১৯-এ বলিউডের আলোচিত ১০
২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:৫৩ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:৪০
কোন কিছুই সমালোচনা বা বিতর্কের উর্ধ্বে না। তবে বিনোদন জগতের বিতর্কিত বা আলোচিত বিষয় সম্ভবত একটু বেশিই! তাই বছরের একেবারেই শেষপ্রান্তে এসে এই জগতের নানা বিষয় সম্পর্কিত মূল্যায়ন দাঁড় করানো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সেক্ষেত্রে প্রথমেই আসে চলচ্চিত্রের কথা।
চলতি বছরে বলিউডের নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী তথা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ঘটে গেছে নানা ঘটনা। দর্শক ও বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ে নানারকম চড়াই-উৎড়াই পাড় করতে হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পকে। আসুন জেনে নেই, কী ছিল সেই ঘটনাগুলো।
‘ঝাঁসির রানী’ নিয়ে দর্শকদের অভিযোগ
ঝাঁসির রানীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘মণিকর্ণিকা’ ছবিটি। পরিচালক কৃশের এই ছবিতে ঝাঁসির রানীর ভূমিকায় ছিলেন কঙ্গনা রানৌত। অভিযোগ উঠেছে, এই ছবিতে পরিচালক ঝাঁসির রানীর চরিত্রকে ভালোভাবে তুলে ধরতে পারেননি। অর্থাৎ মূল চরিত্রের গুরুত্ব ধরে রাখতে পারেনি। বরং এই চরিত্রকে একপাশে গুটিয়ে রাখা হয়েছিল।
মণিকর্ণিকা থেকে বের হয়ে আসা অভিনেতা সোনু সুদেরও এমনই অভিযোগ ছিল। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, এই ছবির গল্প যেভাবে লেখা হয়েছিল শুটিংয়ে তা অনুসরণ করা হয়নি।
বিনোদন সাংবাদিকদের তোপের মুখে কঙ্গনা
কঙ্গোনা রানৌত অভিনীত চলতি বছরের দ্বিতীয় ছবি ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’ ব্যাপক আলোচনায় আসে। এই ছবিটি মুক্তির কিছুদিন আগে কঙ্গনার প্রথম ছবি ‘মণিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি’ ছবিটি নিয়ে সাংবাদিক জাষ্টিন রাও খারাপ মন্তব্য করেছিলেন। কঙ্গনা অভিযোগ করেন, জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণে ওই সাংবাদিক কঙ্গনাকে উগ্র বলেছিলেন।
এই ঘটনার পর কঙ্গনা রনৌতের বোন রাঙ্গোলি টুইটারে এসব কথা প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিকদের নিয়ে অত্যন্ত বিরূপ মন্তব্য করেন। কঙ্গনা ও তার বোনের এমন আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিনোদন জগতের সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানায়।
অভিযুক্ত ‘কবির সিং’
শহীদ কাপুর অভিনীত চলতি বছরের আলোচিত ছবি ‘কবির সিং’। এই ছবি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য রয়েছে দর্শকদের। ছবিতে মেয়েবন্ধুকে চড় মারার দৃশ্যটি ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করে। অনেকের মতে, ছবিটি নারীবিদ্বেষী এবং এখানে পুরুষকে বড় করে দেখানো হয়েছে।
এসব আলোচনা, সমালোচনার প্রেক্ষিতে পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি করেন আরেক বিতর্কিত মন্তব্য- চড় মারার স্বাধীনতা যদি নাই-ই থাকে, তবে সেই ভালোবাসায় গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানিই অনুপস্থিত।
‘ইনশাল্লাহ’ ছিল আলোচনায়
ইনশাল্লাহ ছবিটিও চলতি বছর আলোচনায় আসে। সঞ্জয় লীলা বানশালির পরিচালনায় এই ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল সালমান খান ও আলিয়া ভাটের। তবে এই ছবির শুটিং শুরুর আগেই সালমান খান এবং পরিচালকের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। যা নিয়ে বিনোদন জগতে ব্যাপক আলোচনা হয়। সালমান বেরিয়ে যান ছবি থেকে। আটকে যায় ‘ইনশাল্লাহ’র কাজ।
অক্ষয়ের নাগরিকত্ব নিয়ে জল ঘোলা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে না পেরে আলোচনায় আসেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা অক্ষয় কুমার। কারণ ঘাটতে গিয়ে জানা যায়, তিনি ভারতের নাগরিকই নন। এই অভিনেতার রয়েছে কানাডার নাগরিকত্ব। এই ঘটনা দর্শকদের কাছে কৌতুকের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যদিও সম্প্রতি অক্ষয় কুমার জানিয়েছেন, তিনি ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
‘অবতার’ নিয়ে কথা বললেন গোবিন্দ
জেমস ক্যামেরনের জনপ্রিয় সিনেমা ‘অবতার’-এ অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল গোবিন্দকে এবং ক্যামেরন নিজেই তাকে এই প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন গোবিন্দ। এ ব্যাপারে তিনি চলতি বছর মুখ খোলেন। গোবিন্দ জানান, অবতারে কাজ করার জন্য তার কাছে ৪০০ দিন সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পক্ষে সেই সময় অত দিন ডেট দেওয়া কার্যত অসম্ভব ছিল। এছাড়া ওই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তাকে ‘বডি পেন্টিং’ করতে হত। গোবিন্দ আবার বডি পেন্টিংয়ের ঘোর বিরোধী।
করন জোহরও ছিলেন দর্শকদের কাঠগড়ায়
বলিউডের চলচ্চিত্র পরিচালক করন জোহরের ইনস্টাগ্রামে পোষ্ট করা একটি ছবি ব্যাপক আলোচনায় আসে। করন জোহরের বাসায় একটি আড্ডার ছবি ছিল সেটি। অভিনেতা ভিকি কৌশলকে এই ছবিতে মদ্যপান অবস্থায় দেখা গেছে। তবে করন জোহর তার বিরুদ্ধে করা কোন সমালোচনা আমলে নেননি।
রাজনৈতিকভাবে সমালোচিত ‘দাবাং থ্রি’
সালমান খানের ‘দাবাং থ্রি’ সিনেমার দুইটি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন পাকিস্তানী জনপ্রিয় শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার কারণে শেষ পর্যন্ত সিনেমা থেকে পাকিস্তানি গায়ক রাহাত ফতেহ আলী খানের গান ফেলে দিয়েছেন সালমান খান। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক সবসময়ই দ্বান্দিক। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই নতুন করে উত্তপ্ত হয় ভারত ও পাকিস্তান। এরপরই পাকিস্তানি শিল্পীদের বলিউডের কোনও প্রজেক্টে আর কাজ করানো হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই প্রেক্ষিতেই সালমান খানের সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে রাহাত ফতেহ আলী খানের গান।
পিছিয়ে যায় ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’র মুক্তি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বলিউড অভিনেতা বিবেক ওবেরয় অভিনীত ছবি ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’ নির্মিত হয় চলতি বছর। এই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ৫ এপ্রিল, লোকসভা নির্বাচনের ঠিক চারদিন আগে। কিন্তু কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলোর বিরোধিতায় ছবিটির মুক্তির তারিখ পিছিয়ে যায়। এই দলগুলো বিরোধিতা জানিয়ে বলে, ভোট গ্রহণের আগ দিয়ে এই ছবির মুক্তিতে সুবিধা পাবেন মোদি ও তার দল বিজেপি। প্রভাবিত হতে পারেন সাধারণ ভোটাররা। এজন্য ছবিটি মুক্তি পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছিল বিরোধী দলগুলো। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের আগেই (২৪ মে) মুক্তি পায় ছবিটি।
রাজস্থানে ‘পানিপথ’ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড়
পানিপথ ছবিটি চলতি বছরে চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে সমালোচনার মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। ঐতিহাসিক পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধকে উপজীব্য করে এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। ছবিটির সমালোচনা করে অনেকেই বলেন, মহারাজা সুরজমলের চরিত্রকে খাটো করে দেখানো হয়েছে এতে। যা ঐতিহাসিক ঘটনাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে।
দর্শকদের বিরোধীতার মুখে পড়ে কিছুদিনের জন্য এই চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সমালোচিত অংশ (যেখানে সুরজমলকে খাটো করা হয়েছে) বাদ দেওয়া হয়।