Wednesday 01 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভালোবাসার নাম- চেক


৮ জুলাই ২০১৮ ১৩:৩৯ | আপডেট: ৮ জুলাই ২০১৮ ১৩:৪৪

ফ্যাশনে চেকের জনপ্রিয়তা

জান্নাতুল মাওয়া।।

ফ্যাশন জগতে চেক প্যাটার্নটি বলতে গেলে কিংবদন্তীর জায়গা করে নিয়েছে। শত শত বছর ধরে এটি ফ্যাশন জগতে অবস্থান ধরে রেখেছে একদম প্রথম সারিতে! বিশেষত ছেলেদের ফর্মাল পোশাকে চেকের চল সবচেয়ে বেশি।  মেয়েদের ওয়েস্টার্ন পোশাক অর্থাৎ স্কারট, টপসে এবং শিশুদের পোশাকেও চেক বেশ জনপ্রিয়।

আমাদের দেশে পুরুষের লুঙ্গিতে চেক প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়। মেয়েদের কামিজে, শাড়িতে চেক প্যাটার্ন প্রথম নিয়ে আসে  গ্রামীণ চেক। ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল গামছা প্যাটার্ন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে  কাজ করেন, সেই সুবাদে চেক প্যাটার্ন আমাদের দেশে ফ্যাশনের একটা অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। এটি একইসাথে যেমন চলতি ফ্যাশনে জায়গা করে নেয় তেমনি হয়ে ওঠে দেশের ঐতিহ্য রক্ষার অংশ। বিশেষত আমাদের দেশের মেয়েদের শাড়িতে চেক এসেছে ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই। শুধু পোশাকেই নয়, গহনা, ব্যাগ এমনকি ঘর সাজানোর উপকরণেও চেক প্যাটার্ন বহুল ব্যবহৃত ও বিপুল জনপ্রিয়।

নানা রকম চেক

পশ্চিমে ফ্যাশনে চেকের আনাগোনা শুরু হয়েছে অনেক আগে। এই পর্যন্ত নয় ধরণের চেকের দেখা পেয়েছি আমরা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হল জিংহ্যাম প্যাটার্নটি। আঠারো শতকের মাঝামাঝিতে এটি ফ্যাশন জগতে আসে। এর বিশেষত্ব হল এতে শুধু মাত্র দুইটি রং ব্যবহার করা হয় এবং সবগুলো কাপড়ের মূল রং থাকে সাদা। এই চেকের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাপড় হল সাদা-নীলের মিশেলটি।

জিংহ্যাম চেক

এত সাদাসিধে একটা প্যাটার্ন কীভাবে ফ্যাশন দুনিয়ায় বছরের পর বছর রাজত্ব করে যাচ্ছে এটি একটি আশ্চর্য বিষয় বলে অনেকেই ভাবতে পারেন। তবে দেখা গিয়েছে জিংহ্যাম চেকের পোশাক সবসময়ই কন্ট্রাস্ট করে পরা  হচ্ছে। যেমন স্কার্টটি এই চেকের হলে টপসটি হয় চলতি কোন কাপড়ের যা পুরো লুক পালটে দিচ্ছে। তেমনি আমাদের দেশে যারা শাড়ি পরেন অনেকেই চেকের ব্লাউজের সাথে একরঙ্গা শাড়ি বেছে নেন বা চেকের শাড়ির সাথে একরঙ্গা ব্লাউজ। অর্থাৎ চেকের পোশাকে ফ্যাশনপ্রেমীরা প্রায় সবাই  কন্ট্রাস্ট এর ধারণাটি ব্যবহার করেন।

বিজ্ঞাপন

মাদ্রাজ চেক

এছাড়া রয়েছে পিন চেক, মাদ্রাজ চেক, টারটান, প্লেইড, বারবেরি ইত্যাদি প্যাটার্ন। অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার আবার এই প্যাটার্নগুলোকে চেক প্যাটার্নের  অংশ মনে করেন না। তবে সাধারণ মানুষদের কাছে এগুলো সবই চেক প্যাটার্ন হয়েই ধরা দেয়। মজার ব্যাপার হল আমাদের গ্রামীন চেক যেমন বাংলাদেশের একটা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে তেমনি মাদ্রাজ চেক ভারতের মাদ্রাজ শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী প্যাটার্ন। টারটানের ইতিহাস আরো পুরোনো। ৩০০০ বছরের পুরনো প্যাটার্নের কাপড়টি  স্কটিশ ঐতিহ্যের ধারক।

এই প্যাটার্নগুলো প্রতিটির মধ্যে রয়েছ সূক্ষ পার্থক্য। সাধারণ মানুষ যদিও সবগুলোকে চেকের অন্তর্ভুক্ত মনে করে, কিন্তু ফ্যাশনবোদ্ধাদের কাছে এগুলোর প্রতিটিরই ভিন্ন আবেদন রয়েছে।

গ্রামীণ চেক

আমাদের দেশে গ্রামীণ চেক মূলত এসেছে এদেশের গামছার মোটিফকে মাথায় রেখে। নব্বই এর দশকে গ্রামীণ ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রামীণ চেক বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখন এই চেকের জনপ্রিয়তা কোন অংশেই কমেনি বরং বেড়েছে। তবে এখন এই চেকটি শুধু গ্রামীণ ফ্যাশনের শোরুমেই নয় বরং দেশি প্রায় সব শোরুমেই এই চেকের পোশাক দেখতে পাওয়া যায়।

গ্রামীণ’র বিক্রয়কর্মী জনাব নূর আলম জানান তাদের শোরুমে চেক ছাড়াও অন্যান্য পোশাক পাওয়া গেলেও অনেকেই বিশেষত চেকের পোশাক কিনতে তাদের শোরুমে আসেন। তবে জনাব আলম বলেন ক্রেতার সংখ্যা ইদানিং তেমন আশানুরূপ না হলেও চেকের পোশাকের জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে। গ্রামীণ ফ্যাশনে ৭০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে নানান রঙের এবং বৈচিত্র্যের চেকের শাড়ির দেখা মিলবে।

বিজ্ঞাপন

 

চেকের শাড়ির জনপ্রিয়তা

চেকের শাড়ি পরতে পছন্দ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক প্রিয়াংকা বোস। তিনি জানান, যে কোন সুতির শাড়িই তার অসম্ভব প্রিয়। এর মধ্যে চেকের শাড়ির জায়গাটা অবশ্যই আলাদা। অনেক আগে মাকে পরতে দেখেছি চেকের শাড়ি। তাই এই শাড়ি পরলে একটা পুরনো দিনের আবহ আসে। তবে প্রিয়াংকার এখন সবচেয়ে বেশি পছন্দ গামছা শাড়ি। তিনি বলেন গামছা আমরা যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছি। সব বয়সের সব ধরণের লোকেরাই গামছা ব্যবহার করে। আর এই গামছা কাপড় দিয়ে বানানো শাড়ির আবেদন অবশ্যই সাধারণ চেক শাড়ির চেয়ে আলাদা। কিছুদিন আগে তিনি শান্তিনিকেতনে ঘুরে এসেছে। বৈশাখের প্রচন্ড গরমে তার পরনে ছিল লাল সাদা চেকের গামছা শাড়ি। প্রিয়াংকা বোস মনে করেন ঢাকাই জামদানি আর ঢাকাই মসলিনের মত আমাদের দেশের গামছা শাড়িরও জগত বিখ্যাত হবার দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে! এগুলো পরতে যেমন আরাম তেমনি ট্রেন্ডি!

গত দুইবছর ধরে গামছা শাড়ির জনপ্রিয়তাও চোখে পড়ার মত। বাজারে দুই ধরণের গামছা শাড়ি পাওয়া যায়। একটি হল গামছার কাপড়ে তৈরি গামছা শাড়ি আরেকটি হল সাধারণ তাঁতের শাড়ি যাতে গামছার মোটিফ ব্যবহার করা হয়।

 

অনেক সাধারণ ক্রেতা যদিও এই দুই শাড়িতে পার্থক্য বুঝে উঠতে পারেননা তবে  গামছা শাড়ির অনলাইন দোকান শাড়ি কথনের স্বত্ত্বাধিকারী  সাবিহা কুমু জানান এই দুই ধরণের শাড়িতে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেন, তিনি যে গামছা শাড়ি বাজারে এনেছেন এগুলো কুষ্টিয়ায় তৈরি হয়। সত্যিকারের  গামছার বুনন এবং সুতোতে এই গামছা শাড়িগুলো বানানো হয়। কুমু জানান, এই কাপড়গুলোর ঘ্রাণও আলাদা। কুমু আরো বলেন, সব বয়সের নারীই এই গামছা শাড়ি আগ্রহ করে কিনে থাকেন। বিশেষত দেশের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে প্রবাসী বাঙ্গালিদের কাছে এই শাড়ির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। শাড়ি কথনের গামছা শাড়িগুলোর দাম ১৫৫০ টাকা থেকে  ১৬০০ টাকার মধ্যে। গামছা চেকের শাড়ি পরতে পারেন একরঙ্গা সুতির ব্লাউজ দিয়ে। এছাড়া ব্লাউজের হাতায় বা গলায় গামছা চেকের কুঁচি বা ফ্রিল লাগিয়ে নিতে পারেন।

গামছায় হোক কি সাধারণ তাঁতে, বাংলার ফ্যাশনে চেকের শাড়ির আবেদন টিকে থাকবে সবসময়। একই সাথে ঐতিহ্যকে ধরে রাখার এবং ট্রেন্ডি হবার সুযোগ আর কে দেবে চেক ছাড়া! আর চেকের শাড়ি মাত্রই সুতির শাড়ি নয়। সিল্ক, মসলিন, জর্জেট সমস্ত ম্যাটেরিয়ালেই পাবেন চেকের শাড়ি, যা অফিস, বাজার, পার্টি সবখানেই পরে যাওয়া যাবে অনায়াসে।

 

ফিচার ছবি- সারাবাংলা

মডেল- আত্রলিতা   শাড়ি- নন্দিনী টাঙ্গাইল শাড়ি

 

অন্যান্য ছবি- ইন্টারনেট

 

সারাবাংলা/এসএস

 

 

 

গামছা শাড়ি চেক চেক শাড়ি জিংহ্যাম প্যাটার্ন টারটান তাঁতের শাড়ি পিন চেক প্লেইড ফ্যাশন বারবেরি বিবি রাসেল মাদ্রাজ চেক সুতি শাড়ি

বিজ্ঞাপন

ফিরে দেখা ২০২৪ / ছবিতে বছর ভ্রমণ
১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৫

আরো

সম্পর্কিত খবর