Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের দিয়ে দিব্যেন্দু উদাসের ‘ডানা ভাঙা পরী’


২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:৩০ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:১৫

রুখো অপসংস্কৃতি, রুখো সাম্প্রদায়িকতা, সমাজ পরিবর্তন কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতা— এসব ভারি আপেক্ষিক বিষয় অনেকের কাছেই দুর্বোধ্য। তারা শুধু বোঝে প্রতিনিয়ত নষ্ট কিছুর বিরুদ্ধে তাদের লড়াই করতে হয়। অন্ধকার ঘিরে ধরলে দিশাহীন হাতড়ে বেড়ায়, যদি আলোর দেখা পায়!

তাজা সবুজ প্রাণগুলোকে গ্রাস করে নিচ্ছে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কুরুচিপূর্ণ সংস্কৃতি অথবা মাদকের নেশা। চলমান সময় শুধু হতাশা আর অপরকে অশোভনভাবে ডিঙিয়ে যাওয়া। লক্ষ্যহীন ছুটে চলা সকলের, সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে গড্ডালিকায় ভেসে যাওয়া। এর মধ্যেই কেউ কেউ ব্যতিক্রম, যারা সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যান না, সমস্যাকে সবার সামনে তুলে ধরেন, আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। তারা চান মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে, সুন্দরকে দু’চোখ ভরে দেখতে। ‘জীবন সত্য প্রকাশে শিল্পীত চেতনা’— এটি কেবল স্লোগান নয়, এ স্লোগানের ভেতরেই লুকিয়ে আছে জীবনকে কিভাবে সুন্দর চোখে দেখতে হয় তার কথা। সত্য-মিথ্যা, সুন্দর-অসুন্দর, সঙ্গতি-অসঙ্গতিকে তারা শিল্পীত মাত্রায় সবার সামনে তুলে ধরতে চান।

বিজ্ঞাপন

‘ডানা ভাঙা পরী’ নাটকের দৃশ্য

এমনই এক লক্ষ্যে বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের ইতিহাসে ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ জন্ম নেয় নাট্যদল ‘উত্তরীয় থিয়েটার’। যদিও দলনেতার মস্তিষ্কে এর জন্ম তারও বছরখানেক আগে। তবুও বিভিন্ন কর্মশালা এবং ছোট ছোট কাজের মধ্যে দিয়ে গুছিয়ে নিয়ে সেইদিনই আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করলো ‘উত্তরীয় থিয়েটার’। যার মস্তিষ্কপ্রসূত এই দল এবং যিনি দলপ্রধান হিসেবে এগিয়ে নিচ্ছেন এই দলকে, তিনি- দিব্যেন্দু উদাস। এককথায় যিনি বলেন- ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’, অবশেষে- ‘উত্তরীয় থিয়েটার’।

বিজ্ঞাপন

এই দলের প্রথম প্রযোজনা ‘হ্যাং টিল ডেথ’। এটি ভারতীয় নাট্যকার বিমল বন্দোপাধ্যায়ের নাটক ‘একটি অবাস্তব গল্প’ অবলম্বনে রূপান্তরিত। ‘হ্যাং টিল ডেথ’ নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ কলাতিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে এবং মঞ্চে দলের আত্মপ্রকাশও এ দিনেই।

‘ডানা ভাঙা পরী’ নাটকের দৃশ্য

প্রথম প্রযোজনার সাফল্যের পর সম্প্রতি তারা মঞ্চে নিয়ে আসলো তাদের দ্বিতীয় প্রযোজনা ‘ডানা ভাঙা পরী’। এটি একটি মৌলিক প্রযোজনা। সাম্প্রতিক ঘটনার রিফ্লেকশন। দিব্যেন্দু উদাসের রচনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় এই নাটকের প্রথম প্রদর্শনী হয় এ বছরেরই ৫ নভেম্বর। যেটি উদ্বোধন করেছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসি মজুমদার।

‘ডানা ভাঙা পরী’ নাটকটির গল্পে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তা হল আমাদের মেয়ে শিশুদের। মেয়ে শিশুরা যে সর্বক্ষেত্রে অনিরাপদ, সে বিষয়টাকেই তুলে ধরেছেন এই নাটকের নাট্যকার ও নির্দেশক দিব্যেন্দু উদাস। এতে অভিনয় করেছে ৪ জন কিশোরী, যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। চারটা চরিত্রের নামই পরী। তারা প্রত্যেকেই সামাজিক প্রতিহিংসার শিকার। চারটা মেয়ের গল্প নিয়েই একই সুত্রে গাঁথা হয়েছে পুরো নাটকটি।

চারটি পরী, যাদের মৃত্যু হয় বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে। প্রথমজন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময়। দ্বিতীয়জন নেশাগ্রস্থ হয়ে পাচারকারীদের খপ্পরে। তৃতীয়জন বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের দাবীতে আগুনে পুড়ে। এবং শেষজন চক্রান্তের শিকার হয়ে বোমা বিস্ফোরণে।

‘ডানা ভাঙা পরী’ নাটকের দৃশ্য

পরীদের বলা এই চারটি গল্প নিয়েই নাটক ‘ডানা ভাঙা পরী’। যারা আর কখনোই পৃথিবীতে ফিরে আসতে চায় না। নাটকের শেষেও যারা জোর গলায় বলে, যতদিন পর্যন্ত তাদের বাসযোগ্য করে পৃথিবীকে গড়া হবেনা, ততদিন তারা আর ফিরবে না।

নাটক প্রসঙ্গে নাট্যকার ও নির্দেশক দিব্যেন্দু উদাস জানালেন, ‘উত্তরীয় থিয়েটার সদস্যদের সাথে কথা বলছিলাম কি ধরনের নাটক নিয়ে কাজ করা যায়। হঠাৎ করেই বিষয়টা এসে গেলো মাথায়। আমাদের চারপাশে অসঙ্গতির পাহাড়। সবাই ছুটছে আর ছুটছে- দিশাহীন, লক্ষ্যহীন। মানবিক মূল্যবোধ, জীবনবোধের বালাই নেই। আমাদের সন্তানরা বেড়ে উঠছে এক অনিশ্চয়তায়। বিশেষ করে মেয়ে শিশুরা সর্বত্রই অনিরাপদ। কোনভাবেই আমরা তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে পারছিনা। প্রতিনিয়তই বিভিন্ন বঞ্চনার শিকার হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই পরী’রা। আমি আমার এই পরীদের গল্পই বলবো।’

নির্মাণ প্রসঙ্গে বললেন, ‘লেখা ও কাজের পদ্ধতিটাও ঠিক করে ফেললাম। একটু একটু করে লিখি আবার তা মহড়া করি। যেহেতু গল্পটা মাথায় জেঁকে বসেছিলো কাজ করতে একটুও অসুবিধা হচ্ছিলো না। সাথে মিউজিকটাও ভাবছিলাম। এভাবে কাজ করতে বেশ ভালোই লাগছিলো। একসময় মনে হলো আমাদের ‘ডানা ভাঙা পরী’ মঞ্চোপযোগী হয়ে উঠেছে। আমি যেভাবে গল্পটি বলার চেষ্টা করেছি আশা করি তা সবার কাছে ভালো লাগবে। বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই আইরিন পারভীন লোপাকে, তিনি চমৎকার কস্টিউম ডিজাইন করে দিয়েছেন এবং জিল্লুর রহমানকে, যিনি লাইট স্কেচ্ করে দিয়েছেন। সবশেষে একটাই প্রত্যাশা নাটকের জয় হোক।’

‘ডানা ভাঙা পরী’ নাটকের পোষ্টার ও নাট্যকার-নির্দেশক দিব্যেন্দু উদাস

তিনি আরো বললেন, ‘এই নাটকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে অভিনেত্রীরা। যারা প্রত্যেকেই কেরানীগঞ্জের একেবারেই সুবিধাবঞ্চিত ঘরের মেয়ে। যাদের একজনের বাবা সবজি বিক্রেতা, একজনের টিউবওয়েল প্লাম্বার, একজনের অটো ড্রাইভার ও অন্যজন কৃষক।’

নাটকের চারটি চরিত্রে অভিনয় করেছে মারিয়া আক্তার (পরী ১), জিন্নাত আফরীন নূপুর (পরী ২), সুরাইয়া আক্তার (পরী ৩), ও শায়লা আক্তার (পরী ৪)। পোষাক পরিকল্পনায় আইরিন পারভীন লোপা, আলোক নির্দেশনায় জিল্লুর রহমান, আবহসঙ্গীতে দিব্যেন্দু উদাস, কোরিওগ্রাফী শায়লা আক্তার, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা ও প্রযোজনা অধিকর্তা সানভি আহম্মেদ রাফি।

‘ডানা ভাঙা পরী’র দ্বিতীয় প্রদর্শনী শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৭টায়।

আইরিন পারভীন লোপা উত্তরীয় থিয়েটার টপ নিউজ ডানা ভাঙ্গা পরী দিব্যেন্দু উদাস নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তন মহিলা সমিতি মিলনায়তন হ্যাং টিল ডেথ

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর