Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শতবর্ষে আমেরিকান নারীর ভোটাধিকার, তবুও পিছিয়ে সমঅধিকার


২৭ আগস্ট ২০২০ ২৩:০৬ | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২০ ২৩:৩৪

পৃথিবীতে গণতন্ত্রের ইতিহাস পুরনো হলেও সকলের ভোটাধিকার অর্জনের ইতিহাস নতুনই বলা যায়। আধুনিক গণতন্ত্রের সূতিকাগার ব্রিটেনে নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার অর্জন করে ১৯১৮ সালে। আর যুক্তরাষ্ট্রে তারও দুই বছর পর। ১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট বিখ্যাত ১৯-তম অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পাস করার মাধ্যমে আমেরিকান সংবিধানে নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু আমেরিকান নারীদের ভোটাধিকার প্রাপ্তির শতবর্ষ পার হলেও এখনও সেদেশে একজনও নারী রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হননি, যেক্ষেত্রে এগিয়ে আছে এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশ। এমনকি এখনও বিশ্বজুড়ে চলা করোনা অতিমারি মোকাবেলায় নারী রাষ্ট্রপ্রধানরা তুলনামূলক বেশি সফল বলেই সংবাদে প্রকাশ।

বিজ্ঞাপন

বিংশ শতাব্দীর গোঁড়ার দিকে আরও কিছু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নারীদের ভোটাধিকার দেয়। তবে তা নামমাত্র। বেশিরভাগ রাষ্ট্রে নারীরা অধিকার পায় আরও বহু পরে। যেমন সৌদি আরবে এই সেদিন ২০০৫ সালে স্থানীয় নির্বাচনে নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার অর্জন করে। মূলত, ১৮৯৩ সালের আগে আধুনিক কোনো রাষ্ট্রেই নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। রাষ্ট্র নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে রেখেছিলো। কারণ রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে উঠার সময় থেকেই ভাববাদী দর্শন ও পিতৃতান্ত্রিক কুসংস্কারের প্রভাব ছিল। ফলে মানুষের জন্য মানবিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে ওঠেনি ও সেই বোধও জাগ্রত হয়নি।

বিজ্ঞাপন

ভাবতেও অবাক লাগে, উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর আগেই বিশ্ব কতদূর এগিয়ে গেছে। বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা ও রাজনীতিতে এগিয়ে গেলেও সব মানুষের সমান অধিকারে কতটা পিছিয়ে ছিল এই দুনিয়া। অথচ, ১৯২০ সালের আগে একটি মহাযুদ্ধ হয়ে গেছে। ইউরোপে ফরাসি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লবও সম্পন্ন। বিজ্ঞানের নব-উত্থানে যন্ত্রের ব্যবহার রমরমা। সাহিত্য ও কলায় রোমান্টিকতাবাদের যুগ নিয়ে চিন্তানায়কদের হুড়াহুড়ি। এরই মধ্যে রাশিয়ায় লেনিনের নেতৃত্বে হয়ে গেছে সাম্যের বিপ্লব। আর উল্টোপিঠে— তখনও গণতন্ত্রে সকল নাগরিক ভোট দেওয়ার অধিকার নেই। ভোট দেওয়ার অধিকার তখনও শুধুমাত্র এক শ্রেণীর পুরুষদের হাতে।

ভোটাধিকারের দাবিতে বহু দশক ধরে নারীরা আন্দোলন করছিলেন। আর এই  আন্দোলনের সময়কালের দীর্ঘ ব্যপ্তি বলে দেয়, নারীর সমঅধিকারের প্রতি পুরুষদের কোনো স্পষ্ট ও জোর সমর্থন ছিল না। যদিও হাতেগোনা কিছু পুরুষ নারী অধিকারের লড়াই ও তাত্ত্বিক আলোচনায় সামিল হয়েছিলো তবে সমতার প্রশ্নে বড় অংশই নীরব থেকেছে। পুরুষ চিন্তানায়করাও যদি নারীদের সমান মানুষ মনে করতেন তবে সামান্য মত দেওয়ার অধিকার পেতে এতদিন লাগতো না নারীদের। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় রাষ্ট্রের প্রধান প্রেসিডেন্ট, প্রধান নির্বাহী নাকি রাজা হবেন এ নিয়ে বিতর্ক হয় এবং তাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও নারী ও পুরুষ যে সমান এই বোধ তাদের জাগ্রত হয়নি। এর কারণ— তখনও মানুষ সমান, নারী পুরুষ সমান এমন চিন্তা করতে তারা শেখেননি।

যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের অধিকার আদায়ে লম্বা সময় ধরে নারীদের কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম চালাতে হয়েছেন নারীদের। বহু সাহিত্য, শিল্প ও প্রচারণা চালিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হয়েছে। সমাজের একেবারে বুদ্ধিজীবী শ্রেণী থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বোধ জাগ্রত করতে হয়েছে। পিতৃতন্ত্রের ডাহা মিথ্যা বয়ানকে খণ্ডন করতে হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৮০০ সালেই নারীরা ভোটাধিকারের দাবিতে সোচ্চার হোন এবং তখনই সংগঠিত হয়ে দাবি দাওয়া উত্থাপন করেন। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সংশোধনী প্রস্তাব কংগ্রেসে উত্থাপিত হতেই লেগে যায় ৭৮ বছর। ১৮৬৯ সালে গঠন করা হয় নারী আন্দোলনের জাতীয় প্লাটফর্ম ন্যাশনাল ওম্যান সাফরেজ অ্যাসোসিয়েশন (এনডব্লিউএসএ)। ওই অ্যাসোসিয়েশনের ১০ বছরের চেষ্টায় ১৮৭৮ সালে কংগ্রেসে সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ১৯২০ সালের আগস্টে অর্থাৎ ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম শুরুর ১২০ বছর পর সেই সংশোধনী সংবিধানের অংশ হয়।

সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজ্য সংশোধনী মেনে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ১৯তম সংশোধনীর মাধ্যমে নারীরা ভোটাধিকার পায়। তবে সব নারী নয়। তখনও কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়নি। তবে সে বছরই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অন্তত নারীদের ভোট দেওয়ার যোগ্য বলে স্বীকৃত দেয়। তাতে অন্তত শুরুটা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ২৬ আগস্ট দিনটিকে নারী সমঅধিকার দিবস বলে ঘোষণা করেন।

চলছে ২০২০। পেরিয়ে গেছে শতবর্ষ। কিন্তু এখনও যুক্তরাষ্ট্রে একজনও নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। রাজনীতি ছাড়াও সমাজ, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিকসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিরাজ করছে বৈষম্য। এখনও সেদেশে নারী প্রতিষ্ঠানপ্রধান হাতে গোণা, বেতন বৈষম্য ভয়াবহ। আয় বৈষম্য রয়েছে চলচ্চিত্র, বিনোদন ও খেলাধুলার ক্ষেত্রেও। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দল বিশ্ব শিরোপা জেতার পর পুরুষ ফুটবল দলের সঙ্গে তাদের আয় বৈষম্যের ভয়াবহ তফাত সবার দৃষ্টিগোচর হয়। কিছুদিন আগেও যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে হ্যাশট্যাগ মিটু আন্দোলনে মুখ খুলতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব পর্যায়ের নারী।

তাই ঘুরেফিরেই আলোচনায় আসছে, নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়েছে তবে সমঅধিকার নয়। পিতৃতন্ত্র হাজার বছর ধরে এমন এমন সব ধারণা ঢুকিয়েছে তাতে তারা জানে নারীরা পুরুষের সমান, তবুও পিতৃতান্ত্রিক অহমে নারীর কর্তৃত্ব মেনে নিতে রাজি নয়। যেমন একজন নারী পড়ালেখা করলে জটিলতর বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন সব ক্ষেত্রেই পুরুষের সমান পারদর্শী। বিশ্বের নানা প্রান্তে রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীরা দক্ষতা দেখিয়েছে। সুতরাং নারীও পুরুষ যে সমান তা নিয়ে আর সন্দেহ করার কোনো দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবুও পিতৃতান্ত্রিক কুসংস্কার আর অহমের কারণে নারীর যোগ্যতাকে স্বীকার করতে অনেকেরই অনিচ্ছা। তাই, আমেরিকান নারীদের ভোটাধিকার অর্জনের শতবর্ষ উদযাপনে সেই প্রশ্নটাই নতুন করে উঠছে, সমঅধিকার কবে পাবে নারী?

আইন করে নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছে, তবে সমাজের পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো না ভাঙ্গলে নারীদের প্রকৃতমুক্তি সম্ভব নয়। ফলে বিশ্বে এখন নারী আন্দোলন আগের মতোই প্রাসঙ্গিক। যুক্তরাষ্ট্রে তা হচ্ছেও। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষে মানুষে সমতা প্রতিষ্ঠান আন্দোলন সে বর্ণভিত্তিক বা লিঙ্গভিত্তিক হোক— সব আন্দোলনের প্রধান শক্তি নারীরা।

১৯-তম অ্যামেন্ডমেন্ট বিল আমেরিকা আমেরিকান নারী টপ নিউজ নারী নারীর ভোটাধিকার যুক্তরাষ্ট্রে নারীর ভোটাধিকার

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর