Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের দাম ৮০ লাখ, কিনেছেন ভারতীয় ডাক্তার!


২ নভেম্বর ২০২০ ১৮:০৭ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১২:০৯

‘আরব্য রজনী’র সেই আশ্চর্য প্রদীপের কথা কে না জানে। এতদিন ধরে গল্পের বইয়ের পাতায় বন্দি থাকা সেই আশ্চর্য প্রদীপের দেখা মিলল বাস্তবে, যে প্রদীপে ঘষা দিলেই বের হয়ে আসে দৈত্যরূপী ‘জিনি’। সম্পদ আর সৌভাগ্যের ‘পরশপাথর’ এই প্রদীপের সন্ধান নিয়ে হাজির হলেন ভারতের এক সাধু বাবা। তা দেখে ফেলেন একজন চিকিৎসক। অনেক বলে-কয়ে শেষ পর্যন্ত সেই প্রদীপের মালিক বনে গেলেন সেই চিকিৎসক। এর জন্য অবশ্য তাকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা (৭০ লাখ ভারতীয় রুপি)। টাকা যাক, আজীবন অনন্ত সৌভাগ্য তো সঙ্গী হলো তার!

বিজ্ঞাপন

আলাদীন, আশ্চর্য প্রদীপ, প্রদীপের দৈত্য— খুব কি খটকা লাগছে পড়ে? মনে প্রশ্ন জাগছে— আদৌ কি সেই প্রদীপের বাস্তব অস্তিত্ব থাকা সম্ভব? ‘আরব্য রজনী’ কি নিছকই কল্প কাহিনী নয়? নাকি ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু’টাই সত্য হলো?

ঘটনা হচ্ছে— সত্যি সত্যিই ভারতের একজন চিকিৎসক বিশ্বাস করেছিলেন, তিনি দেখা পেয়েছেন আশ্চর্য প্রদীপের। এবং সেটা সাধু বাবার মারফতেই। সেই প্রদীপের ‘আশ্চর্য ক্ষমতা’ও প্রত্যক্ষ করেছেন। সে কারণেই মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন প্রদীপ কেনার জন্য। ৭০ লাখ রুপিও খরচ করেন সে জন্য।

কিন্তু হায়! আশ্চর্য প্রদীপের নামে যা কিছু দেখেছেন, তার সবই যে ছিল বানোয়াট, দৈত্যের হাজির হওয়া থেকে শুরু করে প্রদীপের আরও গুণাগুণের সবই যে ছিল তাকে স্রেফ ধাপ্পা দেওয়ার জন্য— সেটি কেবল তখনই বুঝতে পেরেছেন সেই চিকিৎসক, যখন ৭০ লাখ রুপি দিয়ে প্রদীপটি কিনে নিয়ে গেছেন ঘরে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ঘটনাটি ভারতের উত্তর প্রদেশের। আর ‘সাধু বাবা’র কাছে প্রতারিত হওয়া সেই চিকিৎসক ডা. লায়েক খান। নিজের ভুল বুঝতে পেরে পরে অবশ্য পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। পুলিশের হাতে সেই ‘সাধু বাবা’ আর তার স্যাঙ্গাত ধরাও পড়েছেন।

পুলিশ বলছে, ওই ভণ্ড সাধু বেশ কিছুদিনের চেষ্টায় এমন এক আবহ তৈরি করেছিল চিকিৎসককে ঘিরে, যাতে তিনি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছেন, সত্যি সত্যিই ওই প্রদীপটি জাদুর প্রদীপ। আর সে কারণেই এর জন্য ৭০ লাখ রুপি খরচ করেন তিনি।

ডা. লায়েকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) পুলিশ গ্রেফতার করে ওই দুই প্রতারককে। তাদের এখনো পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা অমিত রায় জানিয়েছেন, এই দুই প্রতারকের একজনের স্ত্রীও এ ঘটনায় জড়িত। তিনি পলাতক রয়েছেন। পুলিশ তাকেও খুঁজছে।

বিজ্ঞাপন

ডা. লায়েক খান এনডিটিভিকে বলেন, তিনি এক নারীর চিকিৎসা করছিলেন। তার সঙ্গেই উপস্থিত ছিল ওই দুই প্রতারক। ডা. লায়েক ভেবেছিলেন, ওই নারী তাদের মা। পরে তারা ডা. লায়েকের সঙ্গে এ কথা, ও কথা বলে সখ্য গড়ে তোলে। তারা জানায়, তারা এক ‘সাধু বাবা’র সন্ধান জানেন যিনি অসাধ্য সাধন করেন। ডা. লায়েক চাইলে তারা ওই ‘বাবা’র সঙ্গে তার দেখা করানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন।

ডা. লায়েক বলেন, তারা এমনভাবে আমার মগজ ধোলাই করে যে একপর্যায়ে আমি তাদের সেই সাধু বাবার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হই। তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই আশ্চর্য প্রদীপ ও প্রদীপের দৈত্যও দেখতে পাই। এর মধ্যেই একদিন আমি বলি, আমি দৈত্যকে ধরতে বা প্রদীপটি নিতে পারি কি না। তারা বলেন, এটা আমি নিতে পারব না। এতে আমার ঘোর অমঙ্গল হতে পারে। আমিও মরিয়া হয়ে উঠি প্রদীপটি পাওয়ার জন্য।

শেষ পর্যন্ত ৭০ লাখ রুপিতে দফারফা হয়। প্রদীপকে ঘরে নিয়ে আসেন ডা. লায়েক। তাকে বলা হয়, এখন থেকে স্বাস্থ্য, সম্পদ আর সৌভাগ্য ডা. লায়েকের চিরসঙ্গী।

তবে বাসায় গিয়েই ভুল ভাঙে ডা. লায়েকের। এতদিন যে মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে ন্যূনতম বিবেচনাবোধ হারিয়ে বসেছিলেন, সেটি বুঝতে পারেন। জিনি তো দূরের কথা, ভালোমতো তাকিয়েই তিনি এবার উপলব্ধি করেন, এই প্রদীপের সঙ্গে আর দশটা প্রদীপের কোনোই পার্থক্য নেই। নিছক প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। আর তারপরই পুলিশের শরণাপন্ন হন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, ডা. লায়েকই প্রথম নন, এমন আরও অনেককেই প্রতারণার জাল বিছিয়ে আটকেছেন ওই প্রতারকরা। এর মাধ্যমে কোটি কোটি রুপি হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

আরব্য রজনী আশ্চর্য প্রদীপ টপ নিউজ দৈত্য প্রতারণা ভারতীয় চিকিৎসক সাধু বাবা