Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজ বিশ্ব ব্রেইল দিবস

তৌফিক সুলতান
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৮

আজ বিশ্ব ব্রেইল দিবস। প্রতি বছর এই দিনে বিশ্বের প্রতিটি দেশে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে। মূলত অন্ধ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য পড়া ও লেখার বিশেষ পদ্ধতির নাম ব্রেইল। এর আবিষ্কারক লুইস ব্রেইল। ফলে দিবসটি ব্রেইল দিবস হিসেবেই পরিচিত। ব্রেইল ১৮০৯ সালের ৪ জানুয়ারি প্যারিসের নিকটবর্তী কুপভেরি নামক একটি ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে সম্মান জানাতেই তার জন্মদিনে ব্রেইল দিবস পালন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব ব্রেইল দিবস একটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে অন্ধ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবাধিকারের উপলব্ধিতে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্রেইলের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে উদযাপন করা হয়। ইভেন্টের জন্য তারিখটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ নভেম্বর ২০১৮-এ ঘোষণা করেছিল, যা এই লিখন পদ্ধতির স্রষ্টা লুই ব্রেইলের জন্মদিন। প্রথম বিশ্ব ব্রেইল দিবস পালিত হয় ৪ জানুয়ারি, ২০১৯-এ।

দিবসটি অন্ধ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাদের শিক্ষার সুযোগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তারা এই শিক্ষা গ্রহণ করছে যে পদ্ধতিতে সেটাকে আমরা ব্রেইল পদ্ধতি বলি।

ব্রেইল পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে অন্ধ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। তারাও নিজদের প্রমাণ করতে পারছে তাদের মেধা এবং দক্ষতা। ব্রেইল পদ্ধতিতে ছয়টি ডট দিয়ে অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্ন ইত্যাদিকে সূচিত করা হয়। দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা এই উন্নীত বা উত্তর বিন্দুর ওপর আঙুল বুলিয়ে নকশা অনুযায়ী অক্ষরগুলো অনুধাবন করে। এই পদ্ধতি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য যে কতটা আশীর্বাদস্বরূপ সেটা আমরা সাধারণ মানুষ হয়তো উপলব্ধি করতে পারি না।

মানুষ তার নিজের জীবন থেকেই কোনো কিছুর গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি করে লুইস ব্রেইলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তিন বছর বয়সে লুইস ব্রেইল অন্ধ হয়ে যান। দৃষ্টিহীনতার কারণে তার জীবন থেমে থাকেনি। পড়াশোনার জন্য তিনি ভর্তি হলেন প্যারিসের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি বিশেষ স্কুলে। একদিন তিনি জানতে পারলেন অ্যালফাবেট কোডের কথা। ফরাসি সৈন্য বাহিনীর অফিসাররা সৈন্যদের সঙ্গে রাতে কথা বলার সময় শত্রুপক্ষের নিশানা থেকে বাঁচতে এই কোডে কথা বলতেন। এই অ্যালফাবেট কোড বেশ কিছু বিন্দু আর ছোট লাইনের সমষ্টি যেগুলো পাতার ওপর একটু উঁচু করে খোদাই করা হতো যাতে আঙুল স্পর্শ করলে সেগুলো পড়া যায়। ব্রেইলের কাছে এই পদ্ধতি অনেক ভালো লাগে এবং তার মাথায় অন্ধদের জন্য শিক্ষা দেওয়ার নতুন উপায় আসে।

বিজ্ঞাপন

২০ বছর বয়সে অন্যান্য অন্ধ ব্যক্তিকে তিনি শিক্ষা দিতে অগ্রসর হন। ১৮২৭ সালে তিনি প্রথম ব্রেইল পদ্ধতির বই প্রকাশ করেন। তবে তখনকার সময়ে এই পদ্ধতিতে অন্ধদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারটি খুব একটা প্রচলিত হয়নি। তবে বর্তমানে এই পদ্ধতি অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহারকারীরা রেফ্রেসবল ব্রেইল ডিসপ্লে ব্যবহার করার মাধ্যমে কম্পিউটারের পর্দা ও অন্যান্য সমর্থনযোগ্য ডিভাইস পড়তে পারে।

লুইস ব্রেইলের এই আবিষ্কার আজ পুরো পৃথিবীর কাছে স্মরণীয়। অন্ধ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কাছে নতুন এক দ্বারের উন্মোচন ঘটেছে। তারাও শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে অন্যদের মতো। বর্তমানে বিভিন্ন ভাষায় এই ব্রেইল পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে। ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার আলোর সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পৃথিবীটাকে দেখছে।

লেখক: সহকারী প্রধান শিক্ষক; ভাওয়াল ইসলামিক ক্যাডেট একাডেমি

সারাবাংলা/এএসজি

তৌফিক সুলতান পাঁচমিশেল ফিচার বিশ্ব ব্রেইল দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর