Saturday 28 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তথ্য ও যোগাযোগের দুনিয়ায় ড্রোন প্রযুক্তি

মো. জাহিদুল ইসলাম
১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৫৭ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:০৯

কৃষিকাজে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত

ড্রোন হল এক ধরনের উন্নত যান্ত্রিক যন্ত্র যা বিশেষ করে আকাশে উড়তে সক্ষম। এটি এক বিশেষ ধরনের মানবহীন গগনচারী যান। হেলিকপ্টার বা অন্যান্য গগনচারী যান চালানোর জন্য এক বা একাধিক মানুষের প্রয়োজন হলেও ড্রোন চালানোর জন্য কোনও মানুষের দরকার হয় না। দূর থেকেই তারহীন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে অথবা আগে থেকে নির্ধারিত প্রোগ্রামিং দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এটি প্রধানত উড্ডয়ন ক্ষমতাসহ রিমোট কন্ট্রোল বা স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ছোট আকার এবং দ্রুত গতির কারণে ড্রোন খুব কার্যকরী এবং নিরাপদ যান্ত্রিক হাতিয়ার হিসেবেও পরিচিত।

বিজ্ঞাপন

ড্রোন হচ্ছে বর্তমান যুগের সেরা আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম আবিষ্কার যা আজ আমরা নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। তবে সম্প্রতি এটা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যুদ্ধ ক্ষেত্রে। এই ড্রোনের জন্যই প্রতিপক্ষকে হামলার ছক থেকে শুরু করে হামলা করা পর্যন্ত সবকিছুর তথ্য ড্রোন দিয়ে থাকে। তাছাড়া হলিউড বা বলিউড এর সিনেমার অনেক স্ট্যান্ড ড্রোন দিয়েই করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং তার বহুমুখী প্রয়োগ বিশ্বের অনেক খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যা প্রতিনিয়ত আরও উন্নত হয়ে উঠছে।

বিজ্ঞাপন

ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এটি বিশ্বব্যাপী অনেক সেক্টরে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে প্রতিরক্ষা, মিলিটারি অপারেশন, সার্ভেলেন্স, ডেলিভারি এবং ফটোগ্রাফি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত নানা কাজে ড্রোনের নানাবিধ ব্যবহার লক্ষণীয়। আবহাওয়া পূর্বাভাস ও দুর্যোগ ম্যানেজমেন্টেও ড্রোনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অপরদিকে চলচ্চিত্র ও মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে ড্রোনের ব্যবহারে চিত্রগ্রহণে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এছাড়াও কৃষি খাতে ড্রোন ফসলের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ এবং সার প্রয়োগে ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে গুগল, অ্যামাজনের মতো বড় বড় কোম্পানি পণ্য পরিবহন, যোগাযোগ রক্ষা, তথ্য পরিবহনসহ নানা কাজে সার্থকতার সঙ্গে ড্রোনকে কাজে লাগাচ্ছে। মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়ও আজকাল ড্রোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

কৃষিকাজে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত

ড্রোনের নির্মাণ এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি আধুনিক প্রযুক্তি পরস্পর সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। ড্রোনের ক্ষেত্রে মাল্টি প্রপেলার প্রযুক্তি ব্যবস্থা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। এই ব্যবস্থাপনার কারণেই ড্রোন কোনও ব্যর্থতা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়তে এবং নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম। মাল্টি প্রোপেলার ব্যবস্থা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থাপনা যেখানে কোনও মোটর হঠাৎ অকার্যকর হয়ে পড়লেও একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা কৌশলের কারণে উড়তে থাকা ড্রোনটিকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা সক্ষম। এক্ষেত্রে প্রোপেলারের অন্যান্য বিভাগ সার্বিক সমন্বয়ের কাজটি করে থাকে। অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তির ড্রোনগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তাদের নিজদের মধ্যে গ্রুপ চ্যাটে তথ্যবিনিময় করার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত

ড্রোনগুলো মাছি এবং পিঁপড়ের প্যাটার্ন অনুসরণ করতে পারে। এই ড্রোনগুলো যে কোনও নির্দেশ বুঝতেও সক্ষম। এছাড়াও জটিল প্রশ্নের উত্তর সমাধান করতেও পারদর্শী। ড্রোনগুলো ছবি আপডেট করার পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। ড্রোন প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা হয় ড্রোনের সক্ষমতা উন্নয়নে। ড্রোনে এআই মানে হলো উন্নত অ্যালগরিদম ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা। এ প্রযুক্তিগুলো ড্রোনকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়তে, বাধা শনাক্ত করতে, এড়াতে এবং বিভিন্ন বস্তু চিনতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রযুক্তিটি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পথ নির্ধারণ করতে ও এমনকি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এআইচালিত ড্রোনগুলো রিয়েল টাইমে বিশাল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে। তাই কৃষি, লজিস্টিক ও প্রতিরক্ষা শিল্পগুলো এ ড্রোনের প্রধান ব্যবহারকারী। যেমন- ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিপুল বনাঞ্চল দাবানলের কারণে ধ্বংস হয়। মানুষচালিত ড্রোন ইতোমধ্যেই অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাবে দাবানল ঠেকাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিনির্ভর ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব ড্রোন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সম্মিলিতভাবে আকাশে টহল দিতে পারে। ফলে দাবানল বড় হওয়ার আগেই তা শনাক্ত করার পাশাপাশি আগুন নেভাতে পারবে ড্রোনগুলো। বর্তমান চ্যালেঞ্জিং অভিযানের সময় এআই চালিত ড্রোনের সক্ষমতা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। মানুষের ভাষা বোঝার পাশাপাশি এই ড্রোনগুলোর পরিবেশ বুঝে অভিযানের গুরুত্ব এবং নিজেদের সেই মতো প্রস্তুত করার ক্ষমতাও রয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক এই ড্রোনের যে কোনও অঞ্চলের ডাইনামিক ম্যাপিং, বাধা চিহ্নিত করে এড়িয়ে যাওয়া, ওড়ার সময় সঠিক প্যাটার্ন অনুসরণ করা, মানুষ এবং বস্তুর ভিজুয়াল আইডেন্টিফিকেশন করার সক্ষমতা রয়েছে। এই ড্রোন মানুষের সাহায্য ছাড়াই যে কোনও অভিযানে স্বাধীন ও নিরাপদে কাজ করতে পারে।

লেখক: নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

ড্রোন প্রযুক্তি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর