Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারেক মাসুদ চলে যাওয়ার ১০ বছর

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ আগস্ট ২০২১ ১৪:৪২

এ দেশের চলচ্চিত্রকে যে কয়জন নির্মাতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে গিয়েছেন তাদের মধ্যে তারেক মাসুদ। শুক্রবার (১৩ আগস্ট) তার চলে যাওয়ার ১০ বছর পূর্ণ হলো। ২০১১ সালের এই দিনে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।

‘কাগজের ফুল’ নামক ছবির লোকেশন দেখা শেষে ঢাকায় ফেরার পথে তারেক মাসুদ ও তার সঙ্গীদের বহন করা মাইক্রোবাসের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদসহ পাঁচজন মারা যান। এরা হলেন এটিএন নিউজের সিইও মিশুক মুনীর, মাইক্রো চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল। আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদসহ তিনজন।

বিজ্ঞাপন

তার পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মাটির ময়না ২০০২-এর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিয়েছিলো। এছাড়া এটি প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে ‘সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র’ ক্যাটাগরিতে অস্কারে অংশ নেয়।

তারেক মাসুদের পরিচালিত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সোনার বেড়ি (১৯৮৫) এবং সর্বশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রানওয়ে (২০১০)। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তাকে ২০১২ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার।

তিনি ১৯৫৬ সালে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ ও বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ। ভাঙ্গা ঈদগা মাদ্রাসায় প্রথম পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের পর তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশ নেন এবং প্রথম বিভাগে পাশ করেন। এরপর আইএ পাশ করেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে। গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রথমে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হলেও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। জীবনের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়ে তার আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা হয়ে ওঠেনি।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তাকে বেশিরভাগ সময়েই ঢাকা আর্ট কলেজে (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) কাটাতে দেখা যেত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন থেকেই লেখক শিবির, বাম আন্দোলন এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, শামীম আখতারদের সাথে।

১৯৮২ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে তিনি তার প্রথম প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। এটি নির্মাণ করতে লেগেছিল সাত বছর। ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আদম সুরত প্রামাণ্যচিত্রটি ছিল প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের উপর। এরপর থেকে তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি ভ্রাম্যমাণ গানের দলকে নিয়ে মুক্তির গান। ১৯৭১ সালে মার্কিন নির্মাতা লিয়ার লেভিনের ক্যামেরাবন্দী ফুটেজের সাথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংরক্ষণাগার থেকে নেয়া ফুটেজ জুড়ে দিয়ে এই ছবিটি নির্মাণ করা

বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ার পাশাপাশি কয়েকটি সাময়িকী ও পত্রিকায় চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি করতেন।

সারাবাংলা/এজেডএস

তারেক মাসুদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর