Tuesday 14 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আয়নার সামনে দাঁড়াই, বলিরেখাগুলো দেখি, কিন্তু পাত্তা দেই না’

আসাদ জামান
৪ মে ২০২১ ২৩:০৮

রীতিমত চমকে দিয়েছেন স্যার অ্যান্থনি হপকিন্স। ৮৭ বছর বয়সে ‘দ্য ফাদার’-এ অনবদ্য অভিনয়ের জন্য অস্কার জয় করেছেন তিনি। এটি তার দ্বিতীয় একাডেমী অ্যাওয়ার্ড। এর আগে বাফটা, গ্লোডেন গ্লোব, ক্রিটিকস চয়েজ, প্রাইম টাইম কী জিতেন নি তিনি! অনন্য সাধারণ এ অভিনেতার একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা দ্য টকসে। সাক্ষাৎকারটি সারাবাংলার পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার আসাদ জামান

বিজ্ঞাপন

মি. হপকিন্স, আপনি একবার বলেছিলেন জীবনকে আপনি যতবেশি অনুভব করেন ততই স্বপ্নের মতো মনে হয়। সেক্ষেত্রে আপনার জীবনের এমন কোনও মুহুর্ত কি ছিল যেখানে চারপাশ বাস্তবতা থেকে দূরে চলেছে বলে মনে হয়েছিল?

অ্যান্থনি হপকিন্স: হ্যাঁ, গত ৩০ বছর আমার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই এমন ছিল। ধরুন এই সময়টাতে আমি একটি ছোট বাচ্চা হিসাবে স্বপ্ন দেখেছি, সেগুলো একসঙ্গে শিশুর আবার যুবকেরও। আমি মনে হয় ব্যাপারটা ৩০ বছর আগেই বুঝতে পেরেছি। আমি ভেবেছিলাম এটা অবাস্তব। কিন্তু এমনটা ঘটেছে কারণ আমি এরকমটা প্রত্যাশা করেছি, একই সঙ্গে আমি কল্পনা করেছিলাম। আমার পুরো জীবনটি এরকমই ছিল। এমন শক্তিতে আমি মুগ্ধ ছিলাম, যেমনটা আমাদের সবার মধ্যেই রয়েছে। আমরা নিজেদের মতো করে জীবনকে সাজাই।

আপনি কি মনে করেন অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আরও একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ জীবন আছে? লোকেরা প্রায়শই বলেন অভিনেতারা অনেক বেশি আবেগী, অনেক বেশি সংবেদনশীল?

অ্যান্থনি হপকিন্স: অভিনয়ের ক্ষেত্রে ‘শিল্প’ শব্দটির প্রয়োগ আমি অপছন্দ করি। আমি সবসময় অতি সাধারণ ও দরকারি টাইপ অভিনেতা হতে চাই, যে কিনা অভিনয়ের অতি গালভরা গল্পে বিশ্বাসী নয়। যার ফলে আমার মাঝে কিছু নাক সিটকানো স্বভাবও চলে এসেছিল। তবে আমার ধারণা এটি একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া; অভিনয় একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া, এবং পরিচালনা এবং সঙ্গীতও তাই।  সৃজনশীল মানুষেরা এবং নিজেকে একজন সৃজনশীল ব্যক্তি হিসাবে ধরে নিয়ে বলতে পারি আপনাকে অভিনেতা, সঙ্গীতশিল্পী বা চিত্রশিল্পী হতে হবে— তবে আমি মনে করি আপনি যদি  কোনো সৃজনশীল পেশায় বা ব্যবসায় থাকেন তাহলে আপনার মধ্যে অতিরিক্ত সচেতনতা থাকবে। এটা আপনাকে আলাদা করে না।

বিজ্ঞাপন

অনেক অভিনেতা এমন আচরণ করেন যেন তারা…

অ্যান্থনি হপকিন্স: আপনাকে অভিনেতা হিসাবে এসব বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ আপনি যখন বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে আপনার লাইসেন্স আছে, আপনি অনন্য, অন্যদের চেয়ে সেরা, তখন খুব বড় সমস্যায় পড়বেন। এটা উন্মাদনার পথে নিয়ে যায় এবং স্টুডিওতে প্রচুর মানুষ এরকম হয়। তারা বিশ্বাস করে যে তারা বিশেষ জন। আমি মনে করি অভিনেতাদের আশীর্বাদ করা হয়েছে, বা অভিশপ্ত, সম্ভবত কিছুটা অতিরিক্ত সচেতনতা, যা  আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। এটাই শেষ কথা। এর অর্থ এই নয় যে আপনি অন্যদের চেয়ে সেরা। মনে রাখতে হবে এটা আপনার মেধা বিকাশের একটি ধারা।

এমন কোন পরিচালক কি ছিল যিনি আপনাকে অনেকটাই অনুপ্রাণিত করেছিল?

অ্যান্থনি হপকিন্স: বেশ কয়েকজন রয়েছে, তাদের একেকজনের কাজের ধরন একেক রকম। আমি অলিভার স্টোন, স্পিলবার্গসহ অনেকের সঙ্গেই আমি কাজ করেছি। এরমধ্যে কিছু সেরা কাজও করার সৌভাগ্য হয়েছে। তবে আমি যখন নিজে পরিচালনা করি তখন চেষ্টা করি নিজের কিছু বৈশিষ্টের ছাপ রাখতে। স্বাভাবিকভাবেই আপনি প্রভাবিত হন। অলিভার স্টোন একজন দুর্দান্ত পরিচালক এবং কয়েক বছর ধরে আমি অনেক ছবি দেখেছি, তবে আমি নিজের কল্পনা থেকে আমার নিজস্বতা তৈরির চেষ্টা করি। আমি সকল নিয়ম ভেঙ্গে আমার মতো করে সিনেমাটা বানাতে চাই।

আপনার এ যুবক থাকার রহস্য কি অভিনয়?

অ্যান্থনি হপকিন্স: হ্যাঁ, আমি যুবক! সৃজনশীল হওয়া এবং আপনার মস্তিষ্ককে কাজে লাগানো বুদ্ধিমানের যদি না আপনি মারা যান। তবে অনেক সময় আমার ক্লান্তি আসে, মনে হয় আমার এখনই ছেড়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু এরপরও আমার কখনোই মনে হয়নি অভিনয় ছেড়ে দেই। অভিনয়টা আমি উপভোগ করি আর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চালিয়ে যেতে চাই।

আপনি কি এখনও অভিন দ্বারা মোহবিষ্ট?

অ্যান্থনি হপকিন্স: এটা ঠিক আমি অভিনয় দ্বারা অনেকটাই মোহবিষ্ট ছিলাম; তবে এখন তা আর হয় না। আমি অভিনয় করতে পছন্দ করি, কারণ এটা করা সহজ। আমি মঞ্চে অভিনয় করতে পারি না, কারণ মঞ্চে অভিনয় অত্যন্ত রাশভারী একটা জিনিস। আমার কাছে কারাগারের মত মনে হয়। তবে আমি তাদের প্রশংসা করি যারা এই কাজটি করতে পারে।

আজকাল আপনি জীবনকে কীভাবে দেখছেন?

অ্যান্থনি হপকিন্স: পিয়ানোতে বাজাতে আমি ভালোবাসি। আমি বই পড়ি, ছবি আঁকার চেষ্টা করি এবং গানে সুর করি— এসবের মধ্যে দিয়ে একটি সুন্দর সম্পূর্ণ সৃজনশীল জীবন পেয়েছি। আমি পেইন্টিং ভালোবাসি। যদিও জানি না আমি ভালো আঁকি কিনা, তবুও আঁকি। আমি খুব দ্রুত আঁকি অ্যাক্রেলিকে। সব মিলিয়ে জীবন সুন্দর। আর অভিনয় এমন একটা জিনিস যা আমি উপভোগ করি।

এর মাধ্যমে নিজের সাথে নিজের সামঞ্জস্য করছেন?

অ্যান্থনি হপকিন্স: আমাদের ছোটবেলার জানা, ভাল লাগা বা মন্দ লাগা এখনও অন্যরকম লাগে। আপনি যখন ছোট ছিলেন তখন আপনি অনেক বেশি দুরন্ত ছিলেন এবং সবকিছুই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং আপনি যখন পিছনে ফিরে তাকান তখন আপনার মনে হয়, ‘ওহ! এই ছিল তাহলে?’ আসলে কোনো কিছুই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসলে আমরা আমাদের জীবনটা যাপন করছি কারণ আমরা এখানে অতি অল্প সময়ের জন্য এসেছি।

তাইলে আপনি বুড়ো হওয়া উপভোগ করছেন?

অ্যান্থনি হপকিন্স: হ্যাঁ, আমি উপভোগ করি। আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই, বলিরেখাগুলো দেখি, কিন্তু পাত্তা দেই না। মৃত্যুকে বলতে পারি অনেক বড় উদ্ধারকারী, যা আপনাকে সবকিছু থেকে দূরে নিয়ে যাবে এবং যা কিনা জীবনকে সুন্দর করে।

আপনি যা যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন সবকিছু অর্জন করেছেন?

অ্যান্থনি হপকিন্স: চাওয়া পাওয়ার চেয়েও বেশি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান। আমার জীবনে অনেক সমস্যা এসেছে, অশান্তি এসেছে; কিন্তু এরপরও আমি সামনে এগিয়ে গিয়েছি। আমি এক অসাধারণ জীবনযাপন করেছি এবং এর জন্য সত্যি অনেক কৃতজ্ঞ।

সারাবাংলা/এজেডএস

আন্থনি হপকিন্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর