Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমেরিকায় আড়াই কোটি মানুষের চাকরি নেই, নেপথ্যে কী?


২৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫৬ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ১৪:০৮

ইলাস্ট্রেশন – সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বিশ্বমহামারি কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাবের আলোচনায় বার বার উঠে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ নাগরিক করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগে যে পদে কাজ করতেন, সংক্রমণের ছয় সপ্তাহের মাথায় তারা সেই পদ হারিয়েছেন – বলে নিজেরাই জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এখানে অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অধীনে যারা চাকরি হারানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে আবেদন করেছেন তাদের তালিকার ভিত্তিতেই ওই সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মজীবী মানুষের ১৫ শতাংশ। শুধু যে চাকরিজীবীরা চাকরি হারিয়েছেন তা না, পুঁজি হারাতে বসেছেন দেশটির  ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের উদ্যোক্তারাও। তাদের জন্যেও সরকারি প্রণোদনা থেকে ৩৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এ আলোচনায় সবকিছু শুধু সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে। প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে মানবিক জীবন ও সম্পর্কের আখ্যান। বিশ্বমহামারির ভয় ও তা কাটিয়ে উঠবার সাহসও অপাংক্তেয় নয়। আমেরিকায় কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে বেকার হয়ে পড়া কয়েকজনের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে কথা বলেছেন বিবিসির হেলাইয়ার চেওং। তাদের নেপথ্যের  কাহিনি এরকম –

কেরিঅ্যান ব্যালানকো

বয়স ৩০ বছর। ইলিনয়স অঙ্গরাজ্যের শিকাগোতে বসবাস করেন। তিনি ছিলেন ব্রুকফিল্ড চিড়িয়াখানার প্রাণিরক্ষক। খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ পদ। এই পদে চাকরি করতে চার বছর মেয়াদী জীববিজ্ঞান অনুষদের স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। বিনাবেতনে কমপক্ষে তিন মাস ইন্টার্নের পর চাকরি স্থায়ী হয়। যুক্তরাষ্ট্রে চিড়িয়াখানার চাকরিকে নিরাপদ মনে করা হয় এবং অপরিহার্যও। কিন্তু সবচেয়ে নবীন কর্মী হিসেবে তার চাকরি চলে গেছে। তার স্বামী কাজ করতেন রেস্টুরেন্টে তার চাকরি চলে গেছে ব্যালানকোরও দুই সপ্তাহ আগে। তারপরও প্রণোদনার সরকারি চেক তারা বুঝে পেয়েছেন। তাই দুর্দিনেও তারা কিছুটা আনন্দিত। কিন্তু ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে তাকে কৌশলি হতে হচ্ছে। তবু তার আরও দুঃখ যে তিনি আর চিড়িয়াখানায় ফেরত যেতে পারবেন না।

স্ট্যানলি চেন

৫৯ বছর বয়সী মটরগাড়ির টেকনিসিয়ান। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টোনে বসবাস করেন। ১১ বছর ধরে তিনি লেক্সাস গাড়ির এক ডিলারের আউটলেটে টেকনিসিয়ানের কাজ করতেন। তার চাকরি চলে যায় এপ্রিলে। তার স্ত্রী ডায়না চেন কাজ করতেন এক বিউটি পার্লারে। তিনিও এখন কর্মহীন। স্টানলির টেকনিসিয়ান হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা ৩০ বছরের। আমেরিকায় আসার পর এই প্রথম তিনি বেকারত্বের স্বাদ পেলেন।সরকারি প্রণোদনার প্রথম ধাপের অর্থ পেয়ে তিনি কিছুটা আনন্দিত। এখন তার সময় কাটে স্ত্রীকে বাড়ির কাজে সাহায্য করে। তারা দুইজনই শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাই খুব বেশি ভারী কাজও তারা করতে পারেন না।

র‍্যাচেল স্টার্নার

বয়স ৩৫ বছর। নিউইয়র্কের একটি শিশু বিনোদন পার্কের স্টেজ ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। ১২ মার্চে ঘোষণা দেওয়া হয় এক মাসের জন্য সব শো স্থগিত। তারপর থেকেই তিনি বেকার। এখন তিনি ফটোশপ অ্যাপ্লিকেশন শিখছেন এবং চেষ্টা করছেন অনলাইনে কাজ করে উপার্জন করার। তবে তার আগের কাজকে তিনি ভুলতে পারেন না। থিয়েটারের প্রতি তার অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।

ডানিয়েল ভেক্টরি

৪০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী। লুসিয়ানার নিউ অরল্যান্সে একটি পানশালা রয়েছে তার।টুরিস্ট স্পট হিসেবে তার ব্যবসা খুব ভালোই ছিল। লকডাউনের প্রথম দিকে তারা প্রিপ্যাকেজিং পদ্ধতিতে কিছুদিন বিক্রিও করেছে। কিন্তু পরে রাজ্যপ্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সম্পূর্নভাবে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে। তারপর থেকে তিনি বেকার, সরকারি ক্ষতিপূরণ চেকের জন্য আবেদনও করেছেন, কিন্তু কী কারণে জানেন না তার টাকা অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। তিনি জানেন না দুই সন্তানের পিতা হিসেবে এরপর তার কী করা উচিত?

জন ডিগনান

৫২ বছর বয়সী রিয়েল এস্টেট এজেন্ট। বসবাস করেন নেভাডার লাস ভেগাসে। তিনি কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন ছয় মাস আগেই মাঝে নিজেই একটি এজেন্সি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। চাকরির সময়কার জমানো টাকা দিয়ে তিনি ছয়মাস চলেছেন। কিন্তু করোনা আউটব্রেকের পর ব্যবসার বেহাল দশা। মানুষ আর কখনও জমি বা ফ্লাট কিনবে বলে মনে হচ্ছে না তার। তিনি ১২০০ ডলারের প্রণোদনা চেকের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কনো টাকা পাননি। বাজারের ব্যাপারে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কোনো তথ্যও নেই। সামনে খুব হতাশাজনক সময় আসছে বলে তার মনে হয়।

এসব পেশার বাইরে ইয়োগা স্টুডিওর মালিক, কফি শপের ম্যানেজার, মেনজ স্যালনের মালিক, পানশালার কর্মী, বই বিক্রেতা, ফ্যাশন ডিজাইন ডিরেক্ট্রর পদে কর্মরতরা চাকরি হারানো বা ব্যবসা বন্ধের কারণ দেখিয়ে সরকারি প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত সেই প্রণোদনা চেক প্রথম দফায় অনেকেই পেয়েছেন, অনেকেই দ্বিতীয় দফায় পাবেন বলে আশা করছেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে রিপাবলিকান দলের প্রেসসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে করোনা প্রণোদনার নামে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করছেন কী না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ বিশ্বমহামারি মোকাবিলার প্রাক্কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তিও যদি এরকম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়, তাহলে করোনা পরবর্তী বিশ্বে কার চাকরি কতোটা নিরাপদ, তা নিয়ে এখন থেকে ভাবতে হবে। এছাড়াও চাকরি বা ব্যবসায় চালানোর যে ট্রাডিশনাল ফরম্যাট আছে তার বাইরে নতুন ফরম্যাট নিয়ে ভাবার অবকাশ তৈরি করা দরকার।

আরও পড়ুন -
হারিয়ে গেল ১০ বছরের অর্জন, ৪ সপ্তাহে বেকার ২ কোটি মার্কিনি
করোনা ঠেকাতে ২ ট্রিলিয়ন ডলার প্রণোদনা—মার্কিন কংগ্রেসে বিল পাস

কোভিড-১৯ চাকরি হারানো টপ নিউজ নভেল করোনাভাইরাস প্রণোদনা যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর