ওরে নীল দরিয়া’র সুরকার আলম খান আর নেই
৮ জুলাই ২০২২ ১২:৫৮ | আপডেট: ৮ জুলাই ২০২২ ১৭:০৭
বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী অনেক গানের সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান মারা গেছেন। ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’— এমন সব অসামান্য জনপ্রিয় গানের সুরের কারিগর তিনি। চলচ্চিত্রের গানে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ও সুরকার বিভাগে সাত বার তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।
শুক্রবার (৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টা ৩২ মিনিটে রাজধানীর শ্যামলীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আলম খান। গীতিকার কবির বকুল এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আলম খানের ছেলে আরমান খানও সংগীত পরিচালক। আর আলম খানের ছোট ভাই প্রয়াত আজম খান বাংলাদেশে পপসম্রাট তথা গুরু বলেই পরিচিত ছিলেন।
আরমান খান জানান, দীর্ঘ দিন ধরে ক্যানসারসহ নানা রোগে ভুগছিলেন আলম খান। আজ শুক্রবার বাদ আসর এফডিসিতে তার মরদেহ নেওয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে শ্রীমঙ্গল গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে আলম খানের মরদেহ। দাফনও হবে সেখানেই।
আলম খানে জন্ম ১৯৪৪ সালে, সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে। বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। মা জোবেদা খানম ছিলেন গৃহিণী। সাতচল্লিশে দেশভাগের পর ঢাকায় স্থায়ী হয় আফতাব উদ্দিনের পরিবার। সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে অধ্যয়নের সময়ই গানের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। ওস্তাদ ননী চ্যাটার্জির কাছে গানের তালিমও নেন। ১৯৬৩ সালে রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে তালাশ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। আর সংগীত পরিচালক হিসেবে তার অভিষেক ঘটে ১৯৭০ সালে, ‘কাঁচ কাটা হীরে’ সিনেমার মাধ্যমে।
‘স্লোগান’ সিনেমায় ‘তবলার তেড়ে কেটে তাক’ গানের মাধ্যমে প্রথম জনপ্রিয়তা পান আলম খান। আর ‘সারেং বউ’ সিনেমায় আব্দুল জব্বারের কণ্ঠে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গান নির্মাণ করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক জন্ম দিয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সমার্থক হয়ে ওঠা সব গান।
‘রজনীগন্ধা’ ছবিতে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’ এবং সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও অ্যান্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুশ’ চার দশক পরে এসেও শ্রোতাদের কাছে সমান জনপ্রিয়। ‘জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কী জাদু করিলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘কাল তো ছিলাম ভালো’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’র মতো চিরসবুজ গানগুলোর কারিগরও তিনি। ভিলেনের লিপে গানও যে জনপ্রিয়তায় সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, নব্বইয়ের দশকে হুমায়ুন ফরিদীর চরিত্রে ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’ গান দিয়ে তারও প্রমাণ দিয়েছেন আলম খান।
শত শত জনপ্রিয় গানের নির্মাতা আলম খান তিন শতাধিক ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেছেন। তার সুর করা গানের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। সংগীত পরিচালক হিসেবে ছয় বার এবং শুধু সুরকার হিসেবেও একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি।
সারাবাংলা/টিআর