জার্মানিতে আইন— নির্বাহী বোর্ডে থাকতে হবে এক-তৃতীয়াংশ নারী
৭ জানুয়ারি ২০২১ ২১:৩৯ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১১:৫৯
জার্মানির বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী বোর্ডে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নারী নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে নতুন একটি আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা। নতুন এই আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, শেয়ার বাজারে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহী বোর্ডে প্রতি তিনজনে বাধ্যতামূলকভাবে একজন পুরুষ ও একজন নারী রাখতে হবে।
বুধবার (৭ জানুয়ারি) জার্মান মন্ত্রিসভা নতুন এই আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে। জার্মান সংসদ বুন্দেসট্যাগে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের ভোট পেলে খসড়াটি চূড়ান্ত আইনে রূপান্তরিত হবে।
জার্মানির বিচার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, অন্তত ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন এই আইনের প্রভাব পড়বে, যাদের মধ্যে অন্তত ৩০টির নীতিনির্ধারণী বোর্ডে কোনো নারী নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে অন্তত দুই হাজার করে কর্মী আছেন।
নতুন আইনে ২০১৫ সালের একটি আইনের কার্যকারিতা উন্নয়নের জন্য একটি ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি করে তদারকি বোর্ড থাকতে হবে। এই তদারকি বোর্ড সাধারণত শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা নির্বাচিত হয়, যাদের কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। এই বোর্ডেও অন্তত ৩০ শতাংশ নারী থাকতে হবে।
নতুন আইনে কোম্পানিগুলোতে এই ৩০ শতাংশের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে, যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই অধিকাংশ শেয়ারহোল্ডার। এদের মধ্যে জার্মান রেলওয়ে সংস্থা ডাচ ভানও রয়েছে। এছাড়াও যে নির্বাহী বোর্ড প্রতিষ্ঠান চালায়, সেখানে দুইয়ের বেশি সদস্য থাকলে একজন নারীকে রাখতেই হবে। নতুন আইন পাস হলে ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়বে, যাদের নির্বাহী বোর্ডে কোনো নারী নেই।
পরিবার, বয়স্ক নাগরিক, নারী ও তরুণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফ্র্যানজিসকা জিফি নতুন এই আইনকে ‘মাইলফলক’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বোর্ডরুম আর নারীমুক্ত থাকতে পারবে না এখন থেকে। এর মাধ্যমে জার্মানি ভবিষ্যতে নিজেদের দক্ষতা ও সম্ভাবনা আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত হলো।’
তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে নিজ থেকে কেউ কোনো পরিবর্তন আনেনি। তাছাড়া এসব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা খুবই ধীরগতির ছিল।
অলব্রাইট ফাউন্ডেশনের ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বোর্ডরুমে আরও নারী রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, বোর্ডরুমে নারী থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড ও সুইডেন থেকে পিছিয়ে আছে জার্মান বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।
ওই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী বোর্ডের ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। আর জার্মানিতে এর পরিমাণ মাত্র ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। তাছাড়া জার্মানির তালিকাভুক্ত ৩০টি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র চারটির নির্বাহী বোর্ডে একজনের বেশি নারী সদস্য আছেন।
সিমেন্সের সাবেক নির্বাহী জ্যানিনা কুগেল এখন কাজ করছেন সমঅধিকারকর্মী হিসেবে। ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘নতুন এই কোটা পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সিগন্যাল দিচ্ছে। গত ১৫ বছর ধরে জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে একজন নারী থাকায় অনেকেই মনে করেন, জার্মান বোধহয় অনেক প্রগতিশীল একটি দেশ, যা প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়।’
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রেও শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহী বোর্ডে লিঙ্গ বৈষম্য কমানো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অঙ্গরাজ্য হিসেবে বোর্ড অব ডিরেক্টরে একাধিক নারী থাকা বাধ্যতামূলক করে ক্যালিফোর্নিয়ায়। অন্যদিকে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার নাসডাক বোর্ড রুমে লিঙ্গ বৈচিত্র্য আনার জন্য নতুন নিয়ম চালুর উদ্যোগ নেয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে জমা দেওয়া ওই নিয়মে বলা হয়েছে, নাসডাকে শেয়ারবাজারে নিবন্ধন করতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের একাধিক সদস্য বিশিষ্ট পরিচালক কমিটিতে অন্তত একজন নারী ও একজন ভিন্ন জাতি বা বর্ণ বা এলজিবিটিকিউ (ভিন্ন যৌনবৈশিষ্ট্যের ব্যক্তি) কমিউনিটির সদস্য থাকতেই হবে।
জার্মান সংসদ বুন্দেসটাগ জার্মানি নারীদের অংশগ্রহণ নির্বাহী বোর্ড বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান