Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘টেলি বনাম টিউব’


২০ জুন ২০১৮ ১৪:৫৫ | আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ১৫:০৪

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

নাটক বা টেলিছবি প্রচারের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে এতকাল ধরে টেলিভিশনকেই জেনে এসেছে মানুষ। কিন্তু দিনকে দিন সেই জানার দেয়ালে ধাক্কা দিচ্ছে অনলাইন তথা ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউব। আগে যেখানে মানুষ তুমুল আগ্রহ নিয়ে নাটক দেখার জন্য বোকাবাক্সের সামনে বসতো এখন সেই আগ্রহটা সরে গেছে ইউটিউবের দিকে। গত কয়েক বছরের চিত্র দেখলে এমনই ধারণা পাওয়া যায়। সহজলভ্যতা আর বিজ্ঞাপনের যন্ত্রনাহীন কনটেন্টের কারণে মানুষ ঝুঁকছে ইউটিউবের দিকে। যে কারণে টেলিভিশনে নাটক প্রচারের কিছু সময়ের মধ্যে ইউটিউবে চলে আসছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এই যে নাটক বা অনুষ্ঠান প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তা ইউটিউবে তুলে দেয়া হচ্ছে এবং মানুষ মূলত ইউটিউবেই দেখছে তা, এটা কি টেলিভিশনের দর্শক কমিয়ে দিচ্ছে না? কিংবা এই প্রক্রিয়া কি টেলিভিশন মাধ্যমের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে না?

এসময়ে জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন,‘ইউটিউব হচ্ছে একটি আর্কাইভিং প্ল্যাটফর্ম। এখানে নাটক আপলোড করলে কাজগুলো থেকে যায়। এই জিনিসটা আমাদের অনেক আগে থেকেই দরকার ছিলো। কারন নাটকগুলো হারিয়ে যাচ্ছিলো। চ্যানেলে প্রচার হওয়ার পর যতদিন সেটা পুনঃপ্রচার না করতো ততোদিন সেটার খোঁজ থাকতো না। তবে টেলিভিশন নাটক একেবারে ইউটিউবমুখী হয়ে যাওয়ার পক্ষে আমি না। টেলিভিশনের উচিত ইউটিউবে নাটক আপলোড করার ক্ষেত্রে সময় নেয়া। নাটক প্রচারের দশ মিনিটের মধ্যে সেটা আপলোড করা ঠিক নয়। পনেরো দিন বা একমাসের সময় নেয়া উচিত। টেলিভিশন নাটক এখন যে জায়গায় আছে সেটা ভুল জায়গায় আছে। এমন হলে টেলিভিশনগুলো পুরোপুরিভাবে দর্শক হারাবে। দর্শক যখন বুঝে যাবে কিছু সময় পর নাটকটি ইউটিউবে আপলোড করা হবে তখন তারা আর বিজ্ঞাপন সহ্য করে টেলিভিশন নাটক দেখবে না’।

বিজ্ঞাপন

বান্নাহ বলেন,‘পৃথিবীর কোথাও টেলিভিশন সিরিজ অন এয়ার হওয়ার সাথে সাথেই অনলাইনে চলে আসে না। শার্লক হোমস, গেম অব থ্রোনস সহ আরো যেসসব জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ আছে সেগুলো কিন্তু সাথে সাথে ইউটিউবে চলে আসে না। যেগুলো আসে সেগুলো পাইরেটেড। নির্মাতা হিসেবে আমি চাই আমার নাটক সবাই দেখুক, সেটা যেকোনও মাধ্যমেই হোক। এটা আমার জন্য ইতিবাচক। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে নাটক প্রচারের সাথে সাথে ইউটিউবে চলে আসা ইন্ডাস্ট্রির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।’

একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিলো ছোটপর্দার আরেক জনপ্রিয় নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ানের কাছে। তিনি বলেন, ‘ইউটিউবে নাটক আপলোড হওয়ায় লাভবান হচ্ছে দু’টি পক্ষ। প্রথমত লাভবান হচ্ছি আমরা নির্মাতারা, দ্বিতীয়ত দর্শকরা। পরিচালকরা এর মাধ্যমে জানতে পারছে তাদের নাটক কতো সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে। আর দর্শকরা টেলিভিশনে নাটক দেখতে সময় না পেলেও সে ইউটিউবে দেখে নিতে পারে। কিন্তু এতে টেলিভিশন চ্যানেল কতোটা লাভবান হচ্ছে তা আমার জানা নেই। টেলিভিশন নাটক মূলত টেলিভিশনের জন্য। সেক্ষেত্রে চ্যানেলগুলোর কিছু দায়বদ্ধতা আছে। চ্যানেলগুলো যদি নাটক দেখার উপযোগী করে দেয় অর্থাৎ বিজ্ঞাপন যদি সহনীয় রাখে তাহলে টেলিভিশনেই মানুষ নাটক দেখবে। ইউটিউবে বিজ্ঞাপন ছাড়া নাটক দেখতে পেলে কোনো মানুষ সময় নষ্ট করে বিজ্ঞাপন দেখবে? টেলিভিশন নাটকের ওপর থেকে মানুষ তো অনেক আগে থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিজ্ঞাপনের কারনে।’

জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা আবু হায়াত মাহমুদের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বিষয়টি ইতিবাচক আবার নেতিবাচক দুদিক থেকেই দেখা যায়। আমার কাছে মনে হয় আমরা অনেক বেশী অলস হয়ে যাচ্ছি। আমরা যেখানকার জিনিস সেখানটায় দেখতে চাইনা। সহজভাবে দেখতে চাই। এই বিষয়টি হওয়া উচিত না। আমি দেখতে মানা করছি না। অবশ্যই দেখবে, তবে যদি তারা সেটা ঠিক সময়ে দেখার সুযোগ না পায়। ইউটিউবে এখন অনেক অরুচিকর নাটক জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে। এখনতো ইউটিউব বুস্টিং করা যায়। এটা নেতিবাচক। আমি মনে করি নাটক টেলিভিশনেই দেখা উচিত।’

অবশ্য বিষয়টিকে এখনই ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন না বাংলাভিশনের প্রোগ্রাম ইনচার্জ তারেক আখন্দ। তিনি বলেন,‘দর্শকরা যেভাবে অভ্যস্ত সেভাবেই করার চেষ্টা করছি আমরা। মানুষ এখন টেলিভিশনে নাটক দেখার পাশাপাশি ইউটিউবে নাটক দেখছে। টেলিভিশন চ্যানেলের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে নাটক দেখানো। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর তো এখন অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল আছে। নাটক প্রচার হওয়ার পর পর যদি সেটা ইউটিউবে আপলোড দেয়া হয় তাহলে দর্শক হারানোর সুযোগ নেই। প্রযুক্তিকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। নাটকের একটি স্লট থাকে। নির্দিষ্ট স্লটে নাটক অন এয়ার হয়। একবার নাটক অন এয়ার করার পর নাটকটি পুনরায় কোন প্রাইম স্লটে চালানো সম্ভব হয় না। চাইলেও সুপার পিক আওয়ারে পুনঃপ্রচার করা যাবে না। তাই ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়।’

কিন্তু ইউটিউবে নাটক অবমুক্ত করার ক্ষেত্রে সময় নেয়া প্রয়োজন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তারেক আখন্দ বলেন, ‘নাটক যদি পনেরো বা বিশ দিন পর ইউটিউবে আপলোড করা হয় তাহলে সেটার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এটি একটি প্রতিযোগিতার মতো। যে চ্যানেল যতো আগে আপলোড দিতে পারবে সে চ্যানেল ততো দর্শক ধরতে পারবে।’

এদিকে আরটিভির অনুষ্ঠান প্রধান দেওয়ান শামসুর রকিব এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইউটিউবের কারণে টেলিভিশন নাটকের দর্শক কমে যাওয়ার বিষয়টি এখনো খোলাসা হয়নি। মানুষ আসলে অনুমান করে বলছে যে দর্শক কমছে। তরুণদের মধ্যে ইউটিউব দেখার প্রবণতা বেশী। আবার পরিবারের বাবা-মা বা বয়স্ক যারা তারা কিন্তু টেলিভিশনেই নাটক দেখছেন। তবে এতে টেলিভিশনের ওপর একদমই প্রভাব পড়ছে না তা বলা যাবে না। প্রভাব পড়লেও সেটা কম। এখনও নাটক দেখার বড় মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে যে টেলিভিশন নাটক হুমকির মুখে পড়ছে সেটা বলা যাবে না। হয়তো আরও কয়েক বছর পর এটা নিয়ে বড় আলোচনা হতে পারে।’

সারাবাংলা/আরএসও/পিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর