শিল্পকলা থেকে ফিরে অঝোরে কাঁদলেন জ্যোতি
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:২৭
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা পরিচালক হিসেবে গত বছরের ১৩ মার্চ নিয়োগ পান। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন থেকে অফিসে যান নি এ অভিনেত্রী। তবে যেহেতু এখন পর্যন্ত তার চাকরির মেয়াদ আছে তাই অফিসে যান। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে জ্যোতির মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে ঘটনার বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি অঝোরে কাঁদেন।
তিনি সকালে অফিসে প্রবেশের আধ ঘণ্টার মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। আর তা বাইরের কেউই করেননি করেছেন তার সহকর্মীরা। জ্যোতি লাইভে প্রশ্ন রাখেন, তাহলে দেশটা কি আমার না?
জ্যোতি বলেন, ‘পুরো শিল্পকলা জুড়ে চলছে হট্টগোল। তারা আমাদের কাউকে চাকরি করতে দেবে না। শিল্পকলায় ঢুকতে দেবে না। একের পর এক দরজায় তালা লাগাচ্ছিলো। তারা বাইরের কেউ নন। শিল্পকলারই কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের দাবি, বিএনপি করেন। অথচ তারাই গত সরকারের আমলে আরাম করে চাকরি করেছেন। কেউ বাধা দেয়নি। অথচ এখন তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কে শিল্পকলায় ঢুকবে কে বের হবে!’
তিনি জানান, ‘অনেকেই শুনেছেন আমাকে আটকে রাখা হয়েছে শিল্পকলায়। বিষয়টি ততদূর গড়ায়নি। এর মধ্যে মহাপরিচালক মহোদয় ও সচিব স্যার এসেছেন। আমি তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। কারণ, আমি তো জানি না, চাকরিটা আছে কি নেই। এমন কোনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। আমার চুক্তিও শেষ হয়নি। তাহলে আমি কেন যাবো না? যাই হোক, স্যারদের সঙ্গে দেখা করার পর তারাও দেখলাম খানিক বিব্রত। বললেন, এমন পরিস্থিতিতে আপনি কেন এসেছেন? চলে যান। এরপর সচিব স্যারের সহযোগিতায় আমার রুমে গেলাম। বাইরে তুমুল হট্টগোল চলছে। মায়ের ছবি নিলাম, কিছু কসমেটিকস ছিলো আর স্যানিটারি প্যাড, সেসব নিলাম। বের হওয়ার সময় বিপ্লবীদের দেখালাম সেগুলো, বললাম এগুলো আমার একান্তই নিজস্ব। শিল্পকলার নয়। চলে এলাম।’
তিনি বার বার বলছিলেন, এই চাকরিটা আওয়ামী লীগের উপহার ছিলো না। এটি তার একান্ত যোগ্যতায় হয়েছে। বললেন, ‘মিডিয়ার নানা সিন্ডিকেটের সঙ্গে তাল না দিতে পেরে আমি তখন অভিনয়ে প্রায় বেকার হয়ে পড়েছি। বাধ্য হয়ে চাকরি খুঁজছিলাম। এরপর দু’জন মানুষকে আমি আমার সিভি দিয়ে চাকরি চাই। তারপর এই চাকরির সুযোগটা পাই। দেশে যে এমন চুক্তিভিত্তিক চাকরি আছে, সেটাই আমি জানতাম না। এই চাকরিটা হয়েছে শতভাগ নিয়ম মেনে। আমার সার্টিফিকেট, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড সবকিছু ছয়মাস ধরে যাচাই বাছাই করে এই চাকরিটা পেয়েছি আমি। অথচ সেই কর্মস্থলে আজ আমি ঢুকতে পারছি না!’
‘কাজ করার বয়স যখন থেকে হলো সেদিন থেকে আমি শ্রম-মেধা দিয়ে চলেছি নিজের জন্য দেশের জন্য। কখনও দলীয় আরামে নিজেকে জড়াইনি। অভিনয়ে তিল তিল করে নিজেকে গড়েছি। পড়াশুনাটাও করেছি। চাইলেই তো আমি উন্নত দেশে সেটেল হতে পারতাম। হইনি। এখন চাকরিটাও হারালাম। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যেও দেখছি একই অবস্থা, বিভাজন। ফলে অভিনয়টাও আর করতে পারবো না। তবে কি এই দেশে কেউ দল সমর্থন করবে না? কেউ হিন্দু হতে পারবে না? তাহলে কি এই দেশটা আমার নয়?’─বলেন জ্যোতি।
সারাবাংলা/এজেডএস