Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবহেলিত বনজুঁই মেলে ধরেছে সৌন্দর্য


১৬ মার্চ ২০২১ ১৩:৫২ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১১:২৪

ঋতু বৈচিত্র্যের হাড় কাঁপানো শীতকে বিদায় জানিয়ে ধরায় আগমন ঘটেছে বসন্তের। গাছে গাছে ফুল, আমের মুকুল, পাখির কলরব, ঝরা পাতার মর্মর শব্দ, কচি পাতার উঁকি তা স্পষ্টরূপে জানান দিচ্ছে। বসন্তের আগমনের সাথে সাথে সৌন্দর্য মেলে ধরেছে বনজুঁই। বসন্ত এলেই পথে প্রান্তরে থোকায় থোকায় ফুটে এসব ফুল। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় এই পল্লীতেও পথে প্রান্তরে আপন সৌন্দর্য মেলে ধরেছে সবুজ বহুপত্রী এই ফুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, হল, বিভিন্ন ভবন, মফিজ লেকসহ বিভিন্ন যায়গায় ফুটেছে নজর কাড়ানো এই ফুল।

বিজ্ঞাপন

গ্রামাঞ্চলে মাঠে-ঘাটে, পথে প্রান্তরে প্রায়শই দেখা যায় নাম না জানা নানা প্রজাতির বনফুল। অনেক কবি প্রেমে পড়েছিলেন নানা প্রজাতির বনফুলের। যার মধ্যে ফুল প্রেমীদের মনে সাড়া জাগানিয়া অন্যতম একটি ফুল হলো বনজুঁই। নামটি শুনলে অনেকের কাছেই অপরিচিত মনে হবে। অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠা এই বনফুলটি ভাঁটফুল, ভাটিফুল, ঘেঁটুফুল বা ঘণ্টাকর্ণ নামেই অধিক পরিচিত।

বনজুঁইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেরোডেন-ড্রাম-ইনারমি। ইনফরচুনাটাম প্রজাতির ফুল এটি। প্রায় ৪০০ প্রজাতির বনজুঁই পাওয়া যায়। যাদের আদিনিবাস এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায়। এই ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ। এর মিষ্টি গন্ধ মাতাল করে তোলে ফুলপ্রেমীদের মন। এছাড়া এর মনোমুগ্ধকর সৌরভে প্রজাপতি, মৌমাছি, পিঁপড়াসহ নানা প্রজাতির কীট প্রত্যঙ্গের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। এরা ফুলের সুগন্ধ, সৌরভে ব্যাকুল হওয়া ছাড়াও ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসে।

ছোট আকৃতির এই ফুলটির পুংকেশর,পাপড়ি, পাতা ও কাণ্ড নিখুঁত কারুকার্যে সাজানো। মাঝের পুংকেশর ফুলটির সৌন্দর্য যেন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ার পর লালচে বৃতির মাঝখানে সবুজ ও বেগুনি বীজ দেখতে একেবারে নাকফুলের মতো। মনে হয় যেন কারুকাজ খচিত লালচে পাথরের মাঝে সবুজ অথবা গাঢ় বেগুনি  চকচকে এক ডায়মন্ড খণ্ড বসিয়ে রাখা।

বনজুঁই সৌন্দর্য বর্ধন ছাড়াও নানা গুণে গুণান্বিত। ভেষজ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই উদ্ভিদটির পাতা, শেকড় ও ফুল। ম্যালেরিয়া, চর্মরোগ ও পোকা-মাকড়ের কামড়ে খুবই উপকারী। এই উদ্ভিদের কচি পাতার রস টনিক হিসেবে কাজ করে। পাতায় প্রাপ্ত ক্যামিকেল কৃমিনাশক, জ্বর উপশমকারী হিসেবেও কাজ করে। মূল থেকে প্রাপ্ত ক্যামিকেল অ্যাজমা, টিউমার ও চর্মরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

১৭৫৩ সালে কার্ল লিনিয়াস তার স্পেসিস পান্টেরাম নামক গ্রন্থে এই উদ্ভিদের নাম উল্লেখ করেন ‘জেনাস’ নামে। যার অর্থ ‘ভাগ্য উদ্ভিদ’। এদের বৃতি সাদার পরিবর্তে প্রথমে সবুজ ও পরে পরিপক্ব অবস্থায় লালচে রঙ ধারণ করে। এই লালচে রঙের কারণেই এদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটে অর্থাৎ, অল্প সময়ের মধ্যে ফুলের বৃতিতে যে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তার জন্য পলিনেটর আকৃষ্ট হয় ও পরাগায়ন ঘটায়। কারো কারো মতে এজন্যই কার্ল লিনিয়াস এরকম নামকরণ করেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর