সিরিয়ায় ৫ বছরের অন্তর্বর্তী শাসনের সংবিধান ঘোষণা
১৪ মার্চ ২০২৫ ১০:২৩ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ১৩:১৩
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা একটি সাংবিধানিক ঘোষণা সই করেছেন, যা দেশটির জন্য পাঁচ বছরের পরিবর্তনকালীন সময় নির্ধারণ করবে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাষ্ট্রপতি ভবনে তিনি এই নতুন সংবিধানে সই করেন।
নতুন সাংবিধানিক ঘোষণায় বলা হয়েছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের ধর্ম ইসলাম হবে, যেমনটি আগের সংবিধানেও ছিল। তবে নতুন ঘোষণায় ইসলামি আইনকে ‘একটি প্রধান উৎস’ এর পরিবর্তে ‘প্রধান উৎস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
সংবিধানে ক্ষমতার পৃথকীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নারীদের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট শারা বলেছেন, ‘আমরা আশা করি এটি সিরিয়ার জন্য একটি নতুন ইতিহাসের সূচনা হবে, যেখানে দমন-পীড়নের পরিবর্তে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
জাতিসংঘের বিশেষ দূত গিয়ের পেডারসেন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটি আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি এবং সিরিয়ার আইনি শূন্যতা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এই সাংবিধানিক ঘোষণার সমালোচনা করে দাবি করেছে যে এটি সিরিয়ার বাস্তবতা ও বহুবিচিত্র সমাজের পরিপন্থি।
গত জানুয়ারিতে, বিদ্রোহী সামরিক কমান্ডাররা শারাকে পরিবর্তনকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয় এবং আসাদ সরকারের ২০১২ সালের সংবিধান বাতিল করে। সেই সঙ্গে, সাবেক পার্লামেন্ট, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও বিলুপ্ত করা হয়।
মাত্র ১০ দিন আগে, শারা সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন, যার কাজ ছিল নতুন সাংবিধানিক ঘোষণা প্রস্তুত করা। শারা বলেছিলেন, এই ঘোষণা পরিবর্তনকালীন পর্যায়ের জন্য আইনি কাঠামো হিসেবে কাজ করবে।
কমিটির সদস্য ও সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ আবদুল হামিদ আল-আওয়াক জানান, নতুন ঘোষণা নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে চায়।
তিনি বলেন, এতে ক্ষমতার সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলে লঙ্ঘিত হয়েছিল।
নতুন গণপরিষদ (পিপলস অ্যাসেম্বলি) আইন প্রণয়নের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে। এর দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যকে একটি কমিটি দ্বারা মনোনীত করা হবে, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন, এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ সদস্য সরাসরি প্রেসিডেন্ট নিজেই মনোনীত করবেন।
একটি কমিটি গঠন করা হবে, যা স্থায়ী সংবিধান প্রণয়ন করবে। শারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করবে যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন সংবিধান চূড়ান্ত করা হয় এবং মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তবে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের পর শারা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। এই সংঘাত শুরু হয়েছিল ১৪ বছর আগে, যখন আসাদ সরকার গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ দমন করতে নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল।
গত সপ্তাহে, পশ্চিম উপকূলে আসাদপন্থী বন্দুকধারীদের হামলায় এক নিরাপত্তা টহলদার দল নিহত হওয়ার পর, শারা-সমর্থিত সুন্নি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ ওঠে। একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই সহিংসতায় প্রায় দেড় হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
শারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে এবং নাগরিক শান্তি রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করা হবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তির ওপর নতুন সিরিয়া গড়বে। এখন সময় এসেছে সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের।’
সারাবাংলা/এনজে