ঘূর্ণিঝড়ে আতঙ্কিত নয়, সচেতন হোন
২৪ অক্টোবর ২০২২ ১৮:০৮ | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২২ ১৮:১২
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে নতুন নয়৷ ইতিহাস বিবেচনা করলে বহুবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ৷ প্রাণহানি হয়েছে অনেক৷ তবে দুর্যোগ মোকাবিলা করে ঘুরেও দাঁড়িয়েছে মানুষ৷
এক যুগ আগের প্রলয়ঙ্করী অগ্নিচক্ষু সিডরের মতো ভয়াল শক্তিতে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। সিত্রাং আজ সোমবার সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। আবহাওয়াবিদদের বরাত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপান্তরিত হয়েছে। সিত্রাং পুরোটাই বাংলাদেশে আঘাত হানবে, ভারতে কোনো আঘাত হানবে না। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম করবে।
দেশের ১৩টি জেলায় এই ঘূর্ণিঝড় মারাত্মকভাবে আঘাত হানতে পারে উল্লেখ করেছেন ডা. এনামুর রহমান। ১৩ জেলার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বরিশাল। তবে সব থেকে বেশি আঘাত হানবে বরগুনা ও পটুয়াখালীতে। উপকূলের সব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে সন্ধ্যার মধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বলেছেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সাম্ভাব্য উপদ্রুত এলাকাগুলোতে ৭ হাজার ৩০টি শেল্টার করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে আনা হচ্ছে। সেনা, নৌ, কোস্টগার্ড একসঙ্গে কাজ করছে। ১৫ জেলায় ২৫ লাখ লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে। প্রতিটি জেলায় ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শেল্টারগুলোতে শুকনো ও রান্না খাবারের ব্যবস্থা থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রয়োজন সচেতনতা এবং পূর্ব প্রস্তুতি। আতঙ্কিত না হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের আগে-পরে এবং ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় কিছু কাজ করা এবং কিছু বর্জন করা উচিত।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে করণীয়-
১. অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়া: যে কোনো গুজবে বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে পোস্ট দেখে আতঙ্কিত না হয়ে টেলিভিশন অথবা এফএম রেডিওতে খবর শুনুন। রেডিও, অনলাইন এবং টেলিভিশনে ভেরিফায়েড নিউজ পাবেন। বিপদে শান্ত থেকে সমাধানের চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২. ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ সচল রাখা: পাওয়ার ব্যাংক, চার্জার লাইট, টর্চ লাইটে চার্জ ফুল রাখুন। শহরে আছি বলে কিছু হবে না, এমন মনে করা বোকামি। ব্যাকআপ হিসেবে মোমবাতি এবং লাইটার রাখা ভালো। তবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আগুন সব সময়ই লাস্ট অপশন।
৩. ফার্স্ট এইড বক্স: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ডায়রিয়া, জ্বরের জন্য স্যালাইন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহে রাখুন।
৪. নিরাপদ আশ্রয়: বাসা টিনশেড হলে বা নিচ তলায় হলে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস ওয়াটারপ্রুফ বক্সে টেপ এবং পলিথিন পেঁচিয়ে রাখুন। ফ্লোরে মাল্টিপ্লাগ রাখবেন না।
৫. শুকনো খাবার: নিরাপত্তার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন লাইন বন্ধ থাকতে পারে। রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার সংগ্রহে রাখুন।
৬. ফুলের টব, নির্মাণ সামগ্রী নিরাপদ স্থানে রাখুন: ফুলের টব নিরাপদ স্থানে রাখুন। খোলা জায়গায় নির্মাণ সামগ্রী রাখবেন না। বাসার পাশে নির্মাণাধীন ভবন থাকলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে করণীয়-
১. রাস্তায় থাকলে শপিং মল, মসজিদ, স্কুল বা যেকোনো পাকা ইমারতে আশ্রয় নিন। কোনোভাবেই খোলা আকাশের নিচে থাকা যাবে না।
২. রাস্তায় যানজটে পড়লে গাড়ির পাশে জায়গা রেখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন যেন বিপদের মুহূর্তে দরজা খোলা যায়।
৩. বাড়ির বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মেইন লাইন বন্ধ করে দিন।
৪. দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন যাতে বাইরে থেকে ময়লা বা ভারী কিছু উড়ে এসে আঘাত করতে না পারে।
৫. টিনশেড বাসা হলে বা নিচু জায়গায় হলে নিরাপদ কোথাও আশ্রয় নিন।
৬. ইন্টারনেট ব্যবহার না করে ফোনে রেডিও শুনতে হবে। ডাটা কানেকশন অন রেখে ফেসবুক স্ক্রল করলে ব্যাটারিও দ্রুত শেষ হবে, নেটওয়ার্কও বেশি ব্যস্ত থাকবে।
৭. কোনোভাবেই ট্যাপের পানি সরাসরি খাওয়া যাবে না। ফুটিয়ে বা ভালো ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে।
৮. খুব বেশি জরুরি না হলে রাস্তায় বের হওয়া নিরাপদ নয়।
৯. কল করে নেটওয়ার্ক বিজি না রেখে এসএমএস ব্যবহার করে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করুন। ডাটা কানেকশন অফ রাখুন।
১০. সর্বোপরি উদার হওয়ার চেষ্টা করুন। বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করার সুযোগ থাকলে সাহায্য করুন। নিজে উপরতলায় থাকলে নিচতলার বসবাসকারীদের দিকে খেয়াল রাখুন। বাসার পাশের টিনশেডের বসবাসকারীদের আশ্রয় দিন।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরে করণীয়-
১. ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে প্রবেশ করবেন না।
২. যত দ্রুত সম্ভব সুরক্ষিত স্থানে চলে যান।
৩. ছিঁড়ে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে হাত দেবেন না।
এই ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে থাকুন। আর সচেতন হোন। বাংলাদেশ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন মোকাবিলায় রোল মডেল হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায়ও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তাই চিন্তিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন। সবাই সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি