্তি ফিরিয়ে আনে। আপনার ওজন কমানো মূখ্য হলেও শরীরচর্চা আপনার প্রাণশক্তি বাড়াবে।
৯. আপনি ভালো ঘুমান তো ?
ভাল ঘুম আপনার ভেতরের তরুণ হরমোনটিকে জাগিয়ে তোলে। আর এই হরমোনের অভাবকেই বলে HGH মানে HUMAN GROWTH HORMONE যা ঘুমের অভাবে তৈরি হয় যা আপনার মাসল কমিয়ে দেয়, ঝুলন্ত চামড়া তৈরি করে। প্রতিদিন নিদেনপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমান।
১০. আপনার আচরণ :
আপনার আচরনে আপনার বয়স বিচার করা যায় অনেক ক্ষেত্রে। আপনি যদি রেগে থাকেন, মুখের হাসি ভুলে যান, পজিটিভ ভাবনা ভাবতে না পারেন তবে আপনার বার্ধক্য বেশি দূরে নয়। বয়সকে ঘৃণা করা নয়, বয়সকে জয় করুন। সকালের সূর্য কে অভিবাদন জানান। প্রতিদিন বলুন- আমি বেঁচে আছি , আমি এই পৃথিবীর আলোকিত, চিরসবুজ মানুষ ।
মডেল – তানিয়া আহমেদ, আঁখী আলমগীর ও রুনা খান
ছবি- আশীষ সেনগুপ্ত
সারাবাংলা/ এসএস