Saturday 11 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফুটবল মাঠে জন্ম নিয়েছিল যে দেশটি


১৬ জুলাই ২০১৮ ১৭:৩৩

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।

ফুটবল বিশ্বকাপ-২০১৮’র পর্দা নামলো কাল। অবশেষে বিশ্বের সকল মানুষ জানতে পেল আগামী চার বছরের জন্য ফুটবল বিশ্বের সম্রাট কারা! এবার ফাইনালে খেলা ইউরোপের দুই দেশ ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া বলা যায় বিশ্বকাপে পদক জয়ের দৌড়ে নবীন বলা যায়। ফ্রান্স তাও ১৯৯৮’র বিশ্বকাপ জয় করেছিল, খেলেছে ২০০৬ র ফাইনালও। ১৯৯৮ সালে যেবার ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতে নেয় ক্রোয়েশিয়া হয়েছিল তৃতীয়। সেবারও তাদের হার হয়েছিল ফ্রান্সের কাছেই। তবে আজকের গল্পটা ফ্রান্সের নয়, ক্রোয়েশিয়ার।

বিজ্ঞাপন

ক্রোয়েশিয়া পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার জন্ম হয়েছিল এই ফুটবল মাঠে। শুধু একটি লাথি ব্যাস অনেকদিনের জড়তা ভেঙ্গে বেড়িয়ে এসেছিল স্বাধীন ক্রোয়েশিয়া হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের জনক যোভানিমির বোবান, আজকে যিনি ফিফার ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল। ফিফা ২০১৬ তে বোবানকে দায়িত্ব দিয়েছে। বলেছে, বোমানের কাজ হবে নিবিড়ভাবে খেলাটা উন্নয়নে কাজ করা। সঙ্গে ফিফার প্রতিযোগিতার মানও।

ফিফার এই পরিচয় তৈরি হওয়ার আগেই বোবানের পরিচয় ছিল বোবান ছিলে একজন ফুটবলার। তবে বলাই বাহুল্য বোবান খেলার সঙ্গে রাজনীতি মেশাতেন আর এটাই কারণ বোবানকে সবাই যত না চেনেন একজন ফুটবলার হিসেবে তারচেয়ে ঢের বড় পরিচয় বোবান একজন দেশপ্রেমিক।

মার্শাল টিটোর দেশ যুগোস্লাভিয়ার একজন ফুটবলার ছিলেন বোবান। “একজন” শব্দটা এখানে “অন্যতম”র সমার্থক। বোবানের হাত ধরে ১৮৮৭ সালে যুগোস্লাভিয়া জিতেছিল ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত যুগোস্লাভিয়ার হয়ে সাতটি কাপ জিতে আনেন। সর্বশেষ ১৯৯১ সালের ১৬ মে যুগোস্লাভিয়ার হয়ে ফারো আইল্যান্ডের বিরুদ্ধে সর্বশেষ খেলাটা খেলেছিলেন বোবান। সেদিনও তার একমাত্র গোলটি জয় এনে দেয় যুগোস্লাভিয়াকে।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গঠিত মার্শাল টিটোর যুগোস্লাভ ফেডারেশনের সবাই খুব সঙ্ঘবদ্ধ ছিল। সেখানে ছিল বসনিয়া- হারজেগোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া। ১৯৪৩ থেকে ৯০’র শুরুটা ভালোই কাটছিল যতদিন মার্শাল টিটো মারা না যান। ১৯৮০ সালে টিটোর মৃত্যুর পর থেকে শুরু হয় একের পর এক সংঘর্ষ। শুরু হয় আলাদা হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া…

টিটোর মৃত্যুর পরে যখন যুগোস্লাভিয়া ভাঙ্গনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে, ক্রোয়েশিয়ার মানুষেরা ক্ষুব্ধ, তিক্ত! তাদের এইসব ক্ষোভ প্রকাশের একটা মধ্যম ফুটবল। স্টেডিয়ামে তারা যায় তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে, খেলার মধ্যেই প্রদর্শন করে প্রতিবাদ। মোট কথা খেলার মধ্যে তারা রাজনীতি এমন মেশানো মেশায় যে সেটাকে খেলা কম আর রাজনীতি বেশি মনে হয়। যেমন ১৩ মে ১৯৯০’র ঘটনা। সেদিন তো খেলা ছাপিয়ে রাজনীতি এতই বাড়াবাড়ি মাত্রায় হয়ে যায় যে খেলোয়াড়রাও মাঠে নেমে খেলা বাদ দিয়ে শুরু করে রাজনীতি। ইতিহাসের পাতায় সেদিনটি পরিচয় পায় এমন একটা খেলার দিন হিসেবে যা রাজনীতির প্রেক্ষাপটই বদলে দেয়।

সেদিন ক্রোয়েশিয়ার মাকসিমির স্টেডিয়ামে রেড স্টার বেলগ্রেডের সঙ্গে খেলা চলছিল ডাইনামো জাগ্রাবের সঙ্গে। দুটিই ছিল যুগোস্লাভিয়া ফুটবল লীগের দল। এদিকে মাঠের বাইরে চলছিলো অন্য খেলাই। ক্রোয়েশিয়া তখন আলাদা হতে মরিয়া। ডাইনামো দলের সমর্থকরা নিজেদের জাতীয়তার লড়াইয়ে বাঁধিয়ে দেয় যুদ্ধ। সেদিন তারা তৈরি হয়েই এসেছিল দেশকে স্বাধীন করবে বলে।
খেলার মধ্যেই বিবাদে জড়িয়ে পরে ক্রোয়েশিয়রা গ্যালারি থেকে যুদ্ধ নেমে আসে মাঠে। যুগোস্লাভিয়ার পুলিশ নির্বিচারে পেটাতে থাকে ক্রোয়েশিয়দের। হঠাৎ সে যুদ্ধে নেমে যায় বোবান। যোভানিমির বোবান, যার হাত ধরে ১৮৮৭ সালে যুগোস্লাভিয়া জিতেছিল ওয়ার্ল্ড ইউথ চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত যুগোস্লাভিয়ার হয়ে সাতটি কাপ জিতে এনেছিলেন।

বোবান দুম করে একজন পুলিশকে লাথি মারে। এরপরই শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। মাত্র এক ঘণ্টা আগে যে স্টেডিয়ামটিকে খেলা চলছিল সেটা হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র।

এরকম যুদ্ধের নায়কদের যা হয় আর কি, সেই লাথিটাই বোবানের ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে পারত। কিন্তু না বোবানের সৎ সাহসই হোক আর ক্রোয়েশিয়ার মানুষদের প্রার্থনা। বোবানের দেশ ঠিকই স্বাধীন হয়। বোবানও পান ভালো একটা ক্যারিয়ার। এসিমিলানের মিড ফিল্ডার হিসাবেও সফল তিনি। এমনকি ১৯৯৮ সালের তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার জয়ও আসে এই বোবানের নেতৃত্বেই। বোবানের দেশ কখনও হয়তো বিশ্বকাপের বাইরেও ছিল, তবে ফুটবল তাদের রক্তে। তাদের সূচনা। তারা পেশায় নয় আত্মায় ফুটবলার।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর