Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনীতির ‘ঘরে-বাইরে’ নারী


৩০ নভেম্বর ২০১৮ ১২:৪৪ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:২৬

রাজনীতির চিত্রনাট্য কি একটু-একটু করে বদলাচ্ছে? পুরুষ বিপ্লবীর আবির্ভাবের আশা না-করে নারীরা নিজেরাই এখন রাজনীতির লড়াইয়ে সরাসরি নামছে? হ্যাঁ নামছে, আবার দমছেও।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেতা নারী, স্পীকার নারী, রাজপথের বড় দলের প্রধান নারী। সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে বহু জায়গায় নারীদের সরব উপস্থিতি আছে। এদেশের বহু ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে গেলেও আমাদের সমাজে তারা এখনো ব্যাপকভাবে বঞ্চিত, নিগৃহীত, নির্যাতিত ও অবহেলিত। রাজনীতির শীর্ষ পদে বা প্রশাসনের বড় জায়গায় থাকলেও নারীরা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনেক পিছিয়ে। এবং সেখানেই রাজনীতির প্রশ্ন।

বিজ্ঞাপন

নারী-নির্যাতনের বিভিন্ন সংবাদে জনমানসে বিভীষিকা ক্ষোভ এবং ভয়ের পরিবেশের ছাপ স্পষ্ট। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে নারী-নির্যাতনের সংবাদ প্রাধান্য পাচ্ছে। নারীরা রাস্তায় নেমেছেন, অনেক পুরুষ তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। গণমাধ্যম এবং শিক্ষিত সমাজ প্রশাসনকে দায়ী করে বলছে আসল দায়ী হলো রাজনীতি। নারী-নির্যাতকরা রাজনৈতিক দল-পুষ্ট।

যারা শাসন ক্ষমতায় থাকে তারা বলে তাদের চেষ্টার অভাব নেই। কিন্তু সত্যিকার অর্থে সমাজ চলছে খানিক স্বয়ংক্রিয় ভাবে, খানিক অভ্যাসে, খানিকটা পুরনো মানবিকতায়। তাই রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলুকনা কেন, বাস্তবতা হলো নৈরাজ্যের উপযোগী পরিবেশই সৃষ্টি করছে এই রাজনীতি। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সরাসরি প্রভাব ছাড়া নৈরাজ্য দ্রুত বন্ধ করার কোনো আশা নেই।

নির্বাচন আসছে। ইশতেহার ঘোষণা হবে। নারী প্রগতির পক্ষে, নারী নির্যাতনের বিপক্ষে অনেক কথা সেসবে থাকবে। দেশে সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের অর্ধেকই নারী। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত বেশি হতে দেখা যায়। তাই ফলাফল নির্ধারণে বড় ফ্যাক্টর তারা। প্রার্থী নির্বাচনে তাই নারীদেরও রয়েছে নানান হিসাব-নিকাশ। নারী-পুরুষ ভোটারদের সংখ্যার ব্যবধান ৮ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ জন। আর পুরুষ ও নারী ভোটারের অনুপাত ৫০.৪২ : ৪৯.৫৮।

বিজ্ঞাপন

নারী ভোটারদের ভোট পেতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৫০টি সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি ১৭টি সরাসরি আসনেও নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে নারীর ক্ষমতায়নে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। আর নারী ভোটারদের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর সেই ভূমিকা ইতিবাচক  প্রভাব রাখবে বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর একার লড়াই নয় এই বিষয়টি। সব স্তরে তার পক্ষে দৃষ্টি দেয়াও সম্ভব নয়।

গত কয়েক বছরের ভোটার হিসেব করলে দেখা যায়, তুলনার বিচারে পুরুষদের চেয়ে নারী ভোটারের ভোটই বেশি পড়ে। গৃহীত ভোটের প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটই নারী ভোটারের। এই বিপুল সংখ্যক ভোট টানতে নারী প্রার্থীদের সামনে আনাটা ইতিবাচক কৌশল বলেন মনে করেন বিশ্লেষক মহল।

রাষ্ট্রীয় সহায়তা ছাড়া কি সমাজ সংস্কার হয়? হয়না। তাই নারীর ক্ষমতায়ন মানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সব স্তরে তার উপস্থিতি বাড়ানো। রাজনৈতিক সংগঠনে নারীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকলেও তাদের মতামত ও আদর্শগত প্রভাব পুরুষ নেতারা শক্ত হাতে চালনা করতে চান। একটা সময় ছিল বাম দলগুলোর নারী কর্মীরা ঘরে বাইরে সবখানে সক্রিয় হতে শুরু করে। সে সময়ে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের বাইরের মেয়েদের রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির বৃত্তে টেনে আনার প্রয়াস ছিল। সেই প্রয়াস এখনও আছে। কিন্তু দেখা গেল, স্বৈরাচার বিদায়ের পর যত দ্রুত গণতান্ত্রিক পর্যায় শুরু হল, দলীয় রাজনীতি ও নারী স্বাধীনতার পথ ততই আলাদা হতে থাকল। নারী পরিচয়ের বিভিন্ন দিক বদল ও পরিবর্তনশীল রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় গঠনের সংযোগ সবই কেমন জটিল হতে শুরু করল নব্বইয়ের দশক থেকে। অথচ এই সময়টাতেই দুটি বড় দল পরিচালিত হয়েছে দুজন প্রভাবশালী নেত্রী দ্বারা। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নারীদের বড় ভূমিকা ছিল। পরবর্তি সময়েও আন্দোলন, সংগ্রামে, সংস্কৃতির বিকাশে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি সত্বেও কোথায় যেন একটা আড়ষ্ট ভাব।

যে চৌহদ্দির ভিতরে-বাইরে নারীর আজন্ম বেড়ে ওঠা আর জীবনচর্যা, সেখানে মানসিক ব্যাপ্তির সুযোগে পুরুষের সঙ্গে তার ফারাক আজও বড় বিষয়।
তাই এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যাওয়া ছাড়া নারীর সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। রাজনীতির ‘ঘরে-বাইরে’ নিজের শক্ত অবস্থান ছাড়া সামাজিক রূপান্তরের পথে বেশি দূর এগুনো সম্ভব নয়। অবশ্য এমন অবস্থাও আমরা দেখেছি যে, রাজনৈতিক ভাবে প্রশাসনিক ক্ষমতা পেয়েও কোনো কোনো নারী অনেক বেশি পুরুষতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা নিতে সমগ্র রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বাধ্য করেছেন। এই দুর্ভাগ্য কেবল নারীর নয়, পুরো সমাজেরই।

লুণ্ঠনবৃত্তি যে রাজনীতির চরিত্র, নিপীড়কের যেখানে ব্যাপক সামাজিক ভিত্তি, সেখানে ন্যায়বিচার এমনি এমনি আসবেনা। সনাতনী রাজনীতি নয়, নারী একটু ভিন্ন কিছু ভাবুক। ষাটের দশকে বাংলার রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতির প্রতিটি আন্দোলনে, ১৯৭০-এর নির্বাচনে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে নারী-সক্রিয়তা দেখা দিয়েছিল, ক’জন আজ তা স্মরণ রেখেছে? সেই সুবর্ণ সময়ে প্রত্যাবর্তনের আর সম্ভাবনা আছে কিনা জানা নেই। হয়তো সে পথে প্রত্যাবর্তনের পথ খুব সংকীর্ণ। কিন্তু তবুও সমাজকে ভাবতে হবে নতুন রাজনীতির রূপের কথা আর সেটা আসতে পারে নারীর হাত ধরেই।

সারাবাংলা/টিসি

নারীর ভোটাধিকার রাজনীতিতে নারী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর