দায়িত্বে অবহেলা ও জনসম্পৃক্ততার অভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু
১৬ জুলাই ২০২৩ ১৮:০৯ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩ ২০:২৬
ঢাকা: যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শুক্কুরের আড়াই বছরের ছেলে ইব্রাহিম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চার দিন ধরে ভর্তি ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। বর্তমানে অবস্থা কিছুটা ভালো। এর আগে, ২০২১ সালে তার সাত বছরের মেয়ে সিনথিয়াও সাত দিন ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি ছিল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। সেবার তাদের পরিবারের আরও কিছু শিশুও আক্রান্ত হয়।
পরিবারের শিশুরা বারবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে মোহাম্মদ শুক্কুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নিজেদের বাসা পরিষ্কার রাখলেও নির্মাণাধীন রাস্তায় জমা পানি কেউ পরিষ্কার করে না। এ ছাড়া মাঝে-মধ্যে মশার ওষুধ ছিটালেও মশা মরে না। এই কারণে শিশুরা বারবার আক্রান্ত হচ্ছে।’
রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু ইব্রাহীমের মতো একাধিক শিশু ও বয়স্ক রোগী জানান, তাদের এলাকায় প্রচুর মশা। সিটি করপোরেশন থেকে ওষুধ ছিটালেও রাস্তা খোঁড়াখুড়ির কারণে তৈরি গর্তে জমা পানিতে সৃষ্ট মশার দায়িত্ব কেউ নেয় না। ফলে তারা বাইরে গেলে বা ঘরে থাকলেও মশার কামড় খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মুগদা, মাণ্ডা, মদিনাবাগ, গোরান, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মেরাদিয়াসহ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী এলাকার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরাই মূলত চিকিৎসা নিচ্ছেন মুগদা জেনারেল হাসপাতালের বিশেষায়িত ওয়ার্ডে।
বাসাবো সবুজবাগের বাসিন্দা সবিতা হালদার হাসপাতালে আছেন তার সাত বছরের ভাতিজি প্রকৃতি হালদারকে নিয়ে। জানালেন তাদের ভবনের কয়েকজন বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকৃতি বেশি অসুস্থ হওয়ায় তাকে পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
এভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যাও রেকর্ড ছড়াচ্ছে প্রতিদিনই। এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে। যদিও প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে ও ক্ষেত্রবিশেষে মশা পাওয়ায় জরিমানা করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, ডেঙ্গু মশার বাহক এডিস নিধনে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা ও কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। যথাসময়ে উদ্যোগ নিলে চলতি বছর ‘মহামারি’ আকারে ছাড়াতো না ডেঙ্গু।
চলতি বছর দেশের প্রায় সবক’টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১০০ জন। এর আগে, চলতি মৌসুমের ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী গত বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮১ জন এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
তবে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি এক লাখের উপর মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এবং মারা যান ১৭৯ জন। আর সবচেয়ে বেশি মারা যায় ২০২২ সালে- ২৮১ জন। ওই সময় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
ডেঙ্গু বিস্তারের কারণ
সরকার ঘোষণা না দিলেও বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে মহামারি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আষাঢ়ে ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ রূপের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে- আগাম বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা, বর্ষা আসার আগেই মশা নিধনে জোরদার কার্যক্রম গ্রহণ না করা, মশার চরিত্র বদল, জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততার অভাব ইত্যাদি।
বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার আগাম বৃষ্টি হয়েছে। আবার ঢাকার কিছু কিছু জায়গায় শীতকালেও তাপমাত্রা না কমায় সারাবছর মশা জন্মায়। ফলে আর্লি সিজনেও (বর্ষা আসার আগে) বেশ কিছু জায়গায় মশা জন্ম নিয়েছে। মার্চ, এপ্রিল আর মে হচ্ছে ডেঙ্গুর আর্লি পিরিয়ড। এ সময়ে ডেঙ্গুর রোগীর এলাকা চিহ্নিত করে ব্যাপক হারে মশা নিধন করা দরকার ছিল। লার্ভিসাইডিং, এডাল্টিসাইডিং, ফগিং, সোর্স রিডাকশনের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ালে ডেঙ্গু আজ মহামারি অবস্থায় আসত না।’
এদিকে, এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম দেয়- এমন একটি ধারণা থাকলেও সেটি নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ময়লা পানিতেও এডিস মশা ডিম পাড়ছে ও বংশবিস্তার করছে। দুই সিটি করপোরেশনের সাম্প্রতিক কিছু অভিযানেও এটির সত্যতা পাওয়া গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক ড. কবিরুল বাশার এক গবেষণায় দেখেছেন এডিস মশা সুয়ারেজের পানি, ড্রেনের পানি এবং এমনকি সমুদ্রের নোনা পানিতেও ডিম পাড়ে এবং তার জীবনচক্র সম্পন্ন করতে সক্ষম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় এক সেন্টিমিটার পরিমাণ জমে থাকা পানিতেও এডিস মশার বংশবৃদ্ধির প্রমাণ পেয়েছি। শুকনো অবস্থায় এডিস মশার ডিম ৬-৯ মাস পর্যন্ত জীবিত থাকে এবং সামান্য পানির সংস্পর্শে আসলে সেটি ফুটে লার্ভা তৈরি হয়। ইতোপূর্বে আমরা জানতাম এডিস মশা শুধুমাত্র দিনের বেলায়, বিশেষ করে সকালে এবং বিকেলে কামড়ায়। কিন্তু আমাদের গবেষণায় সেটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের ল্যাবরেটরি এবং মাঠপর্যায়ের গবেষণায় পেয়েছি এডিস মশা রাতেও কামড়ায়। তবে রাতের বেলায় কামড়ানোর হার কম।’
এডিস মশার চরিত্রবদল সম্পর্কে এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশা পাওয়া গেছে। ক্ষুদ্র প্রাণী হলেও এটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তাই যেকোনো পরিবর্তিত ও প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে পরিবর্তন করে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশাও পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং মানুষের আচরণের সঙ্গে সুচতুরভাবে নিজেকে পরিবর্তিত করে নিয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করার পরের বছর মশা নিয়ন্ত্রণে ঠিক পথেই ছিল দুই সিটি করপোরেশন। সেসময় ওষুধ বদলে ম্যালাথিয়নের সঙ্গে ব্যবহার করা হয় ডেল্টামেথ্রিন। অন্যদিকে, লার্ভা ধ্বংসের জন্য দক্ষিণ সিটি টেমিফস ব্যবহার করে, আর উত্তর সিটি ব্যবহার করে নোভালিউরন, টেমিফস ও বিটিআই নামের ওষুধ। মশা মারতে ম্যালাথিয়ন ও ডেল্টামেথ্রিন দুই ওষুধই ব্যবহার করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। উত্তর সিটি শুধু ম্যালাথিয়ন ব্যবহার করে। এগুলো উড়ন্ত মশা মারার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার বিরুদ্ধে ডেল্টামেথ্রিন ওষুধ আর কাজ করছে না। এতে কেবল সময় ও অর্থের অপচয়ই হচ্ছে।
দুই সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গুর চিত্র
রাজধানীতে এডিস মশা নিধনে স্বাস্থ্য অধিদফতের প্রাক বর্ষাকালীন জরিপে দেখা গেছে, নগরীর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়িতে রয়েছে ডেঙ্গু বহনকারী এডিস মশার লার্ভা। গত মাসের ১৯ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত অধিদফতরের ২১টি টিম দুই সিটির তিন হাজারেরও বেশি বাড়িতে এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০টির মধ্যে ২৭টি ওয়ার্ডে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া ৫৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডে ৪৪ শতাংশ বহুতল ভবন, ২১ শতাংশ একক মালিকানাধীন ভবন, ১৮ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৫ শতাংশ মেঝেতে জমা পানিতে ছাড়াও প্লাস্টিকের বালতি (৯ শতাংশ), প্লাস্টিক ড্রাম (৯ শতাংশ), ফুলে টব ও ট্রে (৮ শতাংশ), প্লাস্টিকের মগ (৮ শতাংশ) এবং অব্যবহৃত টায়ারে (৮শতাংশ) এডিস লার্ভা পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তিনদিনের চিরুনি অভিযানসহ প্রতিদিনই বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন নির্মাণাধীন স্থাপনা ও বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় জরিমানা করছে ডিএসসিসি পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কী করা যেতে পারতো, কী করা যায়
এডিস মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নিয়ে রয়েছে নানা অসন্তোষ। রাস্তাঘাটে লার্ভা ও মশা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ না নিয়ে বাড়ি বাড়ি ব্যক্তিগত পর্যায়ে জরিমানা করা নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ। কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর এডিসের যে জরিপ করে তা ভুল। বিশ্বের কোথাও এভাবে এডিস মশার জরিপ করে না। বিশ্বের কোথাও মশার সংখ্যার সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। জনগণকে জরিমানা করা হচ্ছে, কিন্তু মশার সোর্স কোথায় সেটি কারও মাথায় আসছে না। সিটি করপোরেশনের কাজ ছিল এগুলো দমন করা। তারা ব্যর্থ হয়ে এখন জনগণের উপর দায় চাপাচ্ছে। তাদের উদ্যোগ লোক দেখানো। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।’
কী করা যেতে পারে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি কমিটি করা হয়। যে কমিটি দিকনির্দেশনা দিত। বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেই কমিটিকে এখন আবার চালু করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর আবাসস্থল ঘিরে চারশ মিটার জায়গা ফগিং ও লার্ভিসাইডিং করতে হবে। ডেঙ্গুবাহী মশা মেরে ফেলার পাশাপাশি, মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে। এটিকে বলা হয় ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট। ঢাকায় যেভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। কারণ, যারা এটি করছে তারা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না। আবার অনেক গবেষকই উদ্ভট পরামর্শ দেয়। যেগুলো অনুসরণ করে সিটি করপোরেশন ভুল পদ্ধতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, যা আল্টমেটলি কাজে লাগেনি। বিশ্বের কোনো দেশেই হাঁস দিয়ে, মাছ দিয়ে বা ফড়িং দিয়ে মশা মারার ইতিহাস নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে কীটতত্ববিদের সংখ্যা অনেক কম। যারা আছেন তাদের মধ্যে অনেকরই প্রযুক্তি জ্ঞান সীমিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেভাবে মশা মারে সেভাবে আমাদের দেশে মারে না। ফগিং করে বিশ্বের কোথাওই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউএলভি পদ্ধতিতে মশা মারা হয়। যেসব জায়গায় ইউএলভি যায় না সেখানে শুধুমাত্র ফগিং করা হয়।’
সাধারণ মানুষের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দিনে-রাতে মশারির মধ্যে থাকা, ফুলহাতা জামা পরা, দুইবেলা স্প্রে করা, সপ্তাহে একদিন বাসা-বাড়ির জমা পানি পরিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়া অব্যবহৃত বড় পাত্র, টব বর্জ্য কর্মীদের কাছে দিয়ে দিতে হবে ও বিটিআই সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে হবে।’
অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘মশা নিধনে জনগণকে সচেতন করলেই হবে না, প্রয়োজন জনসম্পৃক্ততা। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া কখনোই এডিস মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বাসা বাড়ির ধরন পরিবর্তন হয়েছে। ফলে বদলে গেছে মশার মশার প্রজননস্থলও। মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় আমরা ছোট-বড় ৫২ ধরনের প্রজনন পাত্র চিহ্নিত করেছি। বড় বড় ভবনের বেজমেন্টে গাড়ি রাখা ও ধোয়ার জায়গা করা হয়েছে। পার্কিংয়ে জমে থাকা সামান্য পানিতেও আমরা এডিস মশার প্রজনন হতে দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘বড় বড় ভবনের মেইন গেটের ছোট্ট চ্যানেলের মধ্যেও আমরা এডিস মশার লার্ভা পাচ্ছি। এ জাতীয় ছোট-বড় প্রজননস্থলগুলো মশা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের চোখের আড়ালেই থেকে যায়। এছাড়াও বাংলাদেশের মেগা কনস্ট্রাকশন যেসব জায়গায় চলছে সেইখানেও এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়া তার অন্যতম উদাহরণ।’
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী যা বলেন
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সারবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এডিস মশা নিধনে যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয় সেই প্রযুক্তিগুলোই আমরা ব্যবহার করছি। এ ছাড়া নতুন কোনো তথ্য-উপাত্ত আবিষ্কৃত হলে তার সবই আমরা সংগ্রহ করছি। এর পরেও কারও কাছে নতুন তথ্য থাকলে তা আমরা বিবেচনা করব।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ব্যবহৃত কীটনাশক কাজ করছে না- এমন কিছু লক্ষ্য করা যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এডিস মশার ধরন পরিবর্তন হয়েছে এমন কোনো প্রমাণও আমরা পাইনি। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে এক মিটিংয়ে তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই। এডিস মশার স্বভাবগত ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে এমন কথা তারা বলেনি।’
গণমাধ্যমের পাশাপাশি মসজিদের ইমামদের এডিস ও ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করতে কাজে লাগানো হচ্ছে। কিন্তু মানুষ গুরুত্ব দিচ্ছে কম। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অফ সিজনেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলেও এডিস মূলত সিজনাল মশা। একটি বিশেষ ঋতুতে প্রভাব বাড়ায় বছরের বাকি সময় কিছুটা অসচেতনতা দেখা যাচ্ছে।’
বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুই সিটি করপোরেশন কাজ করছে। তারপরও যদি তদন্তে বের হয়ে আসে যে, তারা কাজ করছে না; সেক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম