‘ফিল্ম বা যেকোন ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য’
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:১৫ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:৫৬
ভিন্নধর্মী কাজ দিয়ে এ প্রজন্মের যে কয়েকজন নির্মাতা দর্শকদের হৃদয় জয় করেছেন তাদের অন্যতম ভিকি জাহেদ। সম্প্রতি তিনি এসেছিলেন সারাবাংলার কার্যালয়ে। তার সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিলেন সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আহমেদ জামান শিমুল। তারই চুম্বক অংশ-
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় ফিল্ম ক্লাব দিয়েই তো আপনার শুরু?
হ্যাঁ, ছাত্রাবস্থায় বন্ধুরা মিলে ফিল্ম ক্লাব করতাম। সেখানে আমরা নিয়মিত ছবি দেখতাম। ছবি বুঝার চেষ্টা করতাম। ফিল্ম ক্লাব করতে গিয়ে নাবিল (মুহাম্মদ আলতামিশ নাবিল), দীপনের (বিদ্রোহী দীপন) সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ওরা আহসানউল্লাহতে ছিলো, আমি টেক্সটাইলে ছিলাম।
চলচ্চিত্র নির্মাণে কি কোনো প্রশিক্ষণ বা প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নিয়েছেন?
তানভীর মোকাম্মেল স্যারের বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট (বিএফআই) থেকে ‘ফিল্ম এপ্রিসিয়েশন’ কোর্স করেছি। বিএফআইয়ের ১৪তম ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। ওখানে আমি চিত্রনাট্য রচনা ও সম্পাদনার উপর কোর্স করেছি। কোর্সগুলো আমাকে চলচ্চিত্রের কারিগরি বিষয়গুলো বুঝতে সহায়তা করেছে। এরপর ফেসবুকে ‘সিনেমা পিপলস’ নামক একটা গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। ওখান থেকেও অনেক সহায়তা পেয়েছি।
পরে তো কয়েক বন্ধু মিলে ‘মোশন ভাস্কর’ করলেন। সেটি বন্ধ হলো কেন?
আমাদের ইচ্ছে ছিল মোশন ভাস্করের ব্যানারে সবাই মিলে কাজ করবো। করেছিও। মোশন ভাস্কর কিন্তু এখনও আছে।অনেকগুলো মানুষ মিলে একটা স্বপ্নের পিছনে কাজ শুরুর পরও অনেকের স্বপ্ন পরিবর্তন হয়ে যায়। ওইভাবেই আমাদের টিমের কিছু সদস্য তাদের জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন করেছে। তারা হয়তো স্বপ্নটা ছেড়ে দিয়েছে। এরকম জায়গা থেকে আমার যে স্বপ্ন ছিলো সেটাকে নিয়ে ‘ভি ক্রিয়েশন’ করলাম পরবর্তীতে। তারপরও ওনাদের যদি কখন মনে হয় মোশন ভাস্কর নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করবে, তাহলে মোস্ট ওয়েলকাম। আবার আমরা একসঙ্গে কাজ করবো।
অনেক নির্মাতার কথা আমরা জানি, যারা কিনা কোনো ছবি দেখে তার প্রেমে পড়ে নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। আপনার ক্ষেত্রেও কি এ ধরনের কোনো গল্প আছে?
গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট ধরেছেন। আমার ক্ষেত্রে স্ট্যানলি কুবরিকের ‘অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’ অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। ছবিটা দেখার পর আমি অনেক দিন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। তিন দিন আমি ছবিটা নিয়ে ভেবেছি। কেউ একজন আমার ভিতর থেকে বলছিলো, তোমার আসলে সিনেমা বানানো উচিত। ভিতরের ওই আওয়াজটা আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা জোগাতে শুরু করলো।
আমার সবচেয়ে প্রিয় পরিচালকও কিন্তু উনি। এমনকি আমার ফেসবুক প্রোফাইলে ওনার ছবি দেওয়া। যার কারণে অনেকে ওই ছবিটা আমার ছবি মনে করে বিভ্রান্ত হয়।
পড়াশোনা শেষ করে একটা কর্পোরেট চাকরি করেছিলেন। সে অবস্থায় স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘মোমেন্টস’ দিয়ে আপনার উত্থান। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায়ও বেশকিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণ করেছিলেন। সে হিসেবে অনভিজ্ঞ পরিচালক হিসেবে প্রথম নির্মাণে বেশ ভালো প্রযোজক ফেলেন। তা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল? যেখানে অনেকের অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়।
‘মোমেন্টস’ আমার প্রথম পেশাদার কাজ, যা টাইগার মিডিয়া প্রযোজনা করেছিল। আর ওই সময়ে আমার প্রোটফোলিওতে এমন কাজ ছিল না যা দেখে তারা আমাকে প্রযোজনা করবে।
সেটাই আমরা জানতে চাইছি।
আমার কাছে যেটা মনে হয়, গল্পটা টাইগার মিডিয়ার প্রযোজকদের ভালো লেগেছিল। গল্পটার উপর একটা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলাম— এর গল্প, শট ডিভিশন, কস্টিউম কেমন হবে। খুব পেশাদারভাবে উপস্থাপনা করেছিলাম। যা দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং আমাকে ফান্ডিং করতে রাজি হন। নতুনদের তো বড় বাজেট দেওয়া যায় না। তবে ওনারা আমাকে যে বাজেট দিয়েছিলেন নতুন হিসেবে সে বাজেট আমার খুব কাজে লেগেছিল।
ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে পরিচালনায় আসলেন। আমাদের দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং কেনো অন্য যেকোন জায়গা থেকে পরিবার এ পেশায় আসতে দিতে চায় না। আপনার ক্ষেত্রে যদি জানতে চাই কীভাবে সম্ভব হলো? আপনার স্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কোনো সমস্যা হয় কিনা?
আমার ক্ষেত্রে পরিবার যখন কাজগুলো দেখলো, সেগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখলো তখন আস্তে আস্তে সহযোগীতা করেছে। আমার কাছে মনে হ্য, পরিবার শুরুর দিকে একটু সমস্যা করলেও, সততার সঙ্গে কাজ করে গেলে পাশে থাকবে।
আপনার প্রতিটা গল্পেই তিন-চার স্থরে টুইস্ট থাকে। এটা কি আপনার পূর্বপরিকল্পিত— আমার প্রতিটা গল্পে টুইস্ট থাকবে এবং এটাই হবে আমার সিগনেচার।
এটা কোনো পরিকল্পনা করে করা হয়নি। প্রথম দিকে কয়েকটা কাজে গল্পের প্রয়োজনে টুইস্ট রাখা হয়েছিল। মানুষ পছন্দ করছে সেগুলো। একটা সময়ে সবাই নাম দিলো ‘মিস্টার টুইস্ট’। সত্যি কথা বলতে যে কাজে টুইস্ট থাকে সেগুলো আমার বেশ পছন্দের। আমি চেষ্টা করি গল্পটা যৌক্তিক কোনো জায়গায় রেখে ক্লাইমেক্সে টুইস্ট রাখতে। এতে হয় কী! দর্শক ওই ছবিটা নিয়ে অনেক কথা বলে। যত বিখ্যাত ছবি আছে, দেখবেন শেষ ক্লাইমেক্সে একটা টুইস্ট থাকে। তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন না যে ইচ্ছে করে রাখি। গল্প লিখতে বসলে এমনিতেই আসে। বলতে পারেন, ‘গড গিফটেট’।
‘ইরিনা’, ‘আজ আমার পালা’— এমন দু-চারটা কাজ ছাড়া অধিকাংশের কাহিনি ও চিত্রনাট্য আপনার নিজের। বিষয়টা কি এমন আপনি নতুন চিত্রনাট্যকারদের উপর ভরসা পান না?
ধীরে ধীরে এটা পরিবর্তন করছি। এখন আমার সঙ্গে একজনকে নিই। যেমন ‘শুক্লপক্ষ’-এ আমার সঙ্গে নাজিম উদ দৌলা ছিলেন। আরেকজনের গল্প নিয়ে কাজ করতে যে অসুবিধা হয়, তা না। তবে আমার নিজের গল্প, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনায়ও আমি— ব্যাপারটায় একটু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। বর্তমানে ব্যস্ততা বাড়ায় আগের মত চিত্রনাট্যে সময় দেওয়া সম্ভব না। তাই বাইরের লেখক নিচ্ছি বেশি।
আপনার প্রিয় লেখক কে?
স্টিফেন কিং। আমাদের দেশে হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদের কোনো গল্প বা উপন্যাস নিয়ে কাজ করতে বললে সবার আগে কোনটা পছন্দ করবেন?
মিসির আলী, হিমু তো পর্দায় এসেছে অনেকবার। ওনার একটা গল্প আছে ‘জনম জনম’। ওটা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে।
‘শুক্লপক্ষ’-এর চিত্রনাট্যে আপনি আগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি, অনেকটাই দুর্বল হয়েছে— এমন সমালোচনার জবাবে কী বলবেন?
এধরনের সমালোচনা স্বাগত জানাই সবসময়। আমি মনে করি একটা মানুষ সবসময় ঠিক হতে পারে না। যারা ‘শুক্লপক্ষ’ পছন্দ করেছেন আর যারা করছেন না, তাদের সবাইকে আমি ভালোবাসি। যারা করছেন না তাদেরকে বেশি ভালোবাসি। কারণ তাদের দ্বারা আমার কাজের উন্নতি হচ্ছে। অন্যান্য কাজের মতো ‘শুক্লপক্ষ’-এও আমরা চেষ্টা করেছি সুন্দর করে নির্মাণের। এরপরও কারো কাছে হয়ত কিছু জায়গায় দুর্বল মনে হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবো। সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করবো।
দেখবেন, একজন নির্মাতা অনেক বেশি কাজ করতে করতে অন্ধ হয়ে যায়। ওর কাছে মনে হবে ও যা করছে তা-ই ঠিক। সে জায়গা থেকে গঠনমূলক সমালোচনা অনেক কাজে দেয়। যেটা আমাদের দেশে খুব একটা হয় না। কিন্তু হওয়া জরুরি।
কাজ নিয়ে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে সমালোচনা হয়— যেগুলোতে অতি প্রশংসা বা অতিরিক্ত সমালোচনাও থাকে। আপনার ক্ষেত্রে কি এমন কখনও হয়েছে কোনো সমালোচনা পড়ে মনে খারাপ হয়েছে— না, এটা এভাবে না বললেও পারতো।
সবচেয়ে বড় সত্যি কথা এগুলো আমার চোখে পড়ে না। আর বেশির গ্রুপেই আমি নাই। আমি ফেসবুক খুব কমই ব্যবহার করি। ফেসবুকে আমাকে খুব বেশি সক্রিয় তখনই পাবেন যখন আমার কোনো নতুন কাজ আসবে। তখন কাজটা প্রচারণায় এটা ব্যবহার করি। কারণ ফেসবুক আমার কাছে খুবই ঝামেলার মনে হয়। কাজে খুবই সমস্যা করে— বিশেষ করে লেখালেখিতে ঠিকঠাক মনযোগ দেওয়া যায় না। তবে সাংবাদিকরা যখন কোনো কিছু পত্র-পত্রিকায় লেখেন ওগুলো আমি মনযোগ দিয়ে পড়ি।
আপনার গল্পগুলোর বিষয়বস্তু কীভাবে নির্ধারণ করেন— প্রাত্যহিক জীবনের কোনো ভাবনা নাকি অন্য কোনো কিছু থেকে?
আমার প্রতিদিনের জীবন থেকে আমি গল্পগুলো নিই। আমার জীবনে যে ঘটনাগুলো ঘটে ওগুলোই আমার প্লট হিসেবে নিই। গল্পের বই প্রচুর পড়া এবং প্রচুর ফিল্ম দেখা হয়। ওগুলো পড়া ও দেখা থেকেও প্রচুর গল্পের উপাদান আসে। আইডিয়াটা তো আসল। ওটা পেয়ে গেলে ওটার উপর নির্ভর করে চিত্রনাট্য লেখা হয়।
আপনি শুরু করেছিলেন রোমান্টিক গল্প দিয়ে। বর্তমানে থ্রিলার নিয়ে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে প্রচুর ভায়োলেন্স দেখা যাচ্ছে। এটা পরিবর্তন কি সাময়িক সময়ের জন্য?
এটা আসলে আমার যখন যেটা করতে ভালো লাগছে তখন তা করছি। এটা এমন কিছু না…। আমার ভিতরে একটা আওয়াজ আসে। এ গল্পটা বানাতে হবে, তখন সেটা বানাই। এখন তিনটা রোমান্টিক বানিয়ে ফেলছি, এখন থ্রিলার বানাতে হবে— এরকম কোনো প্রেশার নিই না।
‘পুনর্জন্ম’ ইউনিভার্স করছেন। এধরনের কাজ হয়তো এর আগে ফারুকী ‘ব্যাচেলর’ নিয়ে করেছেন। বলা যায় এ ধরনের ভাবনা পরিচালকরা খুব একটা ভাবেননি। এ ভাবনা কীভাবে এলো। এরপর নতুন কোনো গল্প নিয়ে এমন ইউনিভার্স করবেন কিনা?
এটা করবো কিনা জানি না। এরকম ক্রসওভার বা ইউনিভার্স ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগে। বাইরের দেশগুলোতে অনেক হয়। যখন একটা ইউনিভার্স বানাবেন, তিন-চারটা গল্পের চরিত্র এক জায়গায় চলে আসবে তখন গল্পের ওজনটা বেশ বেড়ে যায়। যখনই আমরা ‘শুক্লপক্ষ’ ও ‘পুনর্জন্ম’ ক্রসওভার করলাম, ‘পুনর্জন্ম’ ইউনিভার্স করলাম, তখন শুক্লপক্ষের পাত্র-পাত্রীরা এখানে চলে আসবে। স্কেলটা অনেক বড় হয়ে যাবে। এটা যখন হবে দর্শকরা অনেক মজা পাবে।
নাটক কিংবা সিনেমা সুপারস্টার শিল্পীদের ক্ষেত্রে অভিযোগ আছে তারা পরিচালকদের পরিচালনা করার চেষ্টা করে। এরকম অভিযোগ থাকা নাটকের সুপারস্টার নিয়ে আপনিও কাজ করেছেন। আপনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
এ ব্যাপারে বলবো আমি খুবই ভাগ্যবান। আমার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত যে শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি, প্রত্যেকটা শিল্পীই খুব সহায়তা করেছে। শুধু অভিনয় নয়, এর বাইরেও তারা আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। তারা কাজগুলোকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছে। নিজ থেকে এগুলোর প্রচারণা চালিয়েছে।
পরিচালকদের অনেক চাপ থাকে। মাথা ঠাণ্ডা রেখে সবসময় কাজ করতে হয়। আপনি স্বভাবগতভাবে ঠাণ্ডা মেজাজের। এটাই কি এধরনের সমস্যায় না পড়ার কারণ?
ঠাণ্ডা মেজাজের চেয়ে আপনি যখন গল্প ও চরিত্রগুলোতে আপনার শিল্পীদের বিশ্বাস করাতে পারবেন তখন ওই শিল্পী আপনাকে তার শতভাগ দিবেন। আমার মনে হয় গল্পটাতে যখন শিল্পী ঢুকতে না পারে তখনই এমন সমস্যাগুলো হয়।
আমি যখন কাউকে কাস্ট করি তখন বোঝার চেষ্টা করি, ও গল্পটাতে আগ্রহী কিনা? না হলে তাকে নিই না। তখন বিকল্প চিন্তা করি। আমি মনে করি, যখন কেউ আপনার গল্পটাকে যথাযথ সম্মান দিতে পারবে না তখন তাকে নিয়ে কাজ করা উচিত না।
ভিকি জাহেদ একদম নতুনদের নিয়ে কেনো কাজ করে না?
করলাম তো শুক্লপক্ষে। ওখানে যারা অভিনয় করেছেন তারা তো অধিকাংশই একদম নতুন।
না, তাদের তো আগে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। সম্পূর্ণ নতুনশিল্পী বুঝিয়েছি।
আমার যে কাজ আছে, তাতে আলাদা করে কাউকে নিয়ে ভাববো ওই সময়টা নেই। অবশ্যই নতুনদের সুযোগ না দিলে তো ইন্ডাস্ট্রি বড় হবে না। তবে প্রযোজকরা সম্পূর্ণ নতুন মুখের উপর ভরসা রাখতে পারেন না। প্রযোজক যখন একটা কনটেন্ট বানায়, ওর তো এটা ব্যবসা। সব নতুন কাস্টিং হয়ত, পলিসিগত কারণে রাখতে পারে না। যার কারণে আমরা হয়ত নায়ক বা নায়িকার মধ্যে যে কোনো একজনকে নতুন নিচ্ছি। তবে সবাই সম্পূর্ণ নতুন, এমন শিল্পীদের নিয়েও কাজ করার ইচ্ছে আছে। দেখা যাক হয় কিনা।
আবার যদি আপনার শুরুতে যাই, মুহাম্মদ আলতামিশ নাবিলের সঙ্গে ‘মোমেন্টস’ নির্মাণের আগে বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণ করেছেন। দুজন আবার একসঙ্গে কাজ করবেন?
নাবিল আমার খুব কাছের বন্ধু। আমরা একসঙ্গে ‘মিস্টার এক্স’ নামে একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য পরিচালনা করেছি। ওই সময়টা আমার জীবনের সেরা সময় ছিল। আমি, নাবিল ও দীপন মিলে স্বল্পদৈর্ঘ্য বানানোর জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজতাম। ৫ হাজার টাকাও পাইনি এমন হয়েছে। নাবিল এখন অন্য জায়গায় বড় প্রতিষ্ঠানে চলে গেছে। ও যদি কখনও ইচ্ছে পোষণ করে আবার ফিল্ম মেকিংয়ে আসবে তাহলে কোনো সমস্যা নেই আমিও প্রস্তুত আছি। আবার যৌথভাবে পরিচালনা করবো।
সমসাময়িক প্রায় সকল পরিচালক পরিচালকই ছবি বানাচ্ছেন বা ঘোষণা দিচ্ছেন। কিন্তু ভিকি জাহেদের সিনেমা কবে পাব?
আমি কখনই চাপ নিই না। উনি বানাচ্ছে, উনি হয়ত ওনার গল্পটা পেয়ে গেছেন। আমি অপেক্ষা করছি, কারণ গল্পটা পাইনি। কারণ সিনেমার গল্প মানে সিনেমার গল্প। ওয়েব, ওটিটি এগুলো কোনকিছুই সিনেমার বিকল্প না। সিনেমা হলের গল্প ভিন্ন, ওটা মানুষের বড় স্বপ্ন। আমি স্বপ্ন দেখছি, দেখা যাক ব্যাটে বলে মিলে গেলে খুব শিগগিরই ঘোষণা আসবে।
এ বছরের মধ্যে কি পেতে পারি?
সেটা বলা কঠিন।
সেক্ষেত্রে আপনি কি আপনার চেনা জনরার মধ্যে বানাবেন? আপনার প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য যেমন রোমান্টিক গল্পে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল?
আমি জনরায় ফোকাস দিবো না। ইচ্ছে আছে আমার গল্পটা যেন বিনোদন দেয় দর্শকদের। আমার ছবিটা দেখে দর্শক একটা ভালো মন নিয়ে বের হয় এবং আরও দশজনের কাছে গিয়ে বলে ছবিটা ভালো। আমি এমন একটা ছবি বানাবো যেটা ভালো বিনোদন দিবে। পাশাপাশি একটা ভালো মেসেজ দিবে। সেটা যে জনরাই হোক।
আপনার কাজ করে অনেকে পুরস্কার পেয়েছে। কিন্তু আপনার ভাগ্যে সে অর্থে পুরস্কার জোটে নি। এটা নিয়ে আফসোস হয়?
পুরস্কার নিয়ে কখন ভাবিই না। ফেলে ভালো লাগে। নমিনেশন পেয়েছি। দু-একটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিও।
এটা কি অনুপ্রেরণা না?
না, আমার কাছে প্রধান অনুপ্রেরণা হচ্ছে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া।
কোনো গল্প সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এমন ভাবনা মাথায় রেখে কাজ করেন কিনা?
আমি এটা মনে করি না। আমার মতে ফিল্ম বা যেকোন ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য। মানুষ ওখানে বিনোদিত হতে যাচ্ছে। ওটা আসলে কোনো স্কুল না। শিক্ষা বা সমাজ পরিবর্তনের দায় দায়িত্ব শিক্ষকদের উপর। আমরা দর্শকদের বিনোদন দিতে আসছি। অবশ্য সুস্থ বিনোদন। এ সুস্থ বিনোদনের সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেকরকম। কেউ হয়ত রক্ত দেখতে পারে না। কারো কাছে ভূতের ছবি ভালো লাগে না। আবার কেউবা রোমান্টিক ছবি দেখতেই পারেন না। প্রত্যেকটা দর্শকের জন্য কাজ হতে হবে।
হ্যাঁ আমাদের গল্প দেখে কেউ যদি ভালো হয়, ভালো! আবার কেউ যদি খারাপ হয় তাহলে এটার দায় দায়িত্ব আমাদের না। এটা একটা দুঘণ্টার বিভ্রম। বের হয়ে একটু হাসি ঠাট্টা করবেন। এরপর আপনাকে আপনার বাস্তব জীবনে ফিরে যেতে হবে। যেটা অনেক বেশি কঠিন।
তারপরও কি নূন্যতম ভূমিকা রাখে না? মনোজগতে সূক্ষভাবে ঢুকে যায় না?
ওটা তো অনেকভাবেই হয়। বই পড়লেও তো হয়।
সারাবাংলা/এজেডএস