লিবিয়ার জিম্মিদশা থেকে ফিরলেন মঠবাড়িয়ার লোকমান হোসেন
৪ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৫৫ | আপডেট: ৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:২৭
পিরোজপুর: জেলার মঠবাড়িয়ার যুবক লোকমান হোসেন দালালের জিম্মিদশা থেকে ফিরলেন দেশে। গত বুধবার (০২ এপ্রিল) তিনি লিবিয়া থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন বলে তার পরিবার জানায়। ভুক্তভোগী লোকমান হোসেন উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড নলী জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা ।
ভুক্তভোগী লোকমান দালালের খপ্পরে পরে বিদেশে গিয়ে নির্যাতনের বর্ননা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। এ সময় তার পিঠ জুড়ে ও দুই পায়ের ক্ষত চিহ্নগুলো দেখান।
তিনি জানান, গত ২০২৩ সালের জুনে লিবিয়া যাওয়ার জন্য শাহ আলম নামের এক দালালকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেন। কিন্তু ওই দালাল তাকে বৈধ পথে না নিয়ে অবৈধ পথে নিয়ে যান। প্রথমে তাকে দুবাই ও পরে মিশর নিয়ে যান। সেখান থেকে সমুদ্র পথে লিবিয়া নিয়ে যান। সেখানে তাকে কোন কাজ না দিয়ে অন্য এক দালালের কাছে বিক্রি করে দেন। তারপর লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য শুরুতে ১০ লাখ টাকা দেন সিলেটের হবিগঞ্জের শিরু ইসলাম নামের অন্য এক দালালকে। কিন্তু সে-ও তাকে ইতালি পাঠায়নি। বরং সেখানে তাকে অনেক নির্যাতন করতো ওই দালাল চক্র। বাঁচার জন্য বাড়িতে টাকা চাইলে বাড়ির বসতঘরের জমি বিক্রি করে দিয়ে মাদারীপুরের দাদন জমাদ্দারকে দিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। লিবিয়ায় ত্রিপলী জহুরা ঘাট ওসামা ক্যাম্পের একটি রুমে তাকে বন্দী করে রাখা হয় এবং মুক্তিপণের জন্য প্রতিদিন নির্যাতন চালাতো ওই দালাল চক্র। ৪৮ ঘন্টা পর একটি রুটি আর এক কাপ পানি খেতে দিতো। টাকার জন্য এ সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করতো। পায়ের কাঁচা নখগুলো টেনে তুলে ফেলতো। ভেবেছিলাম হয়তো মারাই যাবো। পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা হবে- এমন কখনো ভাবি নাই।
লোকমান হোসেনের স্ত্রী রিমি আক্তার (২৮) জানান, স্বামীকে মুক্ত করার জন্য বাড়ির বসত ভিটাটুকুও বিক্রি করেছি। দালালের বাড়িতে গিয়ে আমরা অনেকদিন থেকেছি। সে নিশ্চিত মুক্তি পেয়েছে, সেটা জেনে সেখান থেকে আমরা এসেছি। আমার স্বামী আজ ১১ মাস পরে দেশে ফিরেছেন। বেঁচে আছেন কি না- সেটাও আমাদের জানা ছিল না। স্বামীর উপর এমন অত্যাচার হয়েছে যে, তিনি এখন পুরো অসুস্থ। তাকে চিকিৎসা করাতে টাকা পয়সাও নেই।
ঘটনার বিষয়ে সাপলেজা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কাজল খান বলেন, লোকমান দেশে ফিরেছেন। শুরু থেকে পরিবারটির পাশে ছিলাম। শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লোকমানের এখন ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তার সার্বিক বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।