Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুলতান সুলেমানের নির্মাতার সঙ্গে আলাপচারিতা


৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ১১:০৫ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৭:০৪

মাকসুদা আজীজ, তুরস্ক থেকে

মানুষটার নাম তিমুর সাভচি। দীর্ঘদেহী, চমৎকার গড়ন, মুখে চাপা দাড়ি আছে। সব মিলিয়ে বেশ সুদর্শন। যেখানেই যান বেশ সমাদর পান। তুরস্কের ঘরে ঘরে লোকে তাকে চিনে। তবে তিমুরের দেশ তুরস্ক, যেখানে ঘাটে ঘাটে পথে পথে সুদর্শন মানুষের দেখা মিলে তবে কেন তিমুরের জন্য এত উচ্ছ্বাস? আর তুরস্কের এই সেলিব্রেটি বাংলাদেশের খবরেই বা কীভাবে এলেন?

তিমুরের সাথে আমার কথা হয় তুরস্কের আন্তলিয়া নামে একটা ছিমছাম শহরে। ওরা বলে আনাতালিয়া। আমি গিয়েছি তুর্কি রেডিও ও টেলিভিশন কর্পোরেশনের আমন্ত্রণে একটি মিডিয়া ট্রেনিং এ। তিমুর এখানে একটা ফোরামে প্যানেলিস্ট। শুরুতেই তিমুরের কাজ দেখানো হলো, আর তুরস্কের আশেপাশের দেশ থেকে আসা লোকেরা সবাই হই হই করে উঠল, সবাই ক্যামেরা নিয়ে উসখুস শুরু করলো কখন একটু তিমুরের সাথে ছবি তোলা যাবে।

আমার কাছেও তিমুরকে বলার মতো একটা গল্প ছিল। তিমুর হচ্ছে সেই মানুষ যার জন্য গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশের অধিকাংশ নাট্যশিল্পীরা পথে নেমে এসেছিল। তারা দেশ থেকে তিমুর হটাও একটা আন্দোলনও করেছেন। সেই আন্দোলনের খবর বিশ্লেষণ করার সুবাদে আমিও তিমুরের কাজের সাথে বেশ পরিচিত। তিমুরের বিখ্যাত ধারাবাহিক, ম্যাগনিফিসেন্ট সেঞ্চুরি যেটাকে আমরা সুলতান সুলেমান নামে বছর খানেক ধরে গোগ্রাসে গিলছি।

সেদিন শাড়ি পরার জন্যই হোক আর যে জন্যই হোক আমাকে দূর থেকে সবাই খুব লক্ষ্য করছিল। তবে আয়োজকরা কেউ কথা দিতে পারলেন না তিমুরের সঙ্গে একান্ত আলাপ হতে পারে কি না। তিমুর খুব ব্যস্ত, এখান থেকে যাবেন এয়ারপোর্টে, তাকে প্লেন ধরতে হবে। আর যার একটু পরেই প্লেন ধরার তাড়া থাকে তার কাছে পৌঁছানো খুব সহজ না। তবে সৌভাগ্য, দোভাষী খুঁজে মরছিলাম, ইংলিশ প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটরই এসেছিলেন শাড়ি দেখে জিজ্ঞেস করতে এত সুন্দর পোশাকটা কোন দেশের। হয়ে গেলো আমার কাজ।

বিজ্ঞাপন

তিমুর খুব বুদ্ধিমান আর ঝাঁ চকচকে দর্শন লোক। লেখাপড়া করেছেন আইনে। তার টিমস প্রোডাকশন নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা আছে। কোম্পানি গোড়াপত্তন করেন ২০০৬ সালে। প্রথম বছরই দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট নামে একটি টিভি সিরিয়াল আনেন যেটা শুধু তুরস্ক নয় বরং সারা দুনিয়াই কাঁপিয়ে দেয়। এই সিরিয়ালটির এখন পর্যন্ত চারটি সিজন সম্প্রচারিত হয়েছে এবং বিশ্বের প্রায় ৫০টি ভাষায় এই সিরিয়াল অনুবাদ করে দেখানো হয়েছে।

শুরুতে শুধুমাত্র মিনিট খানেক আলাপচারিতার সময় বেঁধে দেয়া থাকলেও আমাদের আলাপ শেষ অবধি গড়াতে গড়াতে অনেকটা সময় গড়িয়ে যায়। সেটাই তুলে দেয়া হলো সারাবাংলা’র পাঠকদের জন্য।

সারাবাংলা : এত গল্প থাকতে সুলতান সুলেমানকে কেন বেছে নিলেন?

তিমুর: তুরস্কের লোকেরা তাদের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে খুব গর্ববোধ করে। এই গর্বটা তারা প্রকাশ করে, ধারণ করে, এবং সবখানে টেনে আনে। তাদের পৌরুষের বিষয়ে তারা খুব সচেতন। সুলতান সুলেমান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় যেটাকে অটোমানদের সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সুলতান ছিলেন। তার জীবন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। সাথে ইসলামী ইতিহাসেও তার কথা বলা আছে। তিনি রোমানদের সরিয়ে নিজের রাজ্য বিস্তৃত  করেন। তো সুলেমান আসলে আগে থেকেই হিরো ছিল আমি এই পরিচয়টা কাজে লাগিয়েছি শুধু।

সারাবাংলা : এটা একটা বিশাল প্রযোজনা ছিল এবং অনেক টাকা এতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। শুরুতেই এত বড় করার বিষয়টা নিশ্চয়ই খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল?

তিমুর: দেখুন আমাদের দেশে মানুষ যে কোনো বিষয়ের মানের বিষয়ে খুব সচেতন। ধরুন আজকে সামান্য এক প্যাকেট জুস ঠিক তাদের আশা করা মানে যেতে পারছে না। সবাই এটা নিয়েই কথা বলবে এবং যিনি এই জুসের ব্যবসা করছে তাকে হয় ব্যবসা থেকে সরে যেতে হবে অন্যথায় ভোক্তাদের চাহিদা ঠিকঠাক পূরণ করতে হবে। এর কোনো মাঝামাঝি অবস্থান নেই।
আমরা কাজ করছিলাম সুলেমানকে নিয়ে। যিনি একটা সাম্রাজ্যবাদী সুলতান, ভীষণ ভোগী, তাকে এর থেকে কমে দেখানো যেতো না। যদি আমি দেখাতাম আমার দেশের দর্শকরাই সেটাকে নিতো না।

বিজ্ঞাপন

তিমুর সাভচি

যদিও আপনি টাকার কথা জিজ্ঞেস করছেন তাও আমি আপনাকে আরও কিছু বিষয় বলি, তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আমাদের এই কাজটা শুরুর আগে কত বিস্তৃত কাজ করতে হয়েছে, এই নাটকের মূল নারী চরিত্র হুররম। এই চরিত্রে কোন অভিনেত্রী মানাবে তাকে খুঁজে বের করতে আমরা ৩ হাজারের উপরের অভিনেত্রীদের অডিশন নেই। শুধু তুরস্ক না। আশেপাশের দেশের যেমন মধ্যপ্রাচ্য, জার্মানি এবং সম্ভাব্য সব দেশ যেখানে আমরা হুররমকে পেতে পারি। আমরা এক একজন অভিনেত্রীরই ডজন ডজন ভিডিও দেখতে থাকি তারপর হঠাৎ একদিন বুঝতে পারি মারিয়মের চেয়ে ভালো এই চরিত্রে কেউ অভিনয় করতে পারবে না। কাজেই আপনি বুঝতে পারছেন, ঝুঁকিটা যখন আমরা নিয়েছি তখন সেটা তুলে আনার মতো যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি আমরা ব্যয় করেছি। তো এটা শুধু অর্থের বিনিয়োগ নয়, এটা আমাদের সময়ের, মেধার এবং অবশ্যই প্রচেষ্টার বিনিয়োগও ছিল এবং সেটা সত্যি অনেক বড় ছিল।

সারাবাংলা : প্রথম কাজেই এত সাফল্য! নিশ্চয়ই অনুভূতি খুব ভালো ছিল?

তিমুর: সত্যি বলতে একদমই না। আমি অসম্ভব মানসিক চাপে পড়ে যাই। এটা একটা মানদণ্ড হয়ে গিয়েছে। আমার আর এ থেকে নিচে নামার উপায় নেই। তাহলে আমি কী করব? কীভাবে এটা ধরে রাখব? আর আমি মানুষটাই এমন না যে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেই। আমি প্রথম ধাপ ফেলার পরে সেখানে আগে থিতু হই। তারপর ভালো করে দেখি সামনে আমাকে কোথায় পা দিতে হবে, কোথায় পা দিলে আমি উল্টে পড়ব না। তখন এই প্রত্যাশার চাপ আমাকে আসলেই খুব ভুগিয়েছে।

সারাবাংলা : তাহলে এটাই আপনাদের এই সাফল্যের গোপন মন্ত্র?

তিমুর: (সামান্য হেসে) আমি যখন টিমস প্রতিষ্ঠা করি তখন তুর্কি নাটকের জন্য একটা ভাল সময় ছিল। তখন চ্যানেলগুলোকে তাদের কাজ অনুযায়ী ভাগ করা হয় তাই, পলিটিক্স ও নিউজ সরে গিয়ে যখন নাটক নিজের মতো একটা জায়গা করে নিলো তখন নাটক তৈরি করা বেশ আরামদায়ক হয়।
আমাদের তুরস্ক যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আমরা খুব সহজে আশেপাশে অনেকগুলো দেশের সাথে কথা বলতে পারি। আশেপাশের দেশের ভাষায় আমাদের শব্দ আছে। আমাদের ভাষাটা খুব সার্বজনীন। তাই প্রথম পর্যায় আমাকে একদম কষ্ট করতে হয়নি অনেকের কাছে পৌঁছে যেতে।

সারাবাংলা : কিন্তু আপনার কাজ তো অন্যদেশের, অন্যভাষার মানুষেরাও নিমেষে আপন করে নিয়েছে, আমাদের দেশে আপনার সুলেমান এত জনপ্রিয় যে নাট্যকর্মীরা আন্দোলন করেও তাকে আটকাতে পারেনি, আবার পশ্চিমের দেশেও সে বেশ ভালো সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে, সেটা নিশ্চয়ই ভাষা থেকে আসেনি?

তিমুর: সুলেমানের তো স্বভাবই রাজ্য বিস্তার করা (বেশ জোরে জোরে হেসে) তবে যদি সাম্রাজ্য বিস্তারের কথা বলেন এই কাজটাও সত্যিকার সুলেমান অনেকটাই করে গিয়েছেন, যতটা করতে পারেনি সেটা করেছে আমাদের প্রাচীন সভ্যতা যেটার প্রতি অনেকেরই আগ্রহ আছে। তো যখন আমরাই আমাদের গল্পকে আমাদের ভঙ্গিতে বলা শুরু করলাম সেটা সবার ভালো ছাড়া খারাপ লাগেনি।

তুর্কিদের গল্প বলার একটা নিজস্ব ভঙ্গি আছে। এই ভঙ্গিটা সবার থেকে আলাদা এবং বেশ আকর্ষণীয়। আমাদের গল্প থেকে মানুষ আগ্রহ সরাতে পারে না। এ ছাড়াও আমাদের অনুভূতি খুব তীক্ষ্ণ, আমরা সহজে রেগে যাই, অল্পতেই খুশি হই, হো হো করে হাসি, রাগে অন্ধ হয়ে যাই। আমরা স্নেহপ্রবণ আবার প্রতিশোধ পরায়নও বটে। মোট কথা আমাদের যাই আছে সব খুব চরম পর্যায়ে। এই মোটা দাগের অনুভূতিগুলোর সুবিধা হচ্ছে সহজেই সেটা মানুষের কাছে পৌঁছায়, দর্শক কোনো দ্বিধায় থাকে না একদম সোজা-সাপ্টাভাবে দর্শক ঘটনা বুঝতে পারে।

আমাদের টেলিভিশন মাধ্যমের জন্য যেই নাটক হয় সেগুলো প্রায় ২০০০ সাল থেকে এইচডি কোয়ালিটির ক্যামেরা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। সেগুলো অবশ্যই গুণে ও মানে আমেরিকার যে কোনো টেলিভিশন সিরিজের সাথে প্রতিযোগিতায় নামার মতো ভালো মানের হয়।

সারাবাংলা : তাহলে উচ্চ প্রযুক্তি আপনাদের এগিয়ে যেতে বেশ সাহায্য করেছে?

তিমুর: আমরা এখনকার যুগে এসে যদি শিল্পকে তৈরি করতে চাই তাহলে হ্যাঁ অবশ্যই আমাদের প্রযুক্তির বিষয়টায় পারদর্শী হতে হবে। তবে বিষয়বস্তুর মানকে কখনও অস্বীকার করতে পারবেন না। যেটাকে এখন সবাই ‘কনটেন্ট’ বলে সম্বোধন করে। এইটাই শিল্পের হৃদপিণ্ড। তাই এটাকে অবশ্যই গ্রাহ্যের মধ্যে আনতে হবে।

আমি এর আগেও বলেছি যে আমরা শুধু মূল নারী চরিত্রটিকে খুঁজতে কত পরিশ্রম করেছি। এভাবে প্রতিটি চরিত্র তৈরি করতে আমরা পরিশ্রম করেছি। আমাদের নাটকের বিভিন্ন অংশ পরিচালনার জন্য একাধিক পরিচালক ছিলেন। তারা যার যার দক্ষতা যথাযথ জায়গায় প্রয়োগ করেছেন। এখানে চিত্রনাট্য নিয়ে অনেক গবেষণা করা হয়েছে এবং প্রতিটি ডায়লগকে আরও কত সুন্দর করা যায় সেই চেষ্টায় এখানেও একটা টিম কাজ করেছে। এই সবগুলোকে যেন সঠিকভাবে দেখা যায় সেই জন্য প্রযুক্তির উন্নয়ন জরুরী ছিল। এখানে কেউ কারও চেয়ে কম নয়।

সারাবাংলা : এখন খুব শোনা যায় যে টিভির যুগ ফুরিয়ে আসছে। এখন বিনোদন মাধ্যম হবে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে। আপনি কি এটাকে ঝুঁকি বলে গণ্য করেন?

তিমুর: দেখুন তুরস্কে টিভির নাটক এতই জনপ্রিয় যে এটা যদি ফুরানো শুরুও হয় তবেও এখনো অনেক সময় বাকি। এখানে মানুষ ঘরে ঢুকে আলো এবং টিভি একসাথে চালু করে। তারপর হয়তো সে কোনো কাজ করে কিন্তু ফাঁকে ফাঁকে একটা চোখ টিভির দিকে রাখে। তাই টিভির যুগ শেষ হওয়ার ভয় আমি এখনই পাচ্ছি না।

সারাবাংলা : তিমুর আপনার এই চমৎকার সাফল্যের একটা আধার দিকও আছে, আপনাকে প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। আমি নিজেও মনে করি এখানে নারীদেরকে হেয় করা হয়েছে। আমাদের মতো দেশগুলোতে যেখানে নারীরা অনেক কম শক্তিশালী অবস্থানে আছে এবং কম সুযোগ সুবিধা পায় সেখানে এটা সমস্যা তৈরি করে। এর সাথে এই গল্পে ইসলামের ব্রান্ডিং আছে, তাই খুব সহজেই এগুলো অন্য পথে চলে যেতে পারে।

তিমুর: সমালোচনাটার সাথে আমাকে খুব যুঝতে হয়েছে। একপর্যায় আমরা ধরে নিতাম, যেহেতু বড় গাছেই লোকে ঢিল মারে তাই আমাদের মন খারাপ করার কিছু নেই। কিন্তু সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আমরাও স্বীকার করি।

সুলতান সুলেমানকে নিয়ে যে গল্পটা আমরা বলছি সেটা একটা ঐতিহাসিক পটভূমিতে তৈরি নাটক, এখানে ইতিহাসকে অস্বীকার করা যাবে না। ধর্মীয় দিক থেকেও আমাদের বেশ বিরোধিতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু এগুলো ইতিহাস। এগুলো আমি বানাইনি। নারীদের অবস্থা যদি বলতে হয়, সে যুগে নারীদের অবস্থান এটাই ছিল। আর এটা যদি আমরা এখানে দেখাই এটা আমাদের জন্য মোটেই বড় বিষয় না কারণ আমাদের নারীদের অবস্থা এখন কিছুতেই এমন হবে না। উল্টো আমাদের নাটক এখন পুরুষতান্ত্রিক শৃঙ্খল ভেঙ্গে নারীদের প্রধান চরিত্রে নিচ্ছে। এটা সবাই পছন্দও করেছে।

তবে নাটক অংশে কিছু সাহিত্য থাকে, যেটা আসলে এক অর্থে মনগড়াই। যখন এমন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাই, আমরা সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করি। এটা একটি প্রতিনিয়ত চেষ্টা উন্নত করার। আর এইভাবেই আমরা ধীরে ধীরে উন্নতি করব বলে আমি বিশ্বাস করি।

সারাবাংলা : সারাবাংলা ডট নেটের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

তিমুর: থ্যাংক ইউ।

তিমুর সাভচি সুলতান সুলেমান

বিজ্ঞাপন

২০২৫ সালেই বার্সায় ফিরছেন মেসি?
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর