Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমুদ্র সৈকতে নাচের মহাযজ্ঞ


১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:৩৭ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:২৫

সৈকতে বেজে উঠবে নূপুর। ঢেউয়ের তালে তালে নেচে উঠবেন নৃত্যশিল্পীরা। প্রতিবারের মতো এই শীতেও অতিথি পাখি আর পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে সমুদ্রকন্যা কক্সবাজারের সৈকতে। সেখানেই বসবে নানা সংস্কৃতির মানুষের মিলনমেলা। সেই আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করতে সৈকতে বসতে যাচ্ছে নাচের আন্তর্জাতিক উৎসব ‘ওশান ডান্স ফেস্টিভ্যাল-২০১৯’।

আগামী ২২ থেকে ২৫ নভেম্বর কক্সবাজারের সৈকতে বসতে যাচ্ছে এ উৎসব। বিশ্বব্যাপী নৃত্যশিল্পীদের সংগঠন দ্য ওয়ার্ল্ড ডান্স অ্যালায়েন্স-এশিয়া প্যাসিফিকের (ডব্লিউডিএ-এপি)-এর বাংলাদেশ শাখা নৃত্যযোগ প্রথমবারের মতো শুরু করতে যাচ্ছে ‘ওশান ডান্স ফেস্টিভ্যাল’ নামের একটি দ্বি-বার্ষিক নৃত্য উৎসব। বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের সঙ্গে সাংস্কৃতিক পর্যটনের মেলবন্ধন রচনার জন্যই এই আয়োজন। এশিয়ার ১৫টি দেশ থেকে এ উৎসবে যোগ দেবেন প্রায় দুই শতাধিক নৃত্যশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক ও কোরিয়োগ্রাফার।

বিজ্ঞাপন

উৎসবের প্রিন্সিপাল কিউরেটর ও নৃত্যযোগের সাধারণ সম্পাদক লুবনা মারিয়াম বলেন, “এই উৎসব সাংস্কৃতিক-কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক-পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আমরা অঙ্গীকার করছি, জাতিকে আমরা একটি বিশ্বমানের উৎসব উপহার দেব।”

উৎসবের অন্যতম শিল্পী শিবলী মহম্মদ বলেন, “আমাদের দেশে এত বড় একটা উৎসব হতে যাচ্ছে, শিল্পী হিসেবে আমি ভীষণ গর্বিত। এ উৎসবের মধ্যদিয়ে আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।”

নৃত্যযোগের সভাপতি ও নৃত্যশিল্পী আনিসুল ইসলাম হিরু বলেন, “বাংলাদেশের নৃত্য একদিন বিশ্ব দখল করে নেবে। এই উৎসব আয়োজনের মধ্যদিয়ে সেটা প্রমাণিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

বিজ্ঞাপন

উৎসবে থাকবে বক্তৃতা ও প্রবন্ধ উপস্থাপন, সেমিনার, কর্মশালা, নৃত্য পরিবেশনা। এ বছরের বিষয়বস্তু ‘দূরত্বের সেতুবন্ধন’, অর্থাৎ সমাজের ভেতরকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দূরত্বকে নাচের মাধ্যমে পূরণের ধারণা তুলে ধরা হবে। বক্তব্য উপস্থাপন করবেন ভারতীয় শিল্পী লীলা স্যামসন, ডব্লিউডিএ-এশিয়া প্যাসিফিকের সভাপতি ড. উর্মিমালা সরকার, বাংলাদেশর শিল্পী ও ডব্লিউডিএ-এশিয়া প্যাসিফিকের সাধারণ সম্পাদক লুবনা মারিয়াম। এ ছাড়া একটি ভিডিও প্রযোজনা পাঠাবেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নৃত্যশিল্পী আকরাম খান।

উৎসবের চার দিন ভোর থেকে মারমেইড ইকো রিসোর্ট সংলগ্ন সৈকতে চলবে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন, কর্মশালা, সেমিনার। সন্ধ্যা থেকে কক্স কার্নিভাল মিলনায়তনে থাকবে দুই দফা নৃত্য পরিবেশনা। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসবেন আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচিত শিল্পীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে চলবে জাতীয়ভাবে নির্বাচিত শিল্পীদের পরিবেশনায় লোকনৃত্য, সমসাময়িকনৃত্য, শাস্ত্রীয়নৃত্য ও নৃত্যনাট্য।

বিদেশি শিল্পীদের মধ্যে থাকবে তাইওয়ানের নৃত্য প্রযোজনা ‘বাটু উইথ অর্নামেন্ট’, ‘নট অ্যালোন’, ‘ইমপ্রেশনস অব আওয়ার হোম টাউন’, ‘গ্রেটার দ্যান টু লেস দ্যান’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযোজনা ‘ত্রিকোন কানেকটিভিটি’। ভারতের প্রযোজনা ‘এজেস’, ‘ইনট্রানসিট’, ‘আনশেয়ারড ডিজায়ারড’, ‘টাচ দ্য সাউন্ড’। কোরিয়ার প্রযোজনা ‘স্প্রিং কামিং উইথ আ ওয়ার্ম ব্রিজ’ ও চীনের প্রযোজনা ‘টয়লেট পাম্প’।

দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকবে অমিত চৌধুরী ও সুইটি দাসের ‘রূপান্তর’, জুয়েইরিয়াহ মৌলির ‘অর্ধনারীশ্বর’, শাম্মি আখতারের ‘মাইন’, আনন্দিতা খানের ‘রিফিউজি’, মৌমিতা জয়ার ‘রিলিজিয়ন: আ কজ অব কনফ্লিক্ট ইন কালচার’, আবু নাঈম খানের ‘লালন’, আরিফুল ইসলাম অর্ণবের ‘মানুষ’, তাহনুন আহমেদীর ‘আজান’, মেহরাজ হক তুষারের ‘ট্রাস্ট’, অলকা দাস প্রান্তির ‘কত্থক টু ওড়িশি’, বৃষ্টি ব্যাপারির ‘ফ্রেম অব মাইন্ড’।

এ ছাড়া যৌথ পরিবেশনা লিথুনিয়া ও ভারতের শিল্পী ক্রিস্টিনা ডলিনিনা ও শিবানি ভার্মার প্রযোজনা ‘হ্যাভ উই মেট বিফোর?’, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের প্রযোজনা অনন্যা চ্যাটার্জি ও তাসকিন আনহার ‘তফাত’, ভারতের সেফায়ার ক্রিয়েশন ও বাংলাদেশের নৃত্যশৈলির প্রযোজনা ‘কি তা রে বা’।

ভারত ও বাংলাদেশের অনিল কুমার সিং ও মোফাজ্জল আলিফের প্রযোজনা ‘আই অ্যান্ড মাইসেল্ফ’ এবং কানাডার সাশার জারিফের সঙ্গে কোরিওল্যাব থেকে নির্মিত হংকং, ভারত ও বাংলাদেশের একটি বিশেষ প্রযোজনা।

কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে নৃত্যনাট্য বাদী–বান্দার রূপকথা। সুকল্যাণ ভট্টাচার্যের নৃত্য পরিচালনায় শামীম আরা নীপা ও শিবলী মহম্মদসহ এতে নাচ করবেন আশি জনেরও বেশি শিল্পী।

বাংলাদেশের পরিবেশনায় জাতীয়ভাবে নির্বাচিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে সাধনা, নৃত্যাঞ্চল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কল্পতরু, ধৃতি নর্তনালয়, ভাবনা, নৃত্যশৈলী, বন্ধু সোশাল ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি। উল্লেখযোগ্য শিল্পীদের মধ্যে রয়েছে লায়লা হাসান, মুনমুন আহমেদ, তামান্না রহমান, রাজদ্বীপ ব্যানার্জি, সাজু আহমেদ প্রমুখ শিল্পী ও তাদের দলের পরিবেশনা। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলার শিল্পী ও আদিবাসী শিল্পীরাও নাচ করবেন এই উৎসবে।

উৎসবের আয়োজন সহযোগী হিসেবে আছে মাত্রা ও চ্যানেল আই, সমর্থন দিচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও টুরিজম বোর্ড। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এ আয়োজনের অ্যাকাডেমিক সহযোগী।

ওশান ডান্স ফেস্টিভ্যাল-২০১৯ কক্সবাজার টপ নিউজ নৃত্যযোগ নৃত্যশিল্পী আকরাম খান লুবনা মারিয়াম শিবলী মহম্মদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর