আশ্বিনের হাওয়ায় শীত আসছে ছাদবাগানে
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:০০ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:০৯
শরতের নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা সাদা মেঘের ভেলা ভাসতে ভাসতে আশ্বিনের হালকা হিমেল বাতাস বয়ে আনে। শীতের সবজি চাষাবাদের জন্য চাষীরা সব রকমের প্রস্তুতি শেষ করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটায় এই আশ্বিনের প্রথম ভাগে। ছাদবাগানে যারা শীতের সবজি ফলাতে চান তাদের জন্যও এখন বাড়তি সময় প্রয়োজন হয়ে পড়ে শীতের নানা রকমের সবজি বা ফুল চাষের জন্য। তাছাড়া যেসব ফল গাছ বা ফুলগাছগুলো পুরো গ্রীষ্ম আর বর্ষা জুড়ে ফলন দিয়েছে, ফুল ফুঁটিয়েছে তাদেরকেও সময় দিতে হয় এই সময়।
আমার ছাদ বাগানের জামরুল, আতা, শরিফা, আম, কামরাঙার মতন ফলগাছগুলোর বাড়তি ডাল ছেঁটে দিয়েছি। গাছের গোড়ার মাটি আধ হাত সরিয়ে তাতে নতুন করে জৈবসার আর মাটির মিশ্রন দিয়েছি গত সপ্তায়। বাড়তি মাটিগুলো খালি টবগুলোতে আরো কিছু জৈবসার মিলিয়ে শীতের ফুল বা ক্যাপসিকাম, লেটুস, জুকিনি, ফুলকপি, মরিচ বুনবার জন্য তৈরী করে ফেলেছি। তিন চারটা গামলা খালি ছিল সেগুলোতে শাক ছিটাবো বলে ভালো করে মাটি ঝুরঝুরা করে রেখেছি। বড় ড্রামগুলোতেও গাছের গোড়ার পাশের মাটিতে আমি শাক চাষ করে থাকি। আশ্বিনের এই সময়গুলো কেমন যেন এক উৎসব মুখরতায় ভরে থাকে ছাদবাগানটা। নতুন মাটির বস্তা, জৈবসার, বাঁশের কঞ্চি, নেট, টব, দড়ি, বীজ, চারা সব মিলিয়ে দারুণ এক ব্যস্ত আর ভরা সময় পার করে থাকি আমি।
গত বছরের মাচাঙগুলো রোদে বৃষ্টিতে পুড়ে আর ভিজে একদম নরম হয়ে গিয়েছিল। তাই বাঁশের কঞ্চি, নেট আর সুতলি এনে লাউ, মিষ্টিকুমড়া আর শিমের জন্য আবারও নতুন করে মেরামত করেছি। আবারও বছরখানেক চালিয়ে নিতে পারবে সবগুলো মাচাঙ। গাছের আকার অনুযায়ী মাচাঙ করলে গাছেরও আরাম হয়, দেখতেও ভালো লাগে। ফলন দেয়া গাছের মাচাঙ সবসময় নিজের বুক বা কাঁধ বরাবর করলে ভালো। বেশী উঁচু মাচাঙে গাছ প্রথমেই নিজেকে উঠিয়ে নেয়ায় শক্তি খরচ করে ফেললে পরবর্তীতে ফলনে তাদের গতি ধীর হয়ে আসে। মাচাঙ তৈরী করতে আমি শক্ত নেটও ব্যবহার করে থাকি। লতাগুলো আরাম পায় তাতে।
ভাদ্রের শেষেই লাউ, মিষ্টি কুমড়া আর শিমের বিচি আলাদা আলাদা করে ভেজা মাটিতে বুনে দিয়েছিলাম। খয়েরী, কালো আর মেটে রঙের বীজগুলো থেকে যখন সবুজ সবুজ নরম রঙা দুটো চারটা করে লাউ পাতা বা শীম পাতা বের হয় তখন এক অপার্থিব দৃশ্যের অবতরণ ঘটে। সৃষ্টির জীবনচক্র এক অদ্ভুত ঘটনা। এবার আশ্বিনে কুয়াশার দেখা মিলেনি বলে এখনও নরম কোন শীতের সবজি চাষাবাদ শুরু করিনি। আরো সপ্তাহ দুয়েক হয়তো অপেক্ষা করতে হবে তার জন্য। লালশাক, ডাঁটা শাক, পালং, ধনিয়াপাতা, বাটিশাকের বীজ আমি সাধারণত কিনে আনি। এবারও এনেছি, শুধু রোদটা আরেকটু হালকা হবার জন্য বসে আছি। গামলায় জায়গা না কুলালে আমি বড় গাছগুলোর গোড়ার মাটি পরিস্কার করে তাতেই শাকের বীজ ছড়িয়ে দেই। দারুণ সুন্দরও লাগে তখন দেখতে। তবে মনে রাখতো হবে, যে কোন বীজ থেকে চারা করবার আগে কয়েক ঘন্টা জলে ভিজিয়ে নিলে খুব তাড়াতাড়ি এবং সহজে বৃদ্ধি হয় তাদের।
আমার ছাদবাগানে সবজি চাষের জায়গা কম। তাই খুব হিসেব করে আমি সবজি চারা বুনে থাকি। প্রতিটা চারা যেন সুস্থ থাকে এবং নিজের মতন করে বড় হতে পারে, সবসময় তাই চাই। অন্যের চাষাবাদের সাথে প্রতিযোগীতা করে কখনও চাষাবাদ নয়। নিজ সাধ্য এবং জায়গা অনুযায়ী বাগান করাটা জরুরী। যেমন আপনার যদি শুধু একটি লাউ গাছ বুনবার জায়গা থাকে, তাতেই খুশী। তাকে সঠিক যত্ন নিতে পারলে পুরো শীতে আপনার মাচাঙ ভরে লাউয়ের দেখা মিলবে অনেকের চেয়ে বেশী। যারা বারান্দায় শীতের সবজি করতে চান, তারা একটি টবে একটি চারা রোপন করতে পারেন। ফুলকপি, লেটুস, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম বা জুকিনি যেটা আপনার পছন্দ। প্লাস্টিকের ছোট গামলায় শাক চাষ করতে পারেন আপনার বারান্দার যে কোন কোণে। ঘরের ফেলে দেওয়া সবজি, চাপাতা আর লাউ গাছ হলে মাছ ধোয়া জল দিয়ে রাখুন টবের মাটিতে। এগুলোর চেয়ে উত্তম সার আর কিছু নেই। রোগ প্রতিরোধে ছাই প্রিয়। শীতে তাই ছাইয়ের ডিব্বা ভরে রাখি সবসময়।
শীতের সবজি, শাক বা ফুল চাষ করবার জন্য তৈরী হবার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। ছাদ বা বারান্দায় তৈরি করে ফেলুন আপনার সাধ্য অনুযায়ী টব বা গামলাগুলো। বারান্দা হলে গ্রীলকেই মাচাঙ বানিয়ে নিন। শশা, করল্লা এমনকি লাউও হতে দেখেছি গ্রীল বেয়ে। চাষাবাদ করুন সহজ নিয়মে, আমার মতন। একবার না পারলে আবারও চেষ্টা করতে সমস্যা হবার কথা নয়। নিজের আনন্দ সবার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে হেসে উঠুন সবুজের মাঝে। চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।
সারাবাংলা/আরএফ