Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একটি দিন বাবার জন্য


১৬ জুন ২০১৯ ১৪:৩৮ | আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ১৭:৪০

রিকশা চালকের পরনে চাপা সাদা প্যান্ট আর একটা ফরমাল হাফহাতা শার্ট। পায়ে চামড়ার চটি স্যান্ডেল। রিকশা চালনায় আড়ষ্টতা দেখে বুঝতে পারলাম এই কাজে তিনি অভ্যস্ত নন। গল্পের ছলে জিজ্ঞাসা করলাম সে কথা। জানতে পারলাম আগে এক বাসায় দারোয়ানের কাজ করতেন। তার স্ত্রী অন্যের বাসায় কাজ করেন। দুজনের মিলিত আয়েও দুই মেয়ের লেখাপড়া আর সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই কিছু বেশি উপার্জনের আশায় বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।

বিজ্ঞাপন

সন্তানদের নিশ্চিন্ত জীবন উপহার দিতে অপেক্ষাকৃত আরামের কাজ দারোয়ানি ছেড়ে রিকশা চালানোর মতো কায়িক শ্রমকে বেছে নিয়েছেন একজন বাবা। আবার ইতিহাস বলে, মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের সুস্থতার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন।

 

এরকম অসংখ্য বাবা আছেন যারা সন্তানের হাসিমুখ দেখতে বা সন্তানকে একটি নিশ্চিন্ত জীবন উপহার দিতে হাসিমুখে বিলিয়ে দেন নিজের যত সুখ-স্বচ্ছন্দ৷ বছরের একটি দিন তাই বাবার জন্য। একটি দিন পিতৃত্বের সেই ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের।

প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের ৫২টি দেশে পালিত হয় আন্তর্জাতিক পিতৃ দিবস। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকবছর ধরে সাড়ম্বরে পালিত হয় দিনটি।

মায়ের পাশাপাশি বাবাও যে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই মূলত পালিত হয় পিতৃ দিবস। সেই দায়িত্বশীলতার প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা প্রকাশই এর উদ্দেশ্য৷

 

১৯০৯ সালের কোন একদিন ওয়াশিংটন সিটির এক গির্জার পুরোহিত মা’কে নিয়ে চমৎকার সব কথা বলছিলেন। শুনতে শুনতেই সনোরা স্মার্ট ডডের মাথায় আসে, শুধুই মা কেন এমন সব কথা তো বাবাদের নিয়েও বলা উচিত। ডড আবার তার বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। সেই জন্যই সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে পরের বছরের ১৯ জুন তারিখ থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।
অন্য ধারণা মতে, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়।

যে তারিখেই শুরু হোক না কেন, শুরুর দিকে বেশ হাসিঠাট্টা আর টানাপোড়েন থাকলেও আমেরিকায় জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পায় দিবসটি। বাবা দিবসকে জাতীয়ভাবে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য ১৯১৩ সালে আমেরিকার সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়। প্রায় এক যুগ পর, ১৯২৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। এরও ৪২ বছর পর, ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন পিতৃ দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

 

তারপর থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পিতৃ দিবস হিসেবে পালিত হয়। অনেকেই এমন দিন পালনকে গুরুত্বহীন মনে করলেও বাবা দিবসে সন্তানরা তাদের বাবাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ পান, যা বছরের অন্য দিন সেভাবে সম্ভব হয় না। যেসব সন্তান বাবা-মায়ের ব্যাপারে উদাসীন, তাদেরকেও এমন দিন বাবা-মায়ের অবদান মনে করায়।
পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়ে, যা একজন মানুষের সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

দেশ ও সংস্কৃতিভেদে বাবা দিবস বিভিন্নভাবে পালিত হয়। উপহার দিয়ে হোক কী অভিনন্দন জানিয়ে, সন্তানরা এই দিন বাবার জন্য তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে আনন্দ পায়। আর তাদের আনন্দেই আনন্দিত হয় একজন বাবা।

তাই দ্বিধা দূর করে এই বাবা-দিবসেই চলুন বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই। হাসি ফোঁটাই তাদের মুখে। পৃথিবীর সব বাবার জন্য বাবা দিবসের শুভেচ্ছা।

 

সারাবাংলা/টিসি

বাবা দিবস

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর