‘ভাষা আন্দোলনই বিশ্ববাসীকে মাতৃভাষা সম্পর্কে সচেতন করেছে’
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৩ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৬
অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দু-যুগ ধরে শিক্ষকতা করছেন। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সম্প্রতি আবদুর রহিম ‘পূর্ব বাংলার আর্থ-সামাজিক জীবন ও সাংস্কৃতিক জীবন: ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১’ এর উপর পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। তার গবেষণাটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। ভাষা শহিদ দিবসের নানা দিক নিয়ে তিনি সারাবাংলা ডটনেটের সাথে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. জামিন মিয়া।
সারাবাংলা ডটনেট: এতদিন যাবৎ আমরা বাঙালি জাতির আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা হতে দেখেছি। আপনার গবেষণায় এর পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর কারণ কী?
আবদুর রহিম: বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসকে বুঝতে হলে আমাদের পিছনে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন। আপনি জেনে থাকবেন পূর্ববাংলা একসময় একটি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিলো। বলতে গেলে এখানকার বেশিরভাগ মানুষ ছিলো কৃষক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া তাঁতি, জেলে এবং বিভিন্ন উৎপাদক শ্রেণির লোকেরা এ অঞ্চলে বসবাস করতেন। আপনি জানেন এই শ্রেণির লোকদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে অনেক সময় লাগে। আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি হলো ভাষা এবং সংস্কৃতি। আপনি যদি সুলতানি বা মুঘল আমলের সাধারণ মানুষের আচরণের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন তারা একটা স্বাধীনচেতা মনোবৃত্তি নিয়েই বসবাস করতেন। কিন্তু তারা রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন। এর কারন হলো এদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের রাজনৈতিক পশ্চাৎপদতা। রাজনৈতিক পশ্চাৎপদতাকে বিশদ ভাবে গবেষণা করতে গিয়ে আমি বিভিন্ন অনুঘটক খুঁজে পাই।
আমি দেখলাম আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় গুলো মানুষদের রাজনৈতিক সচেতনতার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৪৭ সালের পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের অন্তর্নিহিত ভাবনা গুলোকে সামনে নিয়ে আসলেন। তিনি রাজনীতি এবং সংস্কৃতির মধ্যে একটি অপূর্ব মেলবন্ধন স্থাপন করতে সক্ষম হলেন। তখনই মূলত বাঙালির রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাটা বেগবান হলো।
সারাবাংলা ডটনেট: পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাকে বুঝাতে পূর্ব পাকিস্তান শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিলো। আমাদের দেশের বিভিন্ন বই পুস্তকেও পূর্ব পাকিস্তান শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। সম্ভবত এই প্রথম কোন গবেষণায় পূর্ব পাকিস্তান শব্দের বদলে পূর্ব বাংলা ব্যবহার করা হলো।
আবদুর রহিম: দেখুন, এটার একটা দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এই অঞ্চলের বাংলা নামের নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিক একটা অগ্রযাত্রা আছে, সেটা হলো বঙ্গ থেকে বাংলা নামের উৎপত্তির ইতিহাস। একদিকে এই অঞ্চলটির নাম বাংলা অন্যদিকে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। সুতরাং ভাষা ও ভৌগোলিক সীমানা সবকিছু একাকার হয়ে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে বাংলা শব্দটি বেশি গ্রহণ যোগ্যতা পায়। আপনি জানেন বাংলা অঞ্চলকে কয়েকবার বিভক্ত করা হয়েছিলো। ১৯০৫ সালে যখন বাংলা ভাগ করা হলো তখন উড়িষ্যা, বিহার ও আসাম নিয়ে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী বা প্রদেশ গঠন করা হয়েছিল। খেয়াল করুন,তখন ইংরেজরা বেঙ্গল শব্দটা ব্যবহার করেছিলো। আবার ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের দিকে তাকান। ঐসময় ভারত ও পাকিস্তান দুইটা স্বতন্ত্র স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। লক্ষ্য করুন, এই ঘটনার পর পাঞ্জাব এবং বাংলাও কিন্তু বিভক্ত হয়ে গেলো। পাঞ্জাবের পশ্চিমাংশ এবং বাংলার পূর্বাংশকে পাকিস্তানের সাথে একীভূত করা হলো। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ হিসেবে এটাকে গ্রহণ করলো তখনও কিন্তু ব্রিটিশদের নথিতে এই অঞ্চলকে বোঝাতে পূর্ববাংলা শব্দের ব্যবহার করা হয়।
যাহোক দীর্ঘ ইতিহাসের এই পথযাত্রায় ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের নতুন সংবিধান রচনার সময় এই অঞ্চলের নাম পূর্ববাংলার পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান করার প্রস্তাব এসেছিলো মূলত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর তরফ থেকে। কিন্তু এদেশের অগ্রসর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিশেষ করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। পাকিস্তান সংবিধান পরিষদের বক্তব্যে তারা স্পীকারের কাছে তারা পূর্ববাংলা নামকরণের দাবি জানিয়েছিলেন। দুভার্গ্যবশত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সংবিধানে জোর করেই এই অঞ্চলের নাম পূর্বপাকিস্তান রেখে দেয়। অথচ এদেশের মানুষরা পূর্ব বাংলা নামের সাথে অভ্যস্ত ছিলো। তাই কাগুজে এসব সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে বাঙালিরা তাদের অন্তরে পূর্ববাংলা শব্দকে গেঁথে নেয়। সেটার জ্বলন্ত প্রমাণ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ববাংলা যে আগামীতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে তার ঘোষণা কিন্তু তিনি ১৯৬৯ সালেই দিয়ে দিয়েছিলেন।
সারাবাংলা ডটনেট: বলা হয়ে থাকে রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম দেয় কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত যেটি আপনার গবেষণাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
আবদুর রহিম: এটা আপনি ঠিকই বলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার গবেষণায় বিশেষ আগ্রহের জায়গা ছিলো। পূর্ববাংলার আর্থ-সামাজিক জনজীবন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখলাম যে তৎকালে এই অঞ্চলের মানুষ শিক্ষা দীক্ষার ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ছিলো বেশ পিছিয়ে। অথচ দুঃখের বিষয় হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে কলকাতা কেন্দ্রিক একদল তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণির মানুষ বিরোধিতা করেছিলো। ঐসময় একটা সংশয় ছিলো যে এখানকার কলেজ গুলো সেই পরিমাণ শিক্ষার্থী দিতে পারবে কিনা। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করার পর দেখা গেলো পূর্ববাংলার কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের সন্তানরা এখানে লেখাপড়া করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। অচিরেই প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এভাবে সংস্কৃতি নির্ভর সচেতন নাগরিক সমাজ গড়ে উঠলো। এই সম্প্রদায়ই গ্রামের মানুষদের এদেশের শাসকগোষ্ঠীর লাঞ্ছনা বঞ্চনার কথা বলতো। এভাবে সাধারণ জনগণের মাঝে একধরনের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়তে থাকে। বলতে গেলে এই শ্রেণি গ্রামের মানুষদের কাছে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দূত হয়ে উঠে। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সচেতন তৎপরতার জন্যই সারা দেশের মানুষদের মাঝে আত্মজাগরণ ঘটে, পাশাপাশি হয় রাজনৈতিক জাগরণ। পরের ইতিহাস ঘেঁটে আপনি দেখে থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সকল বৈষম্যের প্রতিবাদ করে এসেছে। তারাই পূর্ববাংলাকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানিরা যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে তখন ১৯৭১ সালে মানুষের ক্ষোভের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে। শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টরে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কাজ করেছিলো। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের একজন জাতির পিতা উপহার দিয়েছে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় এবং আমরা বিজয় লাভ করি।
সারাবাংলা ডটনেট: ভাষার জন্য জীবন দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ভাষা শহীদরা জীবন উৎসর্গ করেছেন তার কতটুকু পূরণ হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
আবদুর রহিম: ভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি করেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন শুরু হয়। ভাষা তো মানুষের জৈবিক বিষয়, ভাষা মানুষের জন্মের সাথে সম্পর্কিত ও জীবনের সাথে সম্পর্কিত। কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তো আর সেটি পরিবর্তন করা যায় না। কাজেই সেই ভাষার সঠিক চর্চার ক্ষেত্রে কতটুকু অগ্রগতি লাভ করেছি, সেটা একটা প্রশ্ন। কারণ এখনো বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি। আমাদের অনেক ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়ে গেছে। বাংলা ভাষা স্বাভাবিক নিয়মেই বিদেশী শব্দের সাথে সংযুক্ত হয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে। এটা যেমন ঠিক তেমনি নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতি ভাষার নিজস্ব দিক গুলো লালনপালন করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় আরো কিছু করণীয় আছে। বাংলার সাথে ইংরেজি সংমিশ্রনের মতো ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। আধুনিক গণমাধ্যম নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণের ফলে কখনো কখনো বাংলা ভাষার মৌলিকত্ব দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। তবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এলে তিনি ভাষার প্রতি বেশ মনোযোগী হয়েছিলেন। তার সময়েই ইউনেস্কো বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তিনিই ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
সারাবাংলা ডটনেট: সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন বিশিষ্ট শিক্ষক বলেছেন আমাদের মাতৃভাষা নিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কোনো সমস্যা ছিলো না। তাদের মূল আপত্তি ছিলো বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা নিয়ে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
আবদুর রহিম: পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বক্তব্যও এমন ছিলো। তারা দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের একটা সাধারণ ভাষা হিসেবে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করতে চেয়েছিলো। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ভাষা পরিবর্তন করতে চায় নি। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে ভাষার স্বীকৃতি নাই সে ভাষা কতদিন টিকে থাকবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা যদি মাতৃভাষা হিসেবে উর্দুকে গ্রহণ করতাম তাহলে স্বাভাবিকভাবেই চাকরি বাকরি করার ক্ষেত্রে উর্দুকে ব্যবহার করতে হতো। ফলে একসময় বাংলা ভাষা কালের গর্ভে হারিয়ে যেত। তৎকালীন পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলায় কথা বলতো। অন্যদিকে খুবই অল্প পরিমান মানুষ যারা উর্দুতে কথা বলতো। সুতরাং একটা ভিন্ন ভাষাকে তারা সাধারণ ভাষা হিসেবে অধিকাংশের উপর চাপিয়ে দিবে এটির কোন যৌক্তিকতা নেই। তাই এ ধরনের বক্তব্যকে আমি গ্রহণযোগ্য মনে করি না।
সারাবাংলা ডটনেট: বিভিন্ন বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বিদেশি ভাষার ছড়াছড়ি দেখা যায়। অনেক সরকারি দফতরেও এটা দেখা যায়। যেমন ফায়ার সার্ভিসকে আগে দমকল বাহিনী বলা হতো। বাংলাভাষার প্রতি এই অবহেলার জন্য কোনটিকে দায়ী করবেন? এটি প্রযুক্তিগত সমস্যা নাকি রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে হচ্ছে?
আবদুর রহিম: এখানে রাজনৈতিক ভাবেই আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। অনেক সময় বিভিন্ন বিদেশী ভাষা আমাদের শব্দ ভাণ্ডারে যুক্ত হয়। আমার মনে হয় এসব বিদেশী ভাষার পরিভাষা প্রয়োজন। যেমন মোবাইল ফোনকে বর্তমানে কেউ কেউ মুঠোফোন বলে থাকেন। এভাবে পরিভাষা তৈরী করা যায়। এ ব্যাপারে আমাদের ভাষাবিজ্ঞানীরা কাজ করলে পরিভাষা তৈরি করা অসম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
সারাবাংলা ডটনেট: আজকাল কিছু কিছু নাটক বা সিনেমায় বাংলা ভাষার বিকৃতি করা হচ্ছে। এটা কে কেউ কেউ ভাষার দূষণ বলে অভিহিত করছেন। পরিবেশ দূষণ বা নদী দূষণে দৃশ্যমান কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু ভাষার দূষণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
আবদুর রহিম: সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন নিয়ে ১৯৮৭ সালের একটা আইন আছে। তবে আমি আইনী ব্যবস্থার থেকে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করাকে বেশি গুরুত্ব দেব। তবে আপনি যেটা বলেছেন যে নাটক সিনেমায় ভাষার বিকৃতি বা দূষণ হচ্ছে, এটা আসলে ইদানীং বেশি দেখতে পাচ্ছি। এমনও দেখা যায়, ভাষার বিকৃতি হতে হতে একটা সময় মূল শব্দটাকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে একটা দেশের উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা সংস্কৃতির একটা দিক। এগুলোকে আমাদের লালন করতে হবে। যেমন সিলেট বা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা আমাদের সম্পদ। শুধু বিনোদনের জন্য এসব ভাষা বিকৃত করে মৌলিকত্ব বাদ দেওয়া ঠিক নয়। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সারাবাংলা ডটনেট: রাষ্ট্র কি কি পদক্ষেপ নিতে পারে?
আবদুর রহিম: সুপ্রিম কোর্ট বাংলা ভাষার রায় প্রদানের ক্ষেত্রে মনোযোগী হয়েছে। এটি আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমিকে এ বিষয়ে আরও তৎপর হতে হবে।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন সচেতনতামুলক কর্মসূচি গ্রহণ করা বিশেষ দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচিতে এর গুরুত্ব তুলে ধরার প্রয়োজন আছে। এরপরে যখন এ বিষয়ে একটা কাঠামো তৈরি করা হবে তখন সেটাকে অমান্য করা হলে আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কিন্তু সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতনতামুলক কর্মসূচির মাধ্যমেই সেটাকে রক্ষা করা যেতে পারে।
সারাবাংলা ডটনেট: আমাদের ভাষা শহীদদের ত্যাগের কারনে আজকে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। আপনি জেনে থাকবেন জাতিসংঘের ৬টি দাপ্তরিক ভাষা আছে। বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে আপনার ভাবনা কি?
আবদুর রহিম: এটা বাঙালির দীর্ঘদিনের দাবী। কারণ এই ভাষার জন্য একটা জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। এই ভাষার জন্য মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। বাংলা ভাষার আন্দোলনের জন্যই সারা বিশ্বের মানুষ নিজ ভাষা সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা হলে আমাদের রাজনৈতিক লাভ আছে। এটাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা আসলে একটা সময়ের দাবি।
সারাবাংলা ডটনেট: আপনাকে ধন্যবাদ।
আবদুর রহিম: আপনাকেও ধন্যবাদ
সারাবাংলা/এসবিডিই
‘ভাষা আন্দোলনই বিশ্ববাসীকে মাতৃভাষা সম্পর্কে সচেতন করেছে’ সাক্ষাৎকার