Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হিউম্যান লাইব্রেরি : বই যেখানে কথা বলে!


৯ মে ২০১৮ ১৭:২৩ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ১২:৩৯

জান্নাতুল মাওয়া ।।

আসছে শনিবার, ১২ মে যাত্রা বিরতিতে বসতে যাচ্ছে হিউম্যান লাইব্রেরি ঢাকার তৃতীয় আসর। সব লাইব্রেরিতে লেখা নীরবতা বজায় রাখুন। আর এই লাইব্রেরিতে ঢুকতেই বড় করে লেখা ‘নো সাইলেন্স প্লিজ’, অর্থাৎ ‘দয়া করে নীরব থাকবেন না’! এই লাইব্রেরিতে মানুষ-ই বই। বৈচিত্র্যময় এই বইগুলোর ভাষ্যে উঠে আসে নানান গল্প। কোন গল্প বলছে সামাজিক সংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা, কোনওটি পারিবারিক নির্যাতনের স্বীকার হওয়া মানুষের গল্প, আবার কোনও কোনওটি একেবারেই ব্যক্তিগত শোক-সুখ-দুঃখের গল্প। এই গল্প বলার ধরণ ভিন্ন, কারণ এখানে কথক শুধু নিজের গল্প বলে চলে যেতে পারেন না, তাকে পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এই প্রশ্ন উত্তর পর্ব পাঠককে সংস্কার মুক্ত হতে সাহায্য করে, নন জাজমেন্টাল হতে শেখায়। হিউম্যান লাইব্রেরির একটি অন্যতম শ্লোগান হল ‘একটি বইকে এর কাভার দিয়ে বিচার করোনা’। পুরো হিউম্যান লাইব্রেরির থিমটিই দাঁড়িয়ে আছে এই নন-জাজমেন্টাল দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার চিন্তা নিয়ে। এটি একটি ব্যতিক্রমী কিন্তু বেশ যুগোপযোগী একটি ধারণা  যার মাধ্যমে মানুষ তার আশেপাশের মানুষ সম্পর্কে ভাবতে শিখবে। মানুষ তার আশেপাশের বৈচিত্র্যময় জীবন যাপন সম্পর্কে জানেনা বলেই তার নিজস্ব গণ্ডিবদ্ধ চিরাচরিত বদ্ধমূল ধারনা দিয়ে আশেপাশের মানুষদেরকে  বিচার করে। হিউম্যান লাইব্রেরি মানুষকে সেই বৈচিত্র্যকে জানার সুযোগ করে দেয়।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের ৯০ টি দেশ ঘুরে  বিস্ময়কর এই লাইব্রেরি ঢাকায় এসেছিলো ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। ইতিমধ্যেই এর দুইটি আসর হয়ে গেছে। গত দুইটি আসরে প্রায় সহস্রাধিক পাঠক সুযোগ পেয়েছেন তাদের সামনে বই হয়ে আসা মানুষদেরকে পড়ার। হিউম্যান লাইব্রেরি ঢাকার উদ্দ্যোক্তারা হলেন, মুশফিকুজ্জামান খান, উপমা রশিদ, রিফা তাসফিয়া খান ও রাফসানুল হক। কেন এই উদ্যোগ? এই প্রসঙ্গে উদ্দ্যোক্তা মুশফিকুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের সবারই বলার মত অনেক গল্প থাকে। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্নের জন্ম হয়। অথবা এমন অনেক মানুষকে দেখি যাদের জীবন সম্পর্কে জানতে আমাদের ভীষণ আগ্রহ হয়। কিন্তু সামাজিক অনেক বাধ্যবাধকতার কারনে হুট করে কাউকে হয়তো বলে ওঠা হয়না যে আমি আপনার জীবনের গল্প শুনতে চাই। এছাড়াও যারা নিজের জীবনের গল্প বলতে চান তারাও অনেক সময় দ্বিধা-দ্বন্ধে ভোগেন। আর এইসব মানুষদেরকে একত্র করতেই আমাদের এই প্লাটফর্ম’।

বিজ্ঞাপন

এবারের হিউম্যান লাইব্রেরির আসরে থাকবে বারোটি বই। এদের মধ্যে ‘আ সানসেট ইন মাই বডি’ বইটি একজন যৌন নির্যাতনের শিকার নারীর গল্প। এই নারীটি তার পরিবারের সদস্যের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আরেকটি বই সামনে আনছে একজন দারিদ্রপীড়িত মানুষের জীবনের টানাপোড়েনের গল্প। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড রেস্টস ইন মায় ফিঙ্গারপ্রিন্টস’ বইটিতে এমন একজনের গল্প থাকবে যিনি শারিরীক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও বিশ্ব জয় করছেন! এছাড়াও নিজের বিশ্বাস নিয়ে দ্বন্ধে ভুগছেন এমন একজন নিয়ে আসবেন ‘ওয়াকিং দ্য টাইটরোপ অফ ফেইথ’ নামের একটি গল্প।

গত দুই সেশনে লাইব্রেরিতে পাঠক হিসেবে আসা ইন্ডিপেন্ডেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.  মুস্তাফা হাবিব চৌধুরী জানান তিনি এবারো অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন নতুন বই পড়ার জন্যে। তিনি বলেন, ‘সেশনগুলো ডায়লগভিত্তিক হওয়ায় বই আর পাঠকের মধ্যে ভাবনার আদান-প্রদান ছিল অসাধারণ যার মাধ্যমে দুই পক্ষই অনুপ্রাণিত হয়েছে’।

সকাল ১১ টায় শুরু হয়ে লাইব্রেরির আসর চলবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। এই সময়ের মাঝে যে কোন সময় এসে আপনার পছন্দের বই বেছে নিয়ে পড়তে বসে যেতে পারেন যাত্রা বিরতির আঙ্গিনায়। এই আয়োজনের সহযোগেতায় আছে ইএমকে সেন্টার।

সারাবাংলা/পিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর