পুতিনের কঠোর শর্তে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
১৪ মার্চ ২০২৫ ০৯:৫৬ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ১২:২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির ধারণাকে সমর্থন করলেও একাধিক কঠোর শর্ত আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান দরকার।
ইউক্রেন চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছে। তবে পুতিনের প্রতিক্রিয়াকে প্রতারণামূলক আখ্যা দিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও ব্যাংক খাতের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির ধারণাটি ঠিক আছে, এবং আমরা এটিকে সমর্থন করি, তবে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন।’ তিনি জানান, যুদ্ধবিরতি যেন স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যায় এবং চলমান সংঘাতের মূল কারণগুলো দূর করে, সেটি নিশ্চিত করাই তার লক্ষ্য।
পুতিন বলেন, ‘আমাদের মার্কিন অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। হয়তো আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ভালো হতে পারে, আমরা একে সমর্থন করি, তবে কিছু জটিলতা রয়েছে।’
পুতিনের দাবি, রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের আগ্রাসনের ফলে সংঘাত আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়া পুরোপুরি কুর্স্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং সেখানে ইউক্রেনীয় সেনারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পুতিন ইউক্রেনীয় সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ওদের সামনে দুটি পথ- হয় আত্মসমর্পণ করবে, নাহলে মৃত্যুর মুখে পড়বে।’
যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে পুতিন বলেন, ‘এই ৩০ দিন কীভাবে ব্যবহার হবে? ইউক্রেন কি এই সময়ে নতুন সৈন্য সংগ্রহ করবে, অস্ত্র সংগ্রহ করবে, নাকি প্রশিক্ষণ নেবে? যদি তা হয়, তাহলে প্রশ্ন হলো, এটি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘কার নির্দেশে লড়াই বন্ধ হবে? কী মূল্যে? দুই হাজার কিলোমিটারেরও বেশি ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হলে তা কে নির্ধারণ করবে? এই বিষয়গুলো দুই পক্ষের মধ্যে সুস্পষ্ট আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার।’
পুতিন সরাসরি যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান না করলেও তার বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্টতই পরিকল্পনাটি নাকচ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
তিনি বলেন, ‘পুতিন ট্রাম্পকে সরাসরি বলার সাহস পান না যে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান এবং ইউক্রেনীয়দের হত্যা করতে চান।’
জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, ‘পুতিন এত শর্ত দিচ্ছেন যে শেষ পর্যন্ত কোনো চুক্তিই সম্ভব হবে না।’
পুতিনের মন্তব্যের পর হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি রুশ নেতার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক এবং আশা করেন রাশিয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
ওভাল অফিসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প জানান, ‘ইউক্রেনের সঙ্গে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি চাই।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা করেছি- কোন এলাকা রাখা হবে, কোনটি ছাড়া হবে, এবং চূড়ান্ত চুক্তির অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে।’
এর আগে, ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে রাশিয়া পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে, যার ফলে এখন পর্যন্ত দেশটি ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করেছে। এ যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করা ৯৫ হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ইউক্রেন জানিয়েছিল, তাদের ৪৩ হাজার সেনা নিহত হয়েছে, যদিও পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
সারাবাংলা/এনজে