চোখ বুলিয়ে নিন শখের অ্যাকুরিয়ামে রাখা দামি মাছের তালিকায়
২২ মার্চ ২০১৯ ০৭:০২ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯ ১৩:০৩
বিত্তবানরা সবাই অ্যাকুরিয়াম বা চৌবাচ্চায় শখের বশে মাছ পালন করেন। এসব মাছের দর-দামেও রয়েছে বেশ হের-ফের। অ্যাকুরিয়ামে রাখা এক একটি মাছের দাম হতে পারে হাজার টাকা থেকে কোটি টাকাও! মাছের এমন দামের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয় মাছটি দেখতে কেমন, কতটা সহজলভ্য অথবা প্রজনন ক্ষমতার ওপর।
পৃথিবীতে এ পর্যন্ত বিক্রি হওয়া সবচেয়ে দামি মাছটি কেনা হয়েছিল খাবার হিসেবে ভোগের উদ্দেশ্যে। প্রায় ৩১ লাখ ডলার মূল্যে জাপানে বিক্রি হয়েছিল সেই ব্লুফিন টুনাটি। তবে এবার চলুন দেখা যাক, শখের তোলা আশি হলে, অ্যাকুরিয়ামের মাছের তোলা কত হতে পারে!
১. সিলভার আরোওয়ানা, মূল্য ৪ লাখ ডলার বা ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা
কেন এত দামি মাছ?
সিলভার আরোওয়ানা প্রজাতির মাছগুলোর মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে সেটির মূল্য বাংলাদেশি অর্থে ৩ কোটি টাকারও বেশি। একুরিয়াম মাছের ইনড্রাস্ট্রিতে সিলভার আরোওয়ানাকে বিবেচনা করা হয় সবচেয়ে দামি মাছ হিসেবে। সিলভার আরোওয়ানা দুর্লভ হওয়ার এই মাছটির মূল্য বেশি। আরেকটি কারণ, নজরকাড়া এই মাছটির বংশ বিস্তারের প্রবণতাও খুব কম।
কোথায় পাওয়া যায়:
এশিয়ার সমুদ্রে মোট ৪ প্রজাতির আরোওয়ানা মাছ পাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বেশ কয়েক প্রজাতির আরোওয়ানার দেখা মিলে। তবে ঈষৎ রুপালি-সাদা বর্ণের আরোওয়ানাই ক্রেতাদের কাছে বেশি জনপ্রিয়।
মাছটির পরিচর্যা:
সিলভার আরোওয়ানা তিন ফুট পর্যন্ত বড় হতে পারে। সংবেদনশীল এই মাছটিকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হলে পেশাদার মৎস পরিচর্যাবিদের প্রয়োজন। একুরিয়ামে থাকতে হবে ২৫০ গ্যালন বা ৯৪৭ লিটার পানি।
খাদ্যভ্যাসে এই মাছ মাংসাশী। তাই ছোট মাছ, শামুক ও পোকামকাড় এরা খেয়ে থাকে। আরোওয়ানা লালন-পালন বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। তবে কোটি টাকা খরচ করে যিনি সিলভার আরোওয়ানা কিনবেন, তিনি নিশ্চয়ই মাছ পালনের খরচা দেওয়ারও সামর্থ্য রাখেন।
এছাড়া, একটা রটনা রয়েছে আরোওয়ানা মাছ নিয়ে। অনেকে বলেন আরোওয়ানা পালন করলে, জীবনে সমৃদ্ধি আসে, খারাপ প্রভাব দূর হয় ও সৌভাগ্যের দেখা পাওয়া যায়।
২. পলকা ডট স্টিনগ্রে, দাম ১ লাখ ডলার বা ৮৪ লাখ টাকা
কেন এত দামি মাছ?
স্ট্রিনগে প্রজাতির মাছগুলোর মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে সেটি হচ্ছে পলকা ডট স্টিনগ্রে। এটি দেখতেও অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। কালো শরীরে সাদা সাদা ডট থাকে। বড় একুরিয়ামে কালো এই মাছটি যখন স্বচ্ছ তলদেশে ঘুরে বেড়ায় তখন দেখতে অসাধারণ লাগে।
কোথায় পাওয়া যায়:
দুর্লভ এই মাছটি পাওয়া যায় ব্রাজিলে ও প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু জায়গায়।
মাছটির পরিচর্যা:
পলকা ডট স্টিনগ্রে বড় হয় সর্বোচ্চ ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত। তাই এটি পালনে একুরিয়ামে প্রয়োজন ১৮৯২ লিটার বা ৫০০ গ্যালন পানি। স্ট্রিনগের হজমশক্তি খুব ভালো। তাই মাছটিকে অন্তত দিনে দুবার খাবার দিতে হয়। খাবারের মধ্যে রয়েছে ছোট মাছ ও জলজ পোকামাকড়।
৩. পেপারমিন্ট অ্যাঞ্জেলফিশ, দাম ৩০ হাজার ডলার বা ২৫ লাখ টাকা
কেন এত দামি মাছ?
পেপারমিন্ট অ্যাঞ্জেল ফিশ একুরিয়ামের খুবই পরিচিত মাছ। কমলা রঙের শরীরে সাদা ডোরাকাটা এই মাছ খুবই দুষ্প্রাপ্য। মাছটির জনসমক্ষে শুধু দর্শন মেলে হনলুলুর ওয়াইকিকি একুরিয়ামে।
কোথায় পাওয়া যায়:
এই মাছটি আরও পাওয়া যায় পূর্ব-মধ্য প্রশান্ত মহাসাগার ও নিউজিল্যান্ডের কুক দ্বীপে।
মাছটির পরিচর্যা:
পেপারমিন্ট অ্যাঞ্জেলফিশ বেড়ে উঠে ২.৫ ইঞ্জির সমান। মাছটির সুস্থভাবে বাঁচতে অ্যাকুরিয়ামে প্রয়োজন ৪৭৩ লিটার বা ১২৫ গ্যালন পানির। এটি ভারসাম্যপূর্ণ উদ্ভিদজ ও মাংসপূর্ণ খাবার খেয়ে থাকে।
এছাড়া,
বিভিন্ন প্রজাতির অ্যাঞ্জেলফিশ বিভিন্ন একুরিয়ামে দেখতে পাওয়া যায়। তেমনি মাস্কড অ্যাঞ্জেলফিশও বেশ জনপ্রিয়। তবে পেপারমিন্ট অ্যাঞ্জেলফিশের দাম কিছুটা কম, প্রায় ২৫ হাজার ডলার। এটিও খুবই দুর্লভ, পাওয়া যায় হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে। তবে সেখানে এ মাছ শিকার করা নিষিদ্ধ।
১৯৭২ সালে প্রথম মাস্কড অ্যাঞ্জেলফিশের খোঁজ পাওয়া যায়। এটি সর্বোচ্চ ৮ ইঞ্জি পর্যন্ত বড় হয়। এই গায়ের রং অন্য অ্যাঞ্জেলফিশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল। মাস্কড অ্যাঞ্জেলফিশের বেশ অদ্ভূত কিছু ব্যাপার আছে। এটি মেয়ে হয়ে জন্মালেও পরবর্তীতে কিছু পুরুষ হয়ে যায়। সমুদ্র থেকে বছরে জীবন্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয় মাত্র এক থেকে দুটি মাছ। তাই এটির দাম এত বেশি।
৪. ব্ল্যাডফিন ব্যাসলেট, দাম ১০ হাজার ডলার বা ৮ লাখ টাকা
কেন এত দামি মাছ?
এই মাছটি দেখতে এক কথায় চমৎকার। ব্ল্যাডফিন ব্যাসলেট মাছটির রঙ বিন্যাস যে কারোই ভালো লাগবে। মাছটি দুর্লভ হওয়ায় এটি বেশ মূল্যবানও বটে।
কোথায় পাওয়া যায়:
ব্ল্যাডফিন ব্যাসলেট প্রধানত পাওয়া যায় ক্যারিবীয় অঞ্চলে। সমুদ্রের ৫০০ ফুট গভীরে থাকে মাছটি।
মাছটির পরিচর্যা:
ব্ল্যাডফিন লম্বায় বড় হয় মাত্র ১.৫ ইঞ্চি। ১৯০ লিটার বা ৫০ গ্যালন পানিসম্পন্ন যেকোনো একুরিয়ামে এই মাছ পালন করা যায়। ব্ল্যাডফিন সাঁতার কাটতে ও একুরিয়ামের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। চিংড়ি ও অন্যান্য পোকা মাকড় মাছটির প্রিয় খাবার।
৫. নেপচুন গ্রুপার, দাম ৬ হাজার ডলার, বাংলাদেশি অর্থে ৫ লাখ টাকা
কেন এত দামি মাছ?
এই মাছ পাওয়া যায় সমুদ্রের গভীরে। খুঁজে পাওয়া সহজ নয় তাই এত মূল্যবান। নেপচুন গ্রুপারের কম বয়সী মাছের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
কোথায় পাওয়া যায়:
জাপান ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এই মাছ পাওয়া যায়। খাবার জন্যও বাণিজ্যের শিকারও হতে হয় নেপচুন গ্রুপারকে।
মাছটির পরিচর্যা
নেপচুন গ্রুপারকে ধরার পর বিশেষ ব্যবস্থায় একুরিয়ামে আনা হয়। নয়তো মাছটির বন্দিদশায় মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অ্যাকুরিয়ামে টিকে থাকার জন্য ৭৫৭ লিটার বা ২০০ গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়। নেপচুন গ্রুপার ছোট চিংড়ি, স্কুইড ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে।
সারাবাংলা/এনএইচ